ঢাকা: ঘরোয়া ফুটবলে রুগ্ন প্রদর্শনীর ধারাবাহিকতা থেকে বেরোতে পারেনি ফুটবল। আন্তর্জাতিক অঙ্গনেও ছিলো সাফল্য খরা।
ঘরোয়া ফুটবলের পাতানো ম্যাচ নতুন নয়। তবে প্রথম বারের মতো শাস্তির পদক্ষেপ নিয়েছে বাফুফে। বাংলাদেশ লিগ চ্যাম্পিয়ন শেখ জামাল ও রহমতগঞ্জের ১১ জুনের কথিত‘সমঝোতার ম্যাচ’ নিয়ে সরগরম ছিলো ফুটবলাঙ্গন। পরে সাক্ষ্যপ্রমাণের ভিত্তিতে শেখ জামালকে ২০ লাখ ও রহমতগঞ্জকে ৫ লাখ টাকা জরিমানা করা হয়। এছাড়া রহমতগঞ্জ কর্মকর্তারা সালাউদ্দিন কালাকে তিন বছর ও গোলরক্ষক ইরান শেখকে দুই বছরের জন্য নিষিদ্ধ করা হয়। বিশ্বকাপের বাছাইপর্বে জাতীয় দলে শৃঙ্খলাভঙ্গের দায়ে তিন ফুটবলার এমিলি, মিঠুন ও জাহিদকে শাস্তি ও আর্থিক জরিমানা করা হয়। ফুটবলে শৃঙ্খলা ফেরাতে বাফুফের পুরো বছরটা কেটেছে শাস্তি আর জরিমানাগুনেই।
আন্তর্জাতিক আসরে ফুটবলারদের সাফল্য বলতেও চোখে পাড়ার মতো তেমন কিছু ছিলো না।
মার্চে এএফসি চ্যালেঞ্জ কাপ বাছাইপর্বে ফিলিস্তিনের কাছে ২-০ গোলে হার দিয়ে শুরু হয়েছিলো আন্তর্জাতিক আসর। পরে মিয়ানমারকে হারালেও ফিলিপাইনের কাছে হেরে বিদায় নিশ্চিত হয়েছিলো তাদের। ব্রাজিল বিশ্বকাপের প্রাক বাছাইয়ের প্রথম রাউন্ডে দারুণ খেলেছিলেন দেশের ফুটবলাররা। বৃষ্টির কারণে হোক কিংবা মেসিডোনিয়ান কোচ নিকোলা ইলিয়েভস্কির মন্ত্র, ২৯ জুন ঢাকার মাঠে ৩-০ গোলে হারিয়েছিল পাকিস্তানকে। লাহোরে অ্যাওয়ে ম্যাচে গোল শূন্য ড্র’তে দ্বিতীয় রাউন্ডের চাবি হাতে পায় লাল-সবুজ জার্সিধারীরা। কিন্তু দ্বিতীয় রাউন্ডের প্রথম ম্যাচে লেবাননে বিপক্ষে বৈরুতে ৪-০ গোলে হার মানে ইলিয়েভস্কির দল।
এ ম্যাচের আগেই কলঙ্কিত এক অধ্যায়ের জন্ম দেন দেশসেরা দুই স্ট্রাইকার এমিলি ও মিঠুন চৌধুরী। জাতীয় দলের ক্যাম্প থেকে থেকে মাত্র একদিনের ছুটি পেয়ে দুই ফুটবলার খ্যাপ খেলে আসেন মানিকগঞ্জপৌর মেয়র গোল্ডকাপে! বাছাইয়ের ফিরতি পর্বের ম্যাচে ২-০ গোলে লেবাননকে হারায় ফুটবলাররা। এ জয়ে অবশ্য আফসোস ছাড়া অন্য কিছু করার ছিলো না বিপ্লব বাহিনীর। দেশের ফুটবল ইতিহাসে দারুণ অধ্যায় রচনা করে বাফুফে ৬ সেপ্টেম্বর ঢাকায় আর্জেন্টিনা ও নাইজেরিয়ার প্রীতি ম্যাচ আয়োজন করে। বাংলাদেশ মাতিয়ে যান প্রজন্ম সেরা ফুটবলার লিওনেল মেসিসহ একঝাঁক বিশ্বতারকারা।
ডিসেম্বরে তাদের বছরের শেষ মিশন ছিলো সাফ চ্যাম্পিয়নশিপ। এখানেও পুরোপুরি ব্যর্থ ছিলেন ফুটবলাররা। নয়াদিল্লিতে অনুষ্ঠিত এ আসরে গ্রুপপর্ব থেকেই বিদায় নেয় বাংলাদেশ। প্রথম বারের মতে সাফে কোনো ম্যাচ না জিতেই ঘরে ফিরতে হয় ফুটবলারদের। এ ব্যর্থতার জন্য আবারও কোচ বিদায়ের পথে হাঁটে বাফুফে। তবে এবার বরখাস্ত নয় ‘সমঝোতায়’ চলে যান মেসিডোনিয়ান কোচ নিকোলা ইলিয়েভস্কি।
এ বছর ঘরোয়া ফুটবলে সবচেয়ে আলোচিত ছিলো একঝাঁক জাতীয় দলের ফুটবলার নিয়ে বাংলাদেশ লিগে শেখ জামাল ধানমন্ডি ক্লাবের আগমন। মাঠ ও মাঠের বাইরের খেলা সবকিছু মিলিয়ে লিগ শিরোপাও জিতে নেয় ধানমন্ডির ক্লাবটি। তবে আসল চমক উপহার দেয় ফরাশগঞ্জ। পেছনের সারির দলটি শেখ জামাল-আবাহনী-মোহামেডানের মতো বড় দলগুলোকে পেছনে ফেলে প্রথমবারের মতো স্বাধীনতা কাপ জেতে তারা।
এদিকে বছর জুড়েই আলোচনায় ছিল বাফুফের মহিলা উইং। ঘরোয়া ও আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতা আয়োজনে সাফল্য দেখায় তারা। ঢাকার মাঠে প্রথমবারের মতো মেয়েদের লিগ আয়োজন করে প্রশংসা কুড়ায়। এছাড়া দীর্ঘ প্রচেষ্টার পর ফুটবল একাডেমি গড়ার জন্য বাফুফের সিলেট বিকেএসপি বুঝে পাওয়া ও ব্যাপক পরিসরে জাতীয় স্কুল টুর্নামেন্টের মাধ্যমে ১০০ প্রতিভাবান ফুটবলার খুঁজে বের করার স্কুল কমিটির উদ্যোগ ফুটবল উন্নয়নে ভূমিকা রাখবে বলে আশা করা যায়।
বাংলাদেশ সময়: ১৯৫৭ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ৩১, ২০১১