ঢাকা, শুক্রবার, ১২ বৈশাখ ১৪৩১, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫

ফুটবল

নিউক্যাসল কিনে নিচ্ছেন সৌদি যুবরাজ!

স্পোর্টস ডেস্ক | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২২১০ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ১, ২০২০
নিউক্যাসল কিনে নিচ্ছেন সৌদি যুবরাজ! ছবি: সংগৃহীত

সৌদি আরবের ক্রাউন প্রিন্স (যুবরাজ) মোহাম্মদ বিন সালমান (সংক্ষেপে এমবিএস) যে বিপুল অর্থ-বিত্তের মালিক সেকথা কারো অজানা নয়। তাকে বলা হয় বিশ্বের অন্যতম শীর্ষ ধনী। বিশ্বের সবচেয়ে বিলাসবহুল বাড়ি, বিলাসবহুল ইয়ট, দামি পেইন্টিং এসব আছে তার ঝুলিতে। এবার তার সম্পদের তালিকায় যুক্ত হতে যাচ্ছে একটি ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগের ক্লাবও।

প্রিমিয়ার লিগের ক্লাব নিউক্যাসল কেনার ব্যাপারে এরইমধ্যে নাকি ক্লাবের মালিকপক্ষের সঙ্গে প্রাথমিক আলোচনাও শেষ করেছেন সৌদি যুবরাজ। এমনটাই জানিয়েছে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম ‘দ্য সান’।

এমবিএস এবং তার পরিবারের মোট সম্পদের পরিমাণ প্রায় ১ ট্রিলিয়ন পাউন্ড! এর মানে হলো, সৌদি বাদশা সালমান বিন আবদুল আজিজ আল সৌদের ৩৪ বছর বয়সী সন্তানের হাতে এতই অর্থ আছে যে নিউক্যাসলের মতো ক্লাব কেনা তার কাছে ডালভাত।

এর আগে বিলাসবহুল ইয়ট, ফ্রান্সে একটি বাড়ি এবং কিছু বিরল চিত্রকর্ম কেনার পেছনে মিলিয়ন মিলিয়ন মার্কিন ডলার ব্যয় করেছেন তিনি। শুধু তাই না, বিশ্বের শীর্ষ নেতৃত্বের সঙ্গেও তার বেশ ভালোই দহরম-মহরম। বিশেষ করে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে তার বন্ধুত্ব তো রীতিমত অবিশ্বাস্য।

.যুবরাজ হিসেবে অভিষিক্ত হওয়ার পর থেকেই বেশকিছু চমকে দেওয়া সিদ্ধান্ত নেন বিন সালমান। এর মধ্যে দুর্নীতিবিরোধী অভিযানের নামে প্রিন্স, বর্তমান ও সাবেক মন্ত্রী এবং ধনাঢ্য ব্যবসায়ীদের আটক করা, সৌদি নারীদের গাড়ি চালানোর অনুমতি, বড় বড় ক্রীড়া আসর (যার মধ্যে আছে ফর্মুলা ওয়ান, রেসলিং, বক্সিং ইভেন্ট), সিনেমা হলের অনুমোদন, স্টেডিয়ামে বসে নারীদের খেলা দেখার অনুমতির মতো সিদ্ধান্তগুলো অধিক আলোচিত।

বিন সালমানের নেওয়া পদক্ষেপগুলো শুরুতে অনেক প্রশংসিত হলেও ক্রমেই সত্যটা প্রকাশ হয়ে পড়ে। ক্ষমতা সুসংহত করার জন্যই যে এসব লোকদেখানো পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে সবাই বুঝতে পারে। শুরুতে তার বিলাসী জীবনযাপনের তথ্য ফাঁস হওয়ার পর দেশের মানবাধিকার কর্মী, রাজনৈতিক অ্যাক্টিভিস্ট ও বিরোধী মতের মানুষদের আটক করার নির্দেশ দেন তিনি। এরপর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, রাশিয়ার মতো দেশগুলো থেকে বিলিয়ন ডলারের অস্ত্র কেনা, ইয়েমেনে সামরিক হামলা করার মতো বিষয়গুলো সামনে আসে।

নিউক্যাসল ক্লাব কেনার পেছনে বিন সালমানের মূল উদ্দেশ্য ‘স্পোর্টস ওয়াশ’ বলেই ধারণা করা হচ্ছে। এর আগেও দেশে ক্রীড়া আসর বসিয়ে জনগণকে বিনোদনের স্বাদ দেওয়ার ব্যবস্থা করেছেন তিনি। কিছুদিন আগে সেখানে গিয়ে খেলে এসেছে ব্রাজিল, আর্জেন্টিনা এবং বার্সেলোনা, রিয়াল মাদ্রিদের মতো ফুটবল বিশ্বের জায়ান্টরা।

সৌদি যুবরাজের বিতর্কিত জীবনের কিছু নমুনা নিচে দেওয়া হলো-

বিশ্বের সবচেয়ে দামি বাড়ি
২০১৫ সালে ফ্রান্সের রাজধানী প্যারিসের পশ্চিমে ভার্সাইয়ের কাছে অবস্থিত একটি বাড়ি যখন ২৩০ মিলিয়ন পাউন্ডে (৩০ কোটি ডলার) বিক্রি হলো, সারা বিশ্ব চমকে গিয়েছিল। ওই সময় এটাই ছিল সবচেয়ে বেশি দামে বাড়ি বিক্রির রেকর্ড। দুই বছর পর ওই বাড়ির ক্রেতা যে সৌদি যুবরাজ তা প্রকাশিত হয়ে পড়ে।

রাষ্ট্রীয় কাজে ফ্রান্সে গিয়ে ৫৭ একর জায়গার ওপর নির্মিত শ্যাঁতু লুই ফোরটিন নামের বিলাসবহুল প্রাসাদসম বাড়িটি দেখে বিমোহিত হয়ে যান এমবিএস। বাড়িতে আছে সোনার তৈরি ঝরনা এবং মার্বেলের মূর্তি। আছে গোলকধাঁধা, পার্ক। বাড়ির ভেতরে আছে ১০টি বেডরুম, একটি ইনডোর ও একটি আউটডোর পুল, একটি লাইব্রেরি এবং বিশাল অ্যাকুরিয়াম।

বিলাসবহুল ইয়ট
২০১৫ সালেই রাশিয়ার ভদকা টাইকুন নামে পরিচিত ইউরি শেফলারের ‘সুপার ইয়ট’ ৩৮০ মিলিয়ন পাউন্ডের (৫০ কোটি ডলার) বিনিময়ে কিনে নেন বিন সালমান। এটির নাম ‘দ্য সিরিন’, যা বিশ্বের অন্যতম বৃহৎ প্রোমোদতরির একটি। এর দৈর্ঘ্য প্রায় ৪৪০ ফুট আর প্রস্থ ৬০ ফুট। বিলাসীতার প্রায় সব উপকরণই এখানে মজুত আছে।

চিত্রকর্মের প্রতি আকর্ষণ
বিশ্বের বহু ধনী ব্যক্তির মতোই বিরল চিত্রকর্মের প্রতি বিশেষ ঝোঁক আছে বিন সালমানের। তবে একটি চিত্রকর্ম নিয়ে প্রশ্ন দেখা দিয়েছিল। ২০১৭ সালে খবর প্রকাশ হয় যে, ইতালিয়ান কিংবদন্তি চিত্রশিল্পী লিওনার্দো দ্য ভিঞ্চির একটি বিরল চিত্রকর্ম ৩৪০ মিলিয়ন পাউন্ডে (৪৫ কোটি ডলার) বিক্রি হয়েছে আর তা অন্য একজনের মাধ্যমে কিনে নেন সৌদি যুবরাজ।

.এরপর দ্য ভিঞ্চির আঁকা ‘সালভাতোর মুন্দি’ ইতিহাসের সবচেয়ে দামি শিল্পকর্মের স্বীকৃতি পায়। তবে ওই রিপোর্ট অস্বীকার করে নিলাম প্রতিষ্ঠান ক্রিস্টি। বর্তমানে এটি দুবাইয়ের ল্যুভর মিউজিয়ামে শোভা পাচ্ছে।

ট্রাম্পের সঙ্গে বন্ধুত্ব
বিশ্বের সবচেয়ে ক্ষমতাধর ব্যক্তি বলা হয়ে থাকে মার্কিন প্রেসিডেন্টকে। আর বর্তমান মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে বিন সালমানের সম্পর্ক দারুণ বন্ধুত্বপূর্ণ। অবশ্য গত বছর ওয়াশিংটন পোস্টের সাংবাদিক জামাল খাশোগিকে হত্যার পর মার্কিন সরকার বিন সালমানকে দায়ী করেছিল। কিন্তু এর বিপরীতে মার্কিন সরকারকে বিলিয়ন বিলিয়ন ডলারের বিনিয়োগের লোভ দেখিয়ে সব থামিয়ে দেন বিন সালমান।

সৌদি রাজপরিবারের সমালোচক হিসেবে পরিচিত খাশোগিকে তুরস্কে অবস্থিত সৌদি কনস্যুলেটের ভেতরে হত্যা করা হয়। এরপর থেকেই অভিযোগের তীর ওঠে বিন সালমানের দিকে। শুরুতে অস্বীকার করলেও পরে হত্যার কথা স্বীকার করে সৌদি কর্তৃপক্ষ। কিন্তু বিন সালমানকে এতে জড়ানো হয়নি। তবে এ নিয়ে তোলপাড় কম হয়নি। আর বিন সালমানকে এখনও ওই হত্যাকাণ্ডের মূল হোতা বলেই মনে করে অধিকাংশ পশ্চিমা দেশ।

.তবে বন্ধুর এমন বিপদের সময়ে ঠিকই সহায়তার হাত বাড়িয়ে দেন ট্রাম্প। ২০১৮ সালে ট্রাম্প যখন কয়েকটি মুসলমান দেশের নাগরিকদের যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে, ঠিক সেসময় হোয়াইট হাউসে হাজির হন সৌদি যুবরাজ। এরপ সবাইকে অবাক করে দিয়ে বিন সালমান জানান, তার চোখে ট্রাম্প মুসলমানদের প্রকৃত বন্ধু আরব মুসলিম বিশ্বের সেবক! পরে ট্রাম্পের সঙ্গে বিপুল পরিমাণ অস্ত্র কেনার জন্য বিশাল অঙ্কের চুক্তি করেন সৌদি যুবরাজ। সেই অস্ত্র দিয়ে ইয়েমেনে সামরিক অভিযান পরিচালনা করছে সৌদি আরব। অথচ অর্থের লোভে অন্ধভাবে তাকে সমর্থন দিয়ে যাচ্ছেন ট্রাম্প।

ব্যক্তিগত জীবনে গোপনীয়তা
সৌদি আরবের রাজ পরিবারের ভেতরের খবর সাধারণত বাইরে প্রকাশ করা হয় না। বিন সালমানের ক্ষেত্রেও এর ব্যতিক্রম নয়। তবে যতটুকু জানা যায়, ২০০৮ সালে তিনি বিয়ে করেন। তার স্ত্রীর নাম সারাহ বিনতে মাশহোর, যাকে বলা হয় ‘বার্বি প্রিন্সেস এবং তাদের চার সন্তান রয়েছে। তবে কোনো রাষ্ট্রীয় সফরে স্ত্রী-সন্তানদের সঙ্গে নেন না যুবরাজ।

প্রিন্সেস সারাহ বিনতে মাশহোর/ছবি: সংগৃহীতনিজের সন্তানদের লোক সম্মুখে আনার ব্যাপারে বেশ সচেতন বিন সালমান। তাদের সাধারণ জীবনযাপনে অভ্যস্ত করতে চান তিনি। তার স্ত্রীও নাকি এমনটাই চান। এদিকে সৌদি যুবরাজ নাকি পরে আরও তিনটি বিয়ে করেছেন। তবে এটা এখনও নিশ্চিত করে কেউ বলতে পারেনি।

বাংলাদেশ সময়: ১৭০৯ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ০১, ২০২০
এমএইচএম/এমএমএস

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।