ঢাকা, বুধবার, ১১ বৈশাখ ১৪৩১, ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ শাওয়াল ১৪৪৫

খেলা

চট্টগ্রাম আবাহনীর হৃদয় ভেঙে তেরেঙ্গানু’র শিরোপা জয়

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০০৫৩ ঘণ্টা, নভেম্বর ১, ২০১৯
চট্টগ্রাম আবাহনীর হৃদয় ভেঙে তেরেঙ্গানু’র শিরোপা জয়

শিরোপা পুনরুদ্ধার করা হলো না চট্টগ্রাম আবাহনীর। স্বাগতিকদের স্বপ্ন ছিনিয়ে নিয়ে শেখ কামাল আন্তর্জাতিক ক্লাব কাপের তৃতীয় আসরের শিরোপা জিতে নিয়েছে তেরেঙ্গানু এফসি। মালয়েশিয়ার সুপার লিগের ক্লাবটির বিপক্ষে ফাইনালে দুর্দান্ত ফুটবল খেলেও ২-১ গোলের ব্যবধানে হেরেছে জামাল ভূঁইয়ারা। টুর্নামেন্টে একটি ম্যাচও না হেরে অপরাজিত চ্যাম্পিয়ন হিসেবে শিরোপা জিতেছে তেরেঙ্গানু।

বৃহস্পতিবার (৩১ অক্টোবর) টুর্নামেন্টের একমাত্র ভেন্যু চট্টগ্রাম এম এ আজিজ স্টেডিয়ামে শেখ কামাল আন্তর্জাতিক ক্লাব কাপের ফাইনাল দেখার জন্য ঢল নামে ফুটবলপ্রেমীদের। ৩৫ ‍হাজার দর্শক ধারণ ক্ষমতার স্টেডিয়াম ভরে যায় কানায় কানায়।

এর বাইরে টিকেট কেটেও হাজার তিনেক দর্শক ঢুকতে পারেননি স্টেডিয়ামে। কিন্তু দর্শকদের সব উল্লাস ম্লান হয়ে যায় স্বাগতিক দলের হারে। সেই সঙ্গে পর্দা নামে ১৩ দিনের ফুটবল উৎসবের।

ম্যাচের শুরুতে অবশ্য হাডাহাড্ডি লড়াইয়ে ফুটবলের দুর্দান্ত পসরা সাজায় দুই ফাইনালিস্ট। রেফারির বাঁশি বাজার প্রথম মিনিটেই গোলের সুযোগ পায় চট্টগ্রাম আবাহনী। সতীর্থের বাড়ানো বলে লুকা রতকোভিচ মাথা ছোঁয়াতে পারলেই গোলের দেখা পেতে পারতো স্বাগতিকরা। এরপর অষ্টম মিনিটে তেরেঙ্গানুর গোলপোস্ট রক্ষা করেন গোলরক্ষক আমিরুল্লাহ বিন রাজালি। এরপরই ফ্রি-কিক পায় মোহাম্মদ নাজুফি বিন জেইনের দল। কিন্তু তাদের অধিনায়ক লি অ্যান্ড্রু টাকের শটটি চলে যায় গোলপোস্টের বাইরে।

১৫ মিনিটের মাথায় ৩৫ হাজারের বেশি দর্শকে ভরা এম এ আজিজ স্টেডিয়াম নিশ্চুপ করে দেয় তেরেঙ্গানু। লি টাকের কর্নার কিক থেকে এসময় চমৎকার এক হেডে চট্টগ্রাম আবাহনীর জালে বল জড়িয়ে দেন ডিফেন্ডার হাকিম বিন মামাত। প্রথম গোল হজম করে কিছুট ওপরে উঠে খেলতে শুরু করে মারুফুল হকের দল। এবারে সে সুযোগটাই কাজে লাগায় তেরেঙ্গানু। ২০ মিনিটের মাথায় কাউন্টার অ্যাটাকে গোলের ব্যবধান দ্বিগুণ করে মালেয়শিয়ানরা। মাঝমাঠে বল পেয়ে ক্ষিপ্র গতিতে ছুটে যান মোহাম্মদ আলাস। দুই ডিফেন্ডারকে ছিটকে ফেলে চমৎকার ড্রিবলিংয়ে গোলরক্ষক মোহাম্মদ নেহালকে বোকা বানান এ মিডফিল্ডার।

কানায় কানায় ভরা স্টেডিয়াম।  ছবি- উজ্জ্বল ধর

এরপর গোল শোধের জন্য মরিয়া হয়ে আক্রমণ চালাতে থাকে চট্টগ্রাম আবাহনী। ৩০ মিনিটের দিকে মাথা গরম করে হলুদ কার্ড খেয়ে বসেন জামাল ভূঁইয়া। ৩৩ মিনিটে আবারও গোলের সুযোগ মিস করেন লুকা। সতীর্থের কাছ থেকে বল পেয়ে তেরেঙ্গানুর ডি-বক্সে ঢুকে পড়েন এই মন্টেনিগ্রো ফরোয়ার্ড। কিন্তু এগিয়ে আসা গোলরক্ষককে পরাস্ত করতে পারেনননি লুকা। উল্টো পড়ে যান মাটিতে। এর পরপরই গোলের আরেকটি সুবর্ণ সুযোগ হাতছাড়া করে তেরেঙ্গানু। ৩৮ মিনিটের মাথায় সুযোগের সদ্ব্যাবহার করতে পারেননি জামাল ভূঁইয়া। ৪৩ মিনিটে অনবদ্য ওয়ান  ‍টু ওয়ান পাস খেলে বাঁম পায়ে জোরালো শট নেন লি টাক। তবে ইংলিশ প্লে-মেকারের শটটি চলে যায় স্বাগতিকদের গোলপোস্ট ঘেঁষে। বিরতিতে যাওয়ার আগে আবার সুযোগ মিস করে কোচ মারুফুলের দল।

দ্বিতীয়ার্ধের শুরুতেই আক্রমণে গিয়ে গোলের সুযোগ তৈরি করে চট্টগ্রাম আবাহনী। কিন্তু এবারও ভুল করে বসেন লুকা। তবে খেলা মাঠে গড়ানোর ৪৮ মিনিটের মাথায় আর ভুল করেননি তিনি। দুর্দান্ত এক আক্রমণে গিয়ে গোল দেয় স্বাগতিকরা। এসময় জামাল ভূঁইয়া থেকে বল পান চার্লস দিদিয়ের। তিনি ঠেলে দেন তেরেঙ্গানুর ডি-বক্সে থাকা চিনেদু ম্যাথিউকে। ম্যাথিউর পাস থেকে জটলার ভেতর বাঁ-পায়ে শট নেন লুকা। বল গোলপোস্টের উপরে লেগে ঢুকে যায় তেরেঙ্গানুর জালে।

পরের অংশে এক গোল শোধ করে আরো বেশি আক্রমণাত্মক হয়ে ওঠে জামাল ভূঁইয়ারা। এদিকে ৫৫ মিনিটের মাথায় ফ্রি-কিক থেকে বুদ্ধিদীপ্ত এক মাটিঘেঁষা শটে ব্রুনো সুজুকিকে বল দেন লি টাক। তবে ব্রাজিলিয়ান ফরোয়ার্ডকে এবারে কোনো সুযোগ দেননি স্বাগতিকদের ডিফেন্ডার। ৫৮ মিনিটে ডাগআউটে দাঁড়িয়ে রেফারির সঙ্গে চিৎকার চেঁচামেচি করার কারণে হলুদ কার্ড দেখেন তেরেঙ্গানু কোচ নাফুজি। এর আগে হলুক কার্ড পেয়েছিল তাদের ম্যানেজারও।

৭০ মিনিটে সমতায় ফেরার দ্বারপ্রান্তেই পৌঁছে গিয়েছিল চট্টগ্রাম আবাহনী। আরিফুল ইসলামের ক্রস থেকে এসময় বল পেয়েছিলেন লুকা। কিন্তু তার বুলেট গতির শটটি চলে যায় প্রতিপক্ষের গোলপোস্টের ‍ওপর দিয়ে। এর দুই মিনিট পরই স্বাগতিকদের ডি-বক্সের সামান্য বাইরে থেকে ফ্রি-কিক নেন লি টাক। কিন্তু সে সুযোগ কাজে লাগাতে পারেননি তিনি।

চট্টগ্রাম আবাহনীর হৃদয় ভেঙে শিরোপা জিতল তেরেঙ্গানু।  ছবি- উজ্জ্বল ধর

এরপর একের পর এক আক্রমণের ঢেউ তোলে চট্টগ্রাম আবাহনী। ৮৩ মিনিটে গোলের সুযোগ তৈরি করেন কাউসার আলী রাব্বি। দুইজনকে কাটিয়ে তার নেওয়া শটটি অবশ্য চলে যায় তেরেঙ্গানুর গোলপোস্টের ওপর দিয়ে।  

অতিরিক্ত সময়ে নিজেদের ভুলে আরেকটুর জন্য উল্টো গোল হজম করতে বসেছিল মারুফুল হকের দল। তবে ভাগ্য ভালো, বল চলে যায় গোলপোস্ট ঘেঁষে। কিন্তু শেষটায় সমতার ফেরার দৌড়ে আর ভালো করতে পারেনি চট্টগ্রাম আবাহনী। এক গোল পিছিয়ে থেকেই শেষ পযর্ন্ত শিরোপা পুনরুদ্ধারের স্বপ্ন বিসর্জন দেয় জামাল ভূঁইয়ারা।

ফাইনালে এক গোল করে ম্যান অব দ্য ম্যাচের পুরস্কার ৫০০ ডলার জিতেছেন তেরেঙ্গানু ডিফেন্ডার হাকিম বিন মামাত। ম্যান অব দ্য টুর্নামেন্টে হয়েছেন তেরেঙ্গানুর লি অ্যান্ড্রু টাক। পুরস্কার হিসেবে তার হাতে উঠেছে ১ হাজার ডলার। ফাইনালে এক গোলে অ্যাসিস্ট করার পাশাপাশি টুর্নামেন্টে টানা দুই হ্যাটট্রিকে সর্বোচ্চ ৬ গোল করেছেন সাবেক ঢাকা আবাহনী লিমিটেডের এই ইংলিশ মিডফিল্ডার। অন্যদিকে ফাইনালে হারলেও ফেয়ার প্লে জিতেছে স্বাগতিক চট্টগ্রাম আবাহনী।

এর আগে ২০১৫ সালে শেখ কামাল আন্তর্জাতিক ক্লাব কাপের প্রথম আসরে চ্যাম্পিয়ন হয়েছিল চট্টগ্রাম আবাহনী। ২০১৭ সালে দ্বিতীয় আসরে চ্যাম্পিয়ন হয় মালদ্বীপের টিসি স্পোর্টস। এবার তৃতীয় আসরে অপরাজিত চ্যাম্পিয়ন হলো তেরেঙ্গানু।  

বাংলাদেশ সময়: ২০৫১ ঘণ্টা, অক্টোবর ৩১, ২০১৯
ইউবি/এইচজে 

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।