ঢাকা: শূন্য করলে চলবে? তামিম ইকবাল শুধু হাসলেন। হাসিতেই বোঝালেন চলবে না।
ওসব হাসি ঠাট্টার কথা। তামিম-মাশরাফি হয়তো তখনই ভুলে গেছেন। আফসোস কেন আলোচনাটা সিরিয়াস হলো না। সত্যি, সত্যি তেমন কিছু হলে বাংলাদেশ দল অন্তত পাকিস্তানের কাছে নির্যাতনের হাত থেকে বেঁচে যেতো। তামিম যদি মাশরাফির ওই একটি বাক্য সিরিয়াসলি নিতেন।
দেশের সবাই মানে পাকিস্তান দলটি এই মুহূর্তে ভালো ক্রিকেট খেলছে। তাই বলে তারা অজেয় দল নয়। ভিন গ্রহের ক্রিকেটও খেলে না। বাংলাদেশ দলের ক্রিকেটারদের মতো পাকিস্তানের ক্রিকেটাররাও ব্যাটেবলে খেলে। পার্থক্য থাকলে মানসিকতায়। পাকিস্তান দলের প্রত্যেকে সাহসী। বাংলাদেশ দলের খেলোয়াড়রা খেলার আগেই হেরে বসে থাকে।
মিরপুর শেরেবাংলা জাতীয় ক্রিকেট স্টেডিয়ামে এই সিরিজে যে দুটি খেলা হয়েছে, তার কোনটিতেই আশানুরূপ ব্যাটিং করতে পারেনি বাংলাদেশ। শনিবারের ম্যাচেও যে আগের ঘটনার পুনরাবৃত্তি হবে না, সে নিশ্চয়তা দেবে কে?
টি-টোয়েন্টিতে পাকিস্তানকে ১৩৫ রানে বেঁধে ফেলে বাংলাদেশ ২০ ওভারে ৮৫ রান করেছিলো। ওয়ানডেতে তারচেয়েও খারাপ হয়েছে। ৫০ ওভারের খেলায় সাকিব-তামিমরা অলআউট হয়েছেন ৯১ রানে। ক্রম পতনের ধারা অব্যাহত থাকলে সিরিজ নির্ধারণী ম্যাচে স্কোর লাইনের গ্রাফ নিচে নেমে আসার কথা। মানসিক বিপর্যয় থেকে ক্রিকেটাররা এখনো বেরিয়ে আসতে পারেননি। বাংলাদেশ দলের পরিণতি যে কোন দিকে যাচ্ছে বলা মশকিল।
জাতীয় দলের দুই নির্বাচক আকরাম খান ও মিনহাজুল আবেদীন নান্নু দফায় দফায় ক্রিকেটারদের সঙ্গে বসে তাদেরকে মানিসিকভাবে উজ্জীবিত করার চেষ্টা করছেন। প্রধন কোচ স্টুয়ার্ট ল খেলার কৌশলগুলো নানা ভাবে ব্যাখ্যা করছেন। কোচিং প্যানেলের সহকারী সদস্যরাও সহযোগিতার হাত প্রসারিত করেছেন। অনেক কিছুই পেলেন ক্রিকেটাররা এখন সেগুলো ২২ গজের ভেতরে প্রয়োগ করতে পারলে হয়। আসলে তুকতাকে খুব বেশি লাভও হয় না। বাংলাদেশের খেলোয়াড়দের চারিত্রিক বৈশিষ্টই হলো অনুশীলনে অনেক কিছু শেখেন, মাঠের ভেতরে গিয়ে সব ভুলে যান। ফলে খেলায় ভুলের পুনরাবৃত্তি হয়।
অভিজ্ঞতার আলোকে বর্ষিয়ান খেলোয়াড়রা এই কথাগুলো সবার মাঝে ছড়িয়ে দিয়েছেন। সাবেকরা যে ভুল বলেন না একটি উদাহরণ দিলে প্রমাণ হয়ে যাবে। ১৯৯৯ সালের সাফ গেমসের জন্য জাতীয় ফুটবল দলের প্রশিক্ষণ ক্যাম্প হয় বিকেএসপিতে। কোচ ছিলেন ইরাকের সামির সাকি। ফুটবলের এক নম্বর মাঠে ম্যাচ প্র্যাকটিস করাচ্ছিলেন। কোচ যতবারই বলের সঙ্গে খেলোয়াড়দের পজিশন দেখিয়েছেন, ততবারই ভুল করেন খেলোয়াড়রা। একপর্যায়ে বিরক্ত হয়ে মাঠ থেকে বেরিয়ে যান কোচ। আসলে ফুটবলাররা ভুল করেননি, ওটা বাংলাদেশের মানুষের বৈশিষ্ট্য। তা না হলে কোচের নির্দেশনা শেষ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে আলফাজ আহমেদ এবং জুয়েল রানার মতো তারকা খেলোয়াড়রা দলের বাকি সদস্যদের বলতেন না,‘বাঙ্গালী খেলা খেলো। ইরাকি খেলা ভুলে যাও। ’
স্টুয়ার্ট ল, জেসন সুইফট, শেন জার্গনসেন যতই অস্ট্রেলিয়ান ক্রিকেট বাংলাদেশের খেলোয়াড়দেরকে শেখান, ২২ গজে ঢোকার পর তা ভুলে গিয়ে বাঙ্গালী খেলা খেলেন তারা। শনিবার মিরপুর শেরেবাংলা জাতীয় স্টেডিয়ামে যে ম্যাচ হবে জাতীয় দলের ক্রিকেটাররা যদি বাঙ্গালী স্টাইল থেকে বেরিয়ে আসতে পারেন তাহলে যদি কিছু হয়।
বাংলাদেশ সময়: ১৭৩০ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২, ২০১১