ঢাকা, মঙ্গলবার, ৩ বৈশাখ ১৪৩১, ১৬ এপ্রিল ২০২৪, ০৬ শাওয়াল ১৪৪৫

খেলা

গ্যালারি পূর্ণ হওয়ার আগেই বাংলাদেশ অলআউট!

সেকান্দার আলী | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২০৫৬ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১, ২০১১
গ্যালারি পূর্ণ হওয়ার আগেই বাংলাদেশ অলআউট!

ঢাকা: একচতুর্থাংশ দর্শক তখনো স্টেডিয়ামের গেটের বাইরে দাঁড়িয়ে। প্রত্যেকের হাতে প্রথম ওয়ানডে ম্যাচের টিকিট।

গেট খালি, একজনও ভেতরে ঢোকার চেষ্টা করছেন না। কেউ কেউ ‘আইল্যান্ডের’ ওপর বসে অনর্গল খিস্তিখেওর করে যাচ্ছেন। আক্রোশের হেতু জানার ইচ্ছে হয়। হাঁটার গতি ধীর করে তাদের পাশ দিয়ে এগিয়ে যেতে, সব কিছু পানির মতো পরিষ্কার হয়ে যায়। স্টেডিয়াম চত্বরে প্রবেশের আগেই তাদের কানে পৌঁছে গেছে ধ্বংসযজ্ঞ চলছে ভেতরে।

১২.৫ ওভারে ৩১ রান তুলতে পাঁচ উইকেট হারিয়ে বিপর্যস্ত বাংলাদেশ। খেলা দেখার আগ্রহ হারিয়ে ফেলেন। দুঃখে-ক্ষোভে বাইরেই দাঁড়িয়ে থাকেন। শেষপর্যন্ত তারা গ্যালারিতে প্রবেশ করেছিলেন কি না জানা নেই। ওই দৃশ্য দেখার পর বাংলাদেশ দলের পারফরমেন্স বর্ণনা করার প্রয়োজন হয় না। তবুও লিখতে হয় নিয়ম রক্ষার জন্য। দূরপ্রাচ্য, মধ্যপ্রাচ্য এবং পাশ্চাত্যে যাদের বাস, ক্রিকেট অনুরাগী ওই মানুষগুলোকে জানানোর জন্যও লিখার বাধ্যবাধকতা থাকে। সে জন্যই বাংলাদেশ-পাকিস্তান দলের খেলার একটা চিত্র ভাষায় তুলে ধরার চেষ্টা।

এই সিরিজে বাংলাদেশ দল স্বাগতিক, পাকিস্তান ভ্রমণে এসেছে, তারা অতিথি। অতিথি সদকার করতে গিয়ে মানুষ কখনো কখনো দেউলিয়া হয়ে যায়। কিন্তু ক্রিকেট একটা খেলা, যেখানে জয় পরাজয়ের হিসেব থাকে। অতিথিকে দেউলিয়া করে দিলে লোকে একে মন্দ বলে না। বরং আগুন্তুকের কাছে হেয় প্রতিপন্ন হলে নিন্দে করে। বাংলাদেশ ক্রিকেট দল দেশের মাঠে খেলেও সুবিধা নিতে পারছে না। আগুন্তুকের কাছে তারাই দেউলিয়া হয়ে যাচ্ছে।

দেশে খেলার সুবিধাটাই তো নিতে পারছে না বাংলাদেশ দল। অধিনায়ক মুশফিকুর রহিম আক্ষেপ করে বলেও ফেলেন,‘স্বাগতিক হওয়ার সুবিধাটা যে কি দুই ম্যাচেও বুঝতে পারলাম না। ’ যত দোষ নন্দঘোষ। ব্যর্থতার সব দায় এখন কিউরেটরের। খেলতে না পারলে বেচারা কিউরেটর কি করবেন? বাংলাদেশ দল যেখানে পারে না, পাকিস্তান সেখানে দুর্বার। গলদটা পিচে না খেলায় ক্রিকেট বিজ্ঞরাই ভালো বলতে পারবেন।

টসে জিতে মুশফিকুর রহিমই ব্যাটিং পছন্দ করেছিলেন। কিন্তু ব্যাট করতে গিয়ে হোঁচট খেলে দায় কার? বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানরা প্রথম থেকেই পাকিস্তানের বোলারদের খেলতে পারেনি। মারকুটে তামিম ইকবালের কথাই ধরা যাক। অফ স্পিনার মোহাম্মদ হাফিজের উদ্বোধনী ওভারের চতুর্থ বলেই এলবিডব্লু হয়েছেন শূন্যরানে। অভিমান করে টি-টোয়েন্টি ম্যাচ খেলেননি। আর ওয়ানডে ম্যাচে তার পারফরমেন্সের ওপর অভিমান করতে পারেন ‘টিম ম্যানেজমেন্টের’ সদস্যরা।

পাকিস্তান দল স্পিন বোলারে সমৃদ্ধ। রেল লাইনের মতো ওভারের পর ওভার স্পিন দিয়ে চালিয়ে দিতে পারেন মিসবাহ উল হক। আর একে একে স্পিনে কাটা পড়লেন স্বাগতিক ব্যাটসম্যানরা। একটাও ভালো জুটি হয়নি। তৃতীয় উইকেটে মুশফিকুর রহিম এবং শাহরিয়ার নাফিস ২৩ এবং ষষ্ঠ উইকেটে সাকিব আল হাসান ও নাসির হোসেন ৩৬ রান উপহার দিয়েছেন। বেশিরভাগ উইকেটই ছুঁড়ে দিয়ে এসেছেন বলা যায়। আত্মঘাতি শট খেলে সাকিব, মুশফিকুর এবং শাহরিয়ার আউট হয়েছেন। বাংলাদেশের ইনিংসে সর্বোচ্চ ব্যক্তিগত স্কোর নাসিরের ২১, সাকিবের ১৫ এবং মুশফিকের ১১ রান। একা আফ্রিদি পাঁচ উইকেট নিয়ে ৯১ রানেই ধ্বসিয়ে দিয়েছেন।

বাংলাদেশের ক্রিকেটের ইতিহাসে আগে ব্যাট করে শত রানের নিচে ইনিংস গুটিয়ে গেছে ১৪ বার। যারমধ্যে তিন ইনিংস ২০১১ সালে মিরপুর শেরেবাংলা জাতীয় ক্রিকেট স্টেডিয়ামে। বিশ্বকাপে ওয়েস্ট ইন্ডিজের কাছে নিজেদের সর্বনিম্ন ৫৮, দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে ৭৮ এবং পাকিস্তানের বিপক্ষে বৃহস্পতিবার ৯১ রানে। বাংলাদেশের ১০টি সর্বনিম্ন স্কোরের মধ্যে এই তিনটিই আছে।

যে রান, তা মোকাবেলা করে জয় নিশ্চিত করা পাকিস্তানের জন্য সময়ের ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়ে ছিলো। কিন্তু উইকেটের সুবিধা কাজে লাগিয়ে বোলাররা খেলাটাকে দীর্ঘস্থায়ী করেছেন। বড় চমক দিতে না পারলেও প্রতিপক্ষের পাঁচ ব্যাটসম্যানকে ফিরিয়েছেন সাকিব এবং রুবেল হোসেন দুটি করে উইকেট নিয়ে। ২৫.৫ ওভারে জয় নিশ্চিত করে ফেলে পাকিস্তান। শহীদ আফ্রিদি অপরাজিত ২৪, মিসবাহ উল হক হার না মানা ১৬ এবং হাফিজ ২২ রান করেন।

অলরাউন্ড নৈপূন্যের কারণে ম্যাচ সেরার পুরস্কার পেলেন শহীদ আফ্রিদি। তিন ম্যাচের সিরিজে ১-০ তে এগিয়ে গেলো পাকিস্তান।

বাংলাদেশ সময়: ২০৫৬ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ০১, ২০১১

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
welcome-ad