ঢাকা, শুক্রবার, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫

ক্রিকেট

কাউকে ভুল প্রমাণ করার সুযোগ খুঁজি না: মাশরাফি

স্পোর্টস ডেস্ক | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০১৫৮ ঘণ্টা, মে ২৫, ২০১৯
কাউকে ভুল প্রমাণ করার সুযোগ খুঁজি না: মাশরাফি মাশরাফি বিন মর্তুজা/সংগৃহীত ছবি

সেই ২০০১ সাল থেকে জাতীয় দলের জার্সি গায়ে খেলছেন মাশরাফি বিন মর্তুজা। দেশের বহু জয়ের নায়ক তিনি। যদিও ইনজুরি তার ক্যারিয়ারের বড় একটা অংশ কেড়ে নিয়েছে। গতিতে বাধ সেধেছে। তবু যখনই মাঠে নেমেছেন বুক চিতিয়ে লড়ে গেছেন, এখনও যাচ্ছেন। কিন্তু সেই তাকে নিয়ে প্রায়ই অনেকে প্রশ্ন তোলেন। এছাড়া তার রাজনীতিতে জড়িয়ে পড়া নিয়েও অনেক সমালোচনা হয়। অবশ্য তাতে বিন্দুমাত্র বিচলিত বোধ করেন না এই টাইগার পেসার। বরং কাউকে ভুল প্রমাণ করার সুযোগ খোঁজা তার কাজ নয়। এমনটাই মত তার।

ক্রিকেটভিত্তিক জনপ্রিয় ওয়েবসাইট ক্রিকবাজকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে নিজের অবস্থান এভাবেই পরিস্কার করেন মাশরাফি। তিনি বলেন, ‘আসলে আমি কাউকে ভুল প্রমাণ করার সুযোগ খুঁজি না।

আমরা সবসময় নেতিবাচক। ভাবুন, আমরা একটা টুর্নামেন্ট জিতলাম, অনেকে বলবে আমরা “বি” কিংবা “সি” দলের সঙ্গে জিতেছি। আমরা সবসময় নিজেদের ছোট করে দেখি। এটা ঠিক আছে। '

‘সত্যি বলতে কি, কারো সঙ্গে আমার ব্যক্তিগত লড়াই নেই। আমি আনন্দের জন্য খেলি। আমি আমার কাজটা করি। কেউ আমার কাজটা ১৮ বছর ধরে করে দেয়নি। এখনও কেউ করে দেবে না। তাই মানুষের মন্তব্যের জন্য আমার নিজেকে পাল্টানোর প্রয়োজন নেই। আমার ক্রিকেট অভিজ্ঞতা সেসবের চেয়েও অনেক কঠিন। সেসব যুদ্ধে লড়াই করার পর এখন সেসবের কাছে সব কিছুই না। '

সাম্প্রতিক সময়ে ওয়ানডেতে রীতিমত উড়ছে বাংলাদেশ দল। এইতো সেদিন আয়ারল্যান্ডে ত্রিদেশীয় সিরিজের ফাইনালে জেতার পর দলের আত্মবিশ্বাস এখন তুঙ্গে। তবে বিশ্বকাপের মতো বড় আসরে ভালো করা মোটেই সহজ কাজ নয়। বিশেষ করে তা যদি হয় ইংলিশ কন্ডিশনে।  

উপমহাদেশীয় কন্ডিশনে ৩০০-এর চেয়ে কম রান করে জয় তুলে নেওয়া সহজ হলেও ইংলিশ কন্ডিশনে এটা মোটেই বড় স্কোর নয়। তাই যেমনটা প্রবাদে আছে ‘when in Rome, do as Romans do’ (যখন রোমে থাকবেন তখন রোমানদের মতোই কাজ করতে হবে), ঠিক সেভাবেই ইংল্যান্ডে যেমন খেলা দরকার সেভাবেই খেলতে হবে বলে মত দিলেন টাইগার দলপতি।

আসন্ন বিশ্বকাপে ভিন্ন এক ইংলিশ কন্ডিশন দেখতে পাওয়ার সম্ভাবনা দেখা যাচ্ছে। এবার ব্যাটসম্যানদের ব্যাটে রানের ফোয়ারা ছুটবে বলেই মত ক্রিকেট বিশেষজ্ঞদের। ৩০০-৩৫০ রান তোলা এখানে মামুলি ঘটনা। সর্বশেষ ইংল্যান্ড-পাকিস্তান সিরিজেও এমন চিত্র দেখা গেছে। প্রতি ম্যাচেই সেখানে রানের বন্যা দেখা গেছে। ঠিক এই বিষয়টাই ভাবনায় ফেলতে পারে বাংলাদেশ দলকে। বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানদের রান তোলার গতি ঠিক এখানকার কন্ডিশনে খাপ খাওয়ানোর মতো নয়। বিষয়টা মাশরাফিকেও ভাবাচ্ছে। তবে এর সমাধানও জানিয়েছেন তিনি।

বাংলাদেশ খুব কম সময়ই ৩০০ কিংবা এর বেশি রান করে ফলে ৩০০ রানের লক্ষ্য দলটির জন্য বিশাল লক্ষ্য। মাশরাফির কাছে জানতে চাওয়া হয়েছিল, ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে ত্রিদেশীয় সিরিজের ফাইনালে ৩০০ ছুঁইছুঁই লক্ষ্য তাড়া করার পর বাংলাদেশ কি এখন ৩৩০-৩৪০ রানের লক্ষ্য তাড়া করার অবস্থানে পৌঁছুতে পেরেছে? উত্তরে মাশরাফি বলেন, ‘যখন রোমে থাকবেন তখন রোমানদের মতোই কাজ করতে হবে। আমাদের সেভাবেই হিসাব করতে হবে। শুধু আমরা পারিনা বলে, যদি আমরা মনে করি পারব না, তাহলে আমরা বিশ্বকাপে কিছুই করতে পারব না। '

‘আমরা পারি না কিংবা পারিনি এটা একটা বিষয়, আর আমাদের করতে হবে এটা আলাদা বিষয়। আমাদের এটা মাথায় রাখতে হবে, ৩০০ কিংবা ৩৩০, ৩৫০ হয়ত অনেক দূরের পথ, কিন্তু এটা দারুণ হবে দারুণ পারফরম্যান্স। কিন্তু আমাদের মাথায় রাখতে হবে ৩০০, ৩২০-৩৩০ রানের হিসাব। আমরা যদি শুরুতে ব্যাট করি তাহলে আমাদের এমন স্কোর গড়তে হবে, আমরা যদি পরে ব্যাট করি তাহলেও এটাই মাথায় রাখতে হবে। '

সাম্প্রতিক সময়ে ফাইনালের গেরো খুলে যে অভিজ্ঞতা হয়েছে তা বিশ্বকাপে কতটা কাজে দেবে এমন প্রশ্নের জবাবে মাশরাফি বলেন, ‘ফাইনাল নিয়ে একটা মানসিক বাধা আমাদের ছিল। আমরা ৬টা ফাইনাল খেলে হেরেছি। আমরা সেখান থেকে বের হতে পারছিলাম না। কিন্তু এবার কঠিন পরিস্থিতি থেকে জয় পাওয়ায়, আমরা কিছুটা সুবিধা পাব কারণ ফাইনালে অমন পরিস্থিতিতে আটকে গেলে কি করতে হয় ছেলেরা জানে। '

ফাইনাল জেতায় প্রত্যাশার চাপটা বেড়ে গেল কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমরা কতটা প্রত্যাশা বাড়িয়েছি কি না তা এখন কোনো মানে রাখে না। আমরা যদি টুর্নামেন্টটা খুব বাজেভাবে হেরেও যেতাম তবুও মানুষ কিছুটা প্রত্যাশা নিয়েই আমাদের খেলা দেখত। অন্তত ১৮ থেকে ২০ বছর খেলার পর আমার অভিজ্ঞতা তাই বলে। এমন একটা সময় ছিল যখন মানুষ আমাদের খেলা দেখত আমরা ভালো খেলতে পারি কিনা কিংবা মাঝে কোনো ব্যক্তিগত সাফল্য পাই কিনা, কিন্তু এখন সেসব পাল্টে গেছে। গত ৫ থেকে ৭ বছর ধরেই মানুষ আমাদের বিজয়ীর বেশে দেখতে চায়। তাই তাদের প্রত্যাশায় কোনো পরিবর্তন হয়েছে তা বলা যাবে না। '

বর্তমান দলটির ওপর পূর্ণ আস্থা আছে মাশরাফির। তার মতে, এই দলটির বাইরে তেমন কোনো অপশন ছিল না। তবে দল বাছাই নিয়ে আলোচনা-সমালোচনা স্বাভাবিক। কিন্তু যে দলটি বিশ্বকাপে লড়বে সেটাই সম্ভাব্য সেরা দল। বরং যারা আছে তাদের সমর্থন দেওয়ার পর তারা মূল্যও দিচ্ছে। বিশেষ আবু জায়েদ রাহি, সৌম্য সরকার কিংবা লিটন দাসের কথা উল্লেখ করেন তিনি।

আসন্ন বিশ্বকাপকে বাংলাদেশের জন্য অনেক বড় চ্যালেঞ্জ হিসেবেই দেখছেন মাশরাফি। সেখানে সবাই জিততেই যায়। বাংলাদেশও বড় লক্ষ্য নিয়েই যাচ্ছে। সে লক্ষ্যে যে দল পাওয়া গেছে তা মাশরাফির মতে ঠিকই আছে। এখন শুধু সঠিক সময়ে জ্বলে ওঠার অপেক্ষা।  

বাংলাদেশ সময়: ২১৫৭ ঘণ্টা, মে ২৪, ২০১৯
এমএইচএম

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।