ঢাকা, শুক্রবার, ১২ বৈশাখ ১৪৩১, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫

ক্রিকেট

ইমরুলকে কি তবে বলির পাঁঠা বানানো হলো?

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৯৩৯ ঘণ্টা, এপ্রিল ১৬, ২০১৯
ইমরুলকে কি তবে বলির পাঁঠা বানানো হলো? ইমরুল কায়েস/ফাইল ফটো

আসন্ন বিশ্বকাপের স্কোয়াড ঘোষণা করেছে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি)। স্কোয়াডের অধিকাংশ নাম আগে থেকেই অনুমিত ছিল। চমক হিসেবে সুযোগ পেয়েছেন পেসার আবু যায়েদ রাহি। মোসাদ্দেক হোসেন সৈকতের নামটিও কিছুটা বিস্ময়ের। কিন্তু যে নামটি নিয়ে সংশয় ছিল অর্থাৎ ইমরুল কায়েসের জায়গা হয়নি স্কোয়াডে। তাহলে কি অভিজ্ঞ ইমরুলকে বলির পাঁঠা বানানো হলো?

গত বছরের অক্টোবরে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে ওয়ানডে সিরিজে ৩৪৯ রান করেন ইমরুল। এরপর উইন্ডিজের বিপক্ষে ওয়ানডে সিরিজের প্রথম দুই ম্যাচে ব্যর্থ হলে তৃতীয় ম্যাচে সুযোগ পেয়ে ৮০ রানের ইনিংস খেলেন সৌম্য।

সৌম্য ফর্মে ফেরায় নিউজিল্যান্ড সফর থেকে বাদ পড়তে হয় ইমরুলকে। অথচ কিউইদের মাটিতে বাংলাদেশের হয়ে এক ওয়ানডে সিরিজে সর্বোচ্চ রান ছিল তার দখলেই। অনেকটা অভিমানেই প্রায় অবসর নিয়ে ফেলেছিলেন সেসময়। অথচ আগ্রাসী তামিমের সঙ্গে ধীরস্থির ইমরুলের সঙ্গে বোঝাপড়া অনেক ভালো।

তাকে সান্ত্বনা দিতেই কিনা বিশ্বকাপে স্কোয়াডে রাখার ইঙ্গিত দিয়েছিলেন প্রধান নির্বাচক মিনহাজুল আবেদিন নান্নু। কিন্তু বিসিবি সভাপতি নাজমুল হাসান পাপন ২৬ মার্চ জানিয়ে দেন, তামিমের সঙ্গে সৌম্য আর লিটন  খেললে ইমরুলের জায়গা হবে না। দল ঘোষণার পর দেখা গেল পাপন ঠিকই বলেছিলেন।

ইমরুলকে বাদ দেওয়ার পেছনে কারণ হিসেবে প্রধান নির্বাচক মিনহাজুল আবেদিন নান্নু বলেছেন, ‘ওপেনিংয়ে ডান-বামহাতির কম্বিনেশন চেয়েছে টিম ম্যানেজম্যান্ট। সেকথা বিবেচনা করে তামিম ও সৌম্য’র সঙ্গে লিটনকে নেওয়া হয়েছে। এ জন্য বাদ পড়েছে ইমরুল। ’

প্রধান নির্বাচকের কথা অনুযায়ী বাঁহাতি হওয়ার কারণেই কি তবে বাদ পড়লেন ইমরুল? তাহলে তামিম ও সৌম্য দুজনেই বাঁহাতি হয়েও ওপেনিং করেছেন কীভাবে? আর ইমরুল তো শুধু ওপেনিং নয়, নিচের দিকেও ব্যাট করতে পারেন। গত এশিয়া কাপেই সেই প্রমাণ তিনি রেখেছেন। অথচ শুরুতে তাকে দলেই রাখা হয়নি। সেই তিনিই গত এশিয়া কাপে আফগানিস্তানের বিপক্ষে গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচে খেলেন অপরাজিত ৭২ রানের ইনিংস, তাও ৬ নম্বরে নেমে। এছাড়া ২০১৮ সালে বাংলাদেশের সেরা পাঁচ ব্যাটসম্যানের মধ্যে রানের হিসেবে চতুর্থ সেরা ছিলেন ইমরুল। আর সর্বো স্ট্রাইক রেট ছিল তারই দখলে।

সুযোগ পেলে এটা হতো ইমরুলের সম্ভাব্য শেষ বিশ্বকাপ। কিন্তু কপাল খারাপ। স্বপ্নটা তার পূরণ হলো না। অথচ এই ইমরুল বাংলাদেশের হয়ে বহু গুরুত্বপূর্ণ ইনিংস উপহার দিয়েছেন। এশিয়া কাপে ভালো খেলেও জিম্বাবুয়ে সিরিজের দলে তাকে রাখতে চাননি নির্বাচকরা। শেষে সিনিয়র ক্রিকেটারদের চাপে দলে সুযোগ পাওয়ার পর জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে প্রথম ম্যাচে ১৪৪, পরের ম্যাচে ৯০ এবং তৃতীয় ম্যাচে করেছিলেন ১১৫ রান।

ক্যারিয়ারে এমন উত্থান-পতন বহুবার দেখেছেন ইমরুল। কিন্তু যাদের সুযোগ দিতে তাকে বাদ দেওয়া হলো তাদের অবস্থাটা একটু দেখে নেওয়া যাক। ওপেনিংয়ে তামিমের কোনো বিকল্প নেই। কিন্তু তার সঙ্গী হিসেবে কেউই স্থায়ী হতে পারেননি। সৌম্য সরকারকে দলে নেওয়া হয়েছে সাম্প্রতিক ফর্ম বিবেচনায়। তবে চলতি ঢাকা প্রিমিয়ার ডিভিশন ক্রিকেট লিগে কিন্তু সৌম্য এখনও আহামরি কিছু করে দেখাতে পারেননি।

তামিমের ওপেনিং সঙ্গী হিসেবে ভাবা হচ্ছে লিটন দাসকেও। আগ্রাসী ব্যাটিংয়ে নজর কেড়েছেন তিনি। ঘরোয়া ক্রিকেটেও দারুণ খেলছেন। আর ইংল্যান্ডের পেস বান্ধব পিচে তার আগ্রাসী ব্যাটিং কার্যকর হবে তা নিয়ে সন্দেহ নেই। তার স্ট্রাইক রেটও (৭৯.৭৪) ইমরুলের চেয়ে ভালো (৭১.১০)। আবার এদিক থেকে সৌম্য অনেক এগিয়ে তার স্ট্রাইক রেট ৯০-এর বেশি।

কিন্তু ক্রিজে টিকে থাকাও তো বড় লড়াই। প্রায়ই দেখা যায় বাংলাদেশের টপ অর্ডার ব্যর্থ হলে লাইনআপের বাকি অংশ হুড়মুড় করে ভেঙে পড়ে। সেক্ষেত্রে ইমরুলের মতো একজন অভিজ্ঞ ও তুলনামূলক ধৈর্যশীল ব্যাটসম্যান কার্যকর প্রতীয়মান হতেন। সাব্বির রহমানকে দলে নেওয়া নিয়ে এমনিতেই প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। অধারাবাহিকতার অনন্য নজির সাব্বির। তারপরও তার জায়গা হয়, ইমরুলের হয় না।

অন্তত স্ট্যান্টবাই হিসেবে তো ইমরুলকে রাখা যেত। কোনো কারণে কেউ ফর্ম হারিয়ে ফেললে কিংবা ইনজুরিতে পড়লে ইমরুল হতে পারতেন বড় বিকল্প। কিন্তু কোনো অজানা কারণে তাকে দলে নিতে ভীষণ আপত্তি নির্বাচকদের। সর্বশেষ বাদ পড়ার পর জানিয়েছিলেন ক্রিকেট থেকে বিদায় নিতে চান। পরে আবেগ সংবরণ করে ভালোবাসার ক্রিকেটকে বিদায় জানাতে পারেননি। কিন্তু এভাবে আর কত?

বাংলাদেশ সময়: ১৫৩৯ ঘণ্টা, এপ্রিল ১৬, ২০১৯
এমএইচএম/এমএমএস

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।