ঢাকা, শনিবার, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৭ শাওয়াল ১৪৪৫

খেলা

রাজার মুকুটে আবার সাকিব

সাইফ হাসনাত, ব্লগার ও পাঠক | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৬০০ ঘণ্টা, অক্টোবর ৩১, ২০১১
রাজার মুকুটে আবার সাকিব

ঢাকা: হ্যান্সি ক্রনিয়ে দক্ষিণ আফ্রিকা দলটাকে অসামান্য উচ্চতায় নিয়ে গিয়েছিলেন। একজন আদর্শ অধিনায়ক বলতে যা বোঝায় তিনি তাই ছিলেন।

তার সময়ে দক্ষিণ আফ্রিকা দলে অলরাউন্ডারের ছাড়াছড়ি ছিলো। তার কাছে আসলে অলরাউন্ডাররাই আসল ক্রিকেটার। আর যারা শুধু ব্যাটসম্যান বা শুধু বোলার, তারা মিনি ক্রিকেটার। ক্রিকেট নিয়ে ক্রনিয়ের এই বোধের কারণেই হয়তো তার দলে অলরাউন্ডারদের ছড়াছড়ি ছিলো।

সাকিবকে নিয়ে লেখা শিরোনামে ক্রনিয়ের আগমনের কারণটা বুঝতে পেরেছেন! কারণ; ক্রনিয়ে বেঁচে থাকলে অবশ্যই সাকিবকে খুব পছন্দ করতেন। মনে মনে হয়তো বলতেনও, ইশ! বাংলাদেশ দলে যদি সাকিবের মতো আরো কিছু ক্রিকেটার থাকতো!

ক্রনিয়েকে নিয়ে কল্পিত চিত্রটা আসলে বাংলাদেশের সকল ক্রিকেটপ্রেমীর হৃদয়েই গাঁথা আছে।

গত সপ্তাহেই সাকিব বিশ্বসেরা ওয়ানডে অলরাউন্ডারের হারানো মুকুট ফিরে পেয়েছেন। যা তিনি হারিয়েছিলেন অস্ট্রেলিয়ার বিপরীতে বাংলাদেশের ওয়ানডে সিরিজে। শেন ওয়াটসন সাকিবকে হটিয়ে শীর্ষে আসন নিয়েছিলেন। দীর্ঘ সাতাশ মাস পর ওয়ানডে অলরাউন্ডারের তালিকার শীর্ষ থেকে দুইয়ে নেমে আসেন। অধিনায়কত্বের বোঝা আর নানামুখী আলোচনা-সমালোচনার প্রভাব পড়েছিলো সাকিবের বোলিং-ব্যাটিংয়ে। ইংল্যান্ডের কাউন্টি ক্রিকেট থেকে যন্ত্রণার জিম্বাবুয়ে সফর, তারপর টি-টোয়েন্টি প্রিমিয়ার লিগে; সাকিবের দুঃসময় কেটেছে।

কিন্তু চলতি ওয়েস্ট ইন্ডিজ সিরিজে সাকিব নিজেকে খুঁজে পাওয়ার প্রানান্তকর চেষ্টা করেন। এবং তাতেই ফিরে পেলেন হারানো রাজ্য। রাজ্য ফিরে পাওয়ার পর যেনো আরো বেশি করে জ্বলে উঠলেন তিনি।   যে জ্বলে উঠাটা প্রমাণ হয় ওয়েস্ট ইন্ডিজের সঙ্গে দ্বিতীয় টেস্টে বোলিংয়ে মাত্র ৬৩ রানে পাঁচ উইকেট এবং ব্যাটিংয়ে ৭৪ বলে ৭৩ রানের দূরন্ত পারফর্মে। আরো একটু ধৈর্য ধরলে হয়তো হাফ সেঞ্চুরিকে দ্বিতীয় সেঞ্চুরিতে নিয়ে যেতে পারতেন। সেটি না হওয়ায় ভাগ্যের দোষ যতোটা না, তারচেয়ে ঢের বেশি সাকিবের দায়। কারণ, বহু সময় ও সুযোগ সাকিবের সামনে পড়ে ছিলো।

দ্বিতীয় টেস্টের মতো প্রথম টেস্টেও সাকিব ছিলেন দলের সেরা পারফর্মারদের একজন। প্রথম ইনিংসে ব্যাটিংয়ে ৮৭ মিনিট ক্রিজে থেকে ৮৩ বলে খেলেছিলেন ৪০ রানের ইনিংস। বোলিংয়ে নিয়েছিলেন ক্যারিবিয়ান ওপেনার সিমন্স, ক্যাপ্টেন স্যামি ও সিমার রবি রামপলের উইকেট। ওয়েস্ট ইন্ডিজের ছোট্ট দ্বিতীয় ইনিংসের দুই শিকারের একটিও ছিলো সাকিবের। এর আগে ওয়ানডে সিরিজের দ্বিতীয় ম্যাচে সাকিবের ব্যাট থেকে এসেছিলো ৬৭ রানের একটি দারুণ অপরাজিত ইনিংস। শেষ ওয়ানডেতে ৬১ রানে ওয়েস্ট ইন্ডিজকে মোড়ানোর ম্যাচে সাকিব নিয়েছিলেন মূল্যবান তিনটি উইকেট।

সাকিবের কাছাকাছি আরো বেশ কয়েকজন ক্রিকেটার রয়েছেন বাংলাদেশ দলে। তাদের সবারই পারফরমেন্স বেশ ভালো। যেমন নাসির হোসেন, নাঈম ইসলাম, মাহমুদ উল্লাহ, সোহরাওয়ার্দী। তবে তাদের নেতৃত্বে কিন্তু সাকিব আল হাসানই। বলতে দ্বিধা নেই, সাকিবই প্রথম প্রমাণ করেছেন বাংলাদেশি একটা তরুণ কিভাবে বিশ্ব ক্রিকেটের সেরা আসন নিয়ে নিতে পারেন। কিভাবে মাসের পর মাস শীর্ষস্থান ধরে রাখতে পারেন। সাকিবই প্রথম দেখিয়েছেন- অসীম চাপের কঠিন সময় পেছনে ফেলে দিয়ে, কিভাবে আবারও নিজেকে ফিরে পাওয়া যায়। দলের সবাই যদি সাকিবের মতো অলরাউন্ডার হয়ে উঠতেন! আমাদের ক্যাপ্টেনও যদি লালন করতেন ক্রনিয়ের বোধ!

হ্যান্সি ক্রনিয়ের বোধের মতো করে বলতে ইচ্ছে করে- অলরাউন্ডাররা ক্রিকেটার, আর অন্যরা মিনি ক্রিকেটার!

বাংলাদেশ সময়: ১৬০০ ঘণ্টা, অক্টোবর ৩১, ২০১১

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।