ঢাকা, শুক্রবার, ১৪ চৈত্র ১৪৩০, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৮ রমজান ১৪৪৫

ক্রিকেট

চেহারা দেখিয়ে দলে নেই সাকিব-তামিম

মহিবুর রহমান, স্পেশাল করেসপনডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১২৩০ ঘণ্টা, জুলাই ৯, ২০১৮
চেহারা দেখিয়ে দলে নেই সাকিব-তামিম হাবিবুল বাসার। ছবি: শোয়েব মিথুন/বাংলানিউজ

ঢাকা: নামের গুনে কিংবা চেহারা দেখিয়ে বাংলাদেশ দলে নেই তামিম ইকবাল ও সাকিব আল হাসান। বরং আন্তর্জাতিক অঙ্গনে পারফর্ম করেই তারা লাল সবুজের ক্রিকেটে নিজেদের জায়গাটা স্থায়ী করেছেন। লম্বা সময় ধরেই বিশ্বসেরা অলরাউন্ডার র‌্যাংকিংযের শীর্ষে বিচরণ করছেন সাকিব। তামিমও টেস্ট, ওয়ানডে ও টি টোয়েন্টি তিন ফরম্যাটেই দেশের শীর্ষ রান সংগ্রাহক। এই দুই প্রাণভোমরাকে বাদ দিয়ে বাংলাদেশ দল চিন্তা করা অসম্ভবই বটে!

কিন্তু হঠাৎ করে তাদের দলে থাকার যৌক্তিকতা খোঁজা হচ্ছে কেন? যাদের হাত ধরে এদেশের ক্রিকেটে অগনিত গর্বিত জয় এসেছে; শত রাজনৈতীক, অর্থনৈতীক, প্রাকৃতিক চড়াই উৎরাইয়ের মধ্যেও যাদের ব্যাটে বলে নির্মল আনন্দের উপলক্ষ্য এসেছে; হঠাৎ করেই তাদের বিকল্প খোঁজা হচ্ছে কেনো?

স্বাগতিক ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে অ্যান্টিগায় দুই ম্যাচ সিরিজের প্রথম টেস্টে দলের এই দুই সিনিয়র ক্রিকেটারের ব্যাটিং দেখে অনেকেই প্রশ্ন তুলেছেন ‘আর কত?’ তাদের বদলি কী কোন দিনই এদেশে তৈরী হবে না?  

শুনতে খারাপ শোনা গেলেও প্রশ্নগুলো খুব একটা অযৌক্তিক নয়! সাকিব-তামিমের প্রতিভা নিয়ে কখনোই সন্দেহ হওয়ার কথা নয়। কিন্তু যদি কখনও এমন হয়, এই দুজনই গুরুতর ইনজুরিতে আক্রান্ত বা কোন কারণে খেলতে পারছেন না।

তখন কী হবে? সেই ব্যাকআপ কী বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি) এখনও তৈরি করতে পেরেছে? 

এমন প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে অবশ্য খুব বেশিদূর যেতে হবে না। চলতি বছরের শুরুতে দেশের মাটিতে ত্রিদেশীয় সিরিজে সাকিব বাঁহাতের কণিষ্ঠা আঙ্গুলের চোটে ছিটকে যাওয়ায় বহুকাঙ্খিত শিরোপাটি হাতছাড়া করলো আয়োজক বাংলাদেশ। এরপরে শ্রীলঙ্কা সিরিজের অবস্থা তো আরও বিষাদে ভরা। চট্টগ্রামে দু্ই ম্যাচ সিরিজের প্রথম টেস্টটি ড্র করলেও ঢাকা টেস্ট হারতে হয়েছে ২১৫ রানের বিশাল ব্যবধানে। প্রথম ইনিংসে ১১০ ও দ্বিতীয় ইনিংসে ১২৩ রানে অলআউট হওয়া ছিলো আরও বিব্রতকর।

পরের মাসে নিদাহাস ট্রফিতে সাকিবহীন টাইগাররা ততটা উজ্জীবিত ছিলো না যতটা ইনজুরি থেকে সেরে উঠে সাকিব দলে যোগ দেওয়ার পরে দেখা গেছে।

তবে মে মাসে দেরাদুনে আফগান সিরিজ কিংবা চলতি ওয়েস্ট ইন্ডিজ সিরিজের প্রথম টেস্টে সাকিব-তামিমের মতো কি প্লেয়াররা দলে থেকেও এমন বিব্রতকর হারে হতবিহ্বল লাল-সবুজের ভক্তরা। আর সে কারণে প্রশ্ন উঠেছে।

সব সিরিজে তাদের খেলেতে হবে কেন? তাদের মতো সিনিয়র খেলোয়াড়দের বিশ্রাম দিয়ে দু’চারটি সিরিজ চালিয়ে নেওয়ার সক্ষমতা আজও কেন বিসিবি অর্জন করতে পারেনি? এমনও হতে পারে ক্লান্তিহীন খেলায় তাদের সামর্থ্য হ্রাস পাচ্ছে। হয়তো দু’একটি সিরিজে বিশ্রাম পেলে তারা আবার ছন্দে ফিরবে। এমন উদাহরণ বিশ্ব ক্রিকেটে অনেক আছে। তবু কেনো সেসব দেখেও দেখে না বিসিবি?

সাকিব, তামিম, মুশফিক, মাহমুদউল্লাহ তাদের ক্যারিয়ারের শেষের দিকে চলে এসেছেন। ওয়ানডে অধিনায়ক মাশরাফি বিন মুর্তজা  টি-টোয়েন্টিকে বিদায় জানিয়েছেন। টেস্টও আর না ফেরার সম্ভাবনাই বেশি।  এসব সিনিয়র ক্রিকেটাররা সরে গেলে বাংলাদেশ ক্রিকেটের ভবিষ্যৎ কী?

এমন প্রশ্নে নির্বাচক হাবিবুল বাশার বিরক্তি নিয়েই বলেন, ‘তামিম ইকবাল ও সাকিব আল হাসান আইকন প্লেয়ার। ওরা কিন্তু পারফর্ম করেই দলে আছে।  এমন না যে নাম বা চেহারা দিয়ে দলে আছে। এদের বিকল্প দেখার জন্য যেটা দরকার ‘এ’ দল ও এইচপি (হাই পারফরম্যান্স) দলের ম্যাচ। যেগুলো আমরা খুব কম পাই। সবচেয়ে বড় কথা হলো আমরা সুযোগটা পাচ্ছি না।  একটি টি-টোয়েন্টিতে দেখতে চেয়েছিলাম তাতে পুরো দেশে হৈ চৈ বেধে গিয়েছিলো। আমার মনে হয় আপনাদেরই ঠিক করতে হবে আপনারা কী চান। আপনি যদি মনে করে দেখেন আমরা ফেব্রুয়ারিতে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে টি টোয়েন্টিতে চারজন প্লেয়ারকে অভিষেক করিয়েছিলাম। সবাই পাগল হয়ে গিয়েছিলে। এটা আমাদের জন্য কখনও কখনও কঠিন হয়ে যায়। ’

টি-টোয়েন্টি ফরম্যাটে বাংলাদেশ এতটাই অপরিপক্ক যে আফগানিস্তানের কাছে হোয়াইটওয়াশ হয়ে ফিরতে  হয়েছে। অথচ এ দলটিই ২০১৬ টে-টোয়েন্টি এশিয়া কাপের ফাইনাল খেলেছিলো। গেল বছর শ্রীলঙ্কাতেও সিরিজ ড্র করেছে।  

অথচ এ দলটিই ওয়েস্ট ইন্ডিজে দুই ম্যাচ সিরিজের প্রথম টেস্ট ম্যাচটি ইনিংস ও ২১৯ রানে হেরে গেছে। তার চেয়েও বিব্রতকর ছিলো তাদের খেলার ধরণ ও সর্বনিম্ন সংগ্রহের রেকর্ড। টেস্টে ৪৩ রান! হাবিবুল বাশারের মতে এর মূল কারণ হলো উইকেট।

তার মতে, অ্যান্টিগায় যে উইকেটে বাংলাদেশ খেলেছে এমন উইকেটে খেলার অভ্যাস দলের। বলা বাহুল্য এমন উইকেট ১২ জুলাই থেকে জ্যামাইকায় শুরু হওয়া সিরিজের টেস্টেও থাকবে। কাজেই দুশ্চিন্তা মুক্ত হতে পারছেন না এই টাইগার নির্বাচক। ‘আমার মনে হয় না সহজ হবে। ওয়েস্ট ইন্ডিয়ানরা জ্যামাইকায়ও একই উইকেট দেবে। আর এমন উইকেটে ভালো করতে হলে কষ্ট করতে হবে। অবশ্যই চ্যালেঞ্জিং হবে। ’

তাই এখানেও ভরসা সেই সাকিব, তামিম, মুশফিক, রিয়াদ। ‘আমাদের যারা খেলছে এরা সবাই প্রমাণিত পারফর্মার। কেউই নতুন না। এরা দেশের বাইরেও এই প্রথম খেলেছে না এবং দেশের বাইরেও তাদের চোখ ধাঁধানো পারফরর্মান্স আছে। দক্ষিণ আফ্রিকা,  নিউজিল্যান্ডে তারা পারফর্ম করেছে। তাদের ফিরে আসতে হবে। এটা আমরা বা অন্য কেউ যেয়ে পারবে না। মাঠের কাজটা তাদেরই করতে হবে। ’

বাংলাদেশ সময়: ১৮৩০ ঘন্টা, ০৯ জুলাই, ২০১৮
এইচএল/এমকেএম

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।