ঢাকা, শনিবার, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৭ শাওয়াল ১৪৪৫

খেলা

বাঁচামরার লড়াইয়ের অপেক্ষায় বাংলাদেশ দল

স্পোর্টস করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৯১৮ ঘণ্টা, অক্টোবর ২৮, ২০১১
বাঁচামরার লড়াইয়ের অপেক্ষায় বাংলাদেশ দল

ঢাকা: একঅর্থে শেষ টেস্ট বাঁচামরার লড়াই। যে দল জিতবে সিরিজ তাদের হবে।

এই অপ্রিয় সত্য কথাকেও মানতে রাজি নন ওয়েস্ট ইন্ডিজ দলের অধিনায়ক ড্যারেন স্যামি। আসলে খেলাকে ওভারে দেখতে রাজি নন তিনি। মুশফিকুর রহিমও হয়তো জীবন বিপন্ন করে টেস্ট জিততে চাইবেন না। খেলাটা যাতে উপভোগ্য হয় সে চেষ্টাও থাকবে। কিন্তু ভেতরে থাকবে জেতার অদম্য বাসনা।

চট্টগ্রাম টেস্ট শেষে মুশফিকুর যেমন বলেছিলেন ঢাকা টেস্টে ওয়েস্ট ইন্ডিজ বেশি চাপে থাকবে, তারপরে বাংলাদেশ দল। হতে পারে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ওয়েস্ট ইন্ডিজের সমৃদ্ধ ইতিহাস আছে। ক্রিকেটের সম্ভান্ত পরিবারের সদস্যও বলা যায় ক্যারিবিয়ান ক্রিকেট দলকে। এসবের কোন মানে থাকবে না যদি টেস্ট হেরে যায়। বরং বাংলাদেশ দল তার ধারাবাহিকতা ধরে রাখতে সমর্থ হবে। ২০০৯ সালে ওয়েস্ট ইন্ডিজকে, ওয়েস্ট ইন্ডিজের মাটিতে ওয়ানডে এবং টেস্ট সিরিজে ধবলধোলাই দিয়েছিলো বাংলাদেশ দল। যদিও ওই দলের চেয়ে বর্তমান ওয়েস্ট ইন্ডিজ অনেক শক্তিশালী। ওয়ানডে ক্রিকেটে তার প্রমাণও দিয়েছে।

তবে সর্বশেষ পারফরমেন্স দেখলে বাংলাদেশ এগিয়ে। শেষ ওয়ানডে জিতেছে, টেস্টে একচ্ছত্র আধিপত্য ছিলো। বাংলাদেশ দল যে ভাবে চেয়েছে সেভাবে খেলতে বাধ্য হয়েছে ওয়েস্ট ইন্ডিজ। ঢাকা টেস্টে তার প্রতিচ্ছবি দেখা নাও যেতে পারে। যদিও সাকিব আল হাসান আগের টেস্টের প্রতিফলন দেখার অপেক্ষায়,“ব্যাটিং, বোলিং, ফিল্ডিং তিন বিভাগেই উন্নতির চেষ্টা থাকবে। চট্টগ্রামে আমরা ব্যাটিং ভালো করেছি। ওখানে অনেকে রান পেলেও বড় রান কেউ করতে পারেনি। ব্যক্তিগতভাবে বড় রান করার লক্ষ্য তো সবার মধ্যেই থাকবে। একজন বড় রান করলে দলের রান অনেক বেশি হবে। প্রথম টেস্টের প্রথম ইনিংসে আমরা ভালো বোলিং করেছি। সেটি ধরে রাখার লক্ষ্য থাকবে। পেস বোলাররা আরেকটু উন্নতি করতে পারে। ফিল্ডিং আমরা খুব একটা ভালো করিনি। সে জায়গায় অনেক উন্নতির সুযোগ থাকবে। ”

প্রথম টেস্টে অনেকগুলো ইতিবাচক দিক আছে। উভয় ইনিংস ঘোষণা। প্রথম ইনিংসে ৯ উইকেটে ৩৫০ রান সংগ্রহ। ওয়েস্ট ইন্ডিজকে ২৪৪ রানে অল-আউট করে দ্বিতীয় ইনিংসে তিন উইকেটে ১১৯ রানের সংগ্রহ। ইলিয়াস সানির সাত উইকেট। শেষপর্যন্ত ওয়েস্ট ইন্ডিজকে ড্র মেনে নিতে বাধ্য করা। ব্যক্তিগত রানগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো সাকিবের ৪০, মুশফিকুর রহিমের ৬৮, তামিম ইকবালের ৫২, শাহরিয়ার নাফিসের ৩২ ও ৫০, নাসির হোসেনের ৩৪ ও নাঈম ইসলামের অপরাজিত ৩৬ রান।

সিরিজ নির্ধারণী টেস্টে ছোট ছোট স্কোরগুলোকে সেঞ্চুরিতে রূপ দিতে পারলে অনেক বড় পুঁজি পেয়ে যাবে। যদিও পরপর দুই টেস্টে ভালো খেলার অভ্যাস খুব একটা নেই বাংলাদেশের। এসবের সমন্বয় করে মুশফিকুর ঢাকা টেস্টে জয়ের স্বপ্ন দেখছেন,“চট্টগ্রামে পাঁচ দিন খেলা হলে হয়তো-বা ফল ভিন্ন হত। আমরা এখন একটা দল হিসেবে অনেক আত্মবিশ্বাসী। ধারাবাহিকভাবে ভালো ক্রিকেট খেলার দিকে আমাদের মনোযোগ। অবশ্যই আমরা জেতার জন্য খেলব। এটি সিরিজের শেষ ম্যাচ। এখানে যারা জিতবে, তারা সিরিজ জিতবে। তো আমরা অবশ্যই চেষ্টা করব শতভাগ ঢেলে দিয়ে টেস্টটা জিততে। ”

মিরপুর শেরেবাংলা স্টেডিয়াম বাংলাদেশের চেয়েও ওয়েস্ট ইন্ডিজকে বেশি দিয়েছে। এই মাঠে বাংলাদেশ দলের বিপক্ষে এপর্যন্ত তিনটি ওয়ানডে খেলে সবগুলোতে জিতেছে। একমাত্র টি-টোয়েন্টিতে হেরেছে। কোন টেস্ট ম্যাচ খেলা হয়নি। সেদিক থেকে বাংলাদেশ-ওয়েস্ট ইন্ডিজের অভিষেক হতে যাচ্ছে মিরপুরে। আগের হিসেব আমলে নিলে ফল ওয়েস্ট ইন্ডিজের পক্ষে যায়। উইকেটের যা চরিত্র তাতেও এগিয়ে থাকবে সফরকারী দল। ক্যারিবিয় অধিনায়ক মনে করেন,“এই মাঠ অন্তত চট্টগ্রামের মতো নয়। এখানে আমাদের অনেকগুলো ভালো স্মৃতি আছে। যতগুলো ম্যাচ খেলেছি একটিতেও হারিনি। চট্টগ্রামে তো আমাদের কোন ক্রিকেটার আগে খেলেনি। এই মাঠ সম্পর্কে আমাদের পরিষ্কার ধারণা আছে। আশা করি ভালোভাবে খেলতে পারবো। ”

বাংলাদেশ অধিনায়ক মাঠ নিয়ে অত ভাবছেনও না। তার মতে,“এখানে নয়, বাইরে গেলেও আমাদের যে উইকেটই দেন, সেখানেই খেলতে হবে। এ কারণে আমরা আমাদের সেরা প্রস্তুতি নেবার দিকেই মনোযোগ দিচ্ছি। সেটি করতে পারলেই আমরা খুশি। নিজেদের কাজের দিকেই আমরা জোর দিচ্ছি। যেমন আগে ব্যাটিং করলে বড় স্কোর করা, আগে বোলিং করলে ওদের মোটামুটি স্কোরে অলআউট করা। এসব দিকে মনোযোগ দিচ্ছি। ”

মিরপুরে বাংলাদেশ শেষ টেস্ট খেলেছে ২০১০ সালের ২০ মার্চ ইংল্যান্ডের বিপক্ষে। খেলা মোটামুটি প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণই ছিলো। দুই ইনিংসেই তামিমের দুটি অর্ধশতক (৮৫ ও ৫২ রান) আছে। সাকিব একটু বেশিই ধারাবাহিক ছিলেন। প্রথম ইনিংসে ৪৯ এবং দ্বিতীয় ইনিংসে ৯৬ রান করেছেন। অল্পের জন্য শতক হয়নি বাঁহাতি এই অলরাউন্ডারের। প্রথম ইনিংসে নাঈম ইসলাম (৫৯ রান) এবং শফিউল ইসলামের (৫৩ রান) অর্ধশতক ছিলো। ওই রানগুলোও প্রেরণা হতে পারে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষ টেস্টে। বিশেষ করে প্রথম ইনিংসের ৪১৯ রানের সংগ্রহ প্রেরণা দায়ক তো অবশ্যই।

এত কিছুর পরেও সব ওলটপালট হয়ে যেতে পারে ওয়েস্ট ইন্ডিজের সবচেয়ে অভিজ্ঞ ব্যাটসম্যান শিবনারায়ন চন্দরপল, লেন্ডল সিমন্স, মারলন স্যামুয়েলস, ক্রেগ ব্রাফেট, কির্ক এডওয়াস এবং ড্যারেন ব্রাভো যদি ব্যাট হাতে জ্বলে উঠেন।

বাংলাদেশ সময়: ১৯১৯ ঘণ্টা, অক্টোবর ২৮, ২০১১

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।