চট্টগ্রাম: লাল বলের খেলাটা বেশ রপ্ত করে ফেলেছে বাংলাদেশ ক্রিকেট দল। দেশের মাঠে খেলা হওয়ায় এতটা নির্ভার না ক্রিকেটের অভিজাত ভার্ষনে অভ্যস্ত হয়ে গেছেন ব্যাটসম্যানরা, সে ব্যাখ্যা ক্রিকেট বোদ্ধারা দেবেন।
মেঘের আনাগোন থাকলেও খেলায় প্রভাব ফেলতে পারেনি। বেঁধে দেওয়া নিয়মের চেয়ে এক ওভার বেশিই খেলানো হয়েছে। জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামের পিচ কতটা ব্যাটিংবান্ধব হলে ৯১ ওভার খেলেছেন স্বাগতিক দলের পাঁচ ব্যাটসম্যান। শাহরিয়ার (২১ রানে অবসর) নাফিসকে ধরলে ছয় জন। যাদের তিনজনই অপরাজিত আছেন। মুশফিকুর রহিম ৬৮ এবং নাঈম ইসলাম ব্যক্তিগত ৮ রান নিয়ে দ্বিতীয় দিন ব্যাট করতে যাবেন।
মুশফিকুরের টস ভাগ্য খুবই ভালো, এপর্যন্ত কোন টস হারেননি। শুক্রবার টসে জিতেই টেস্টে আগে ব্যাটিংয়ের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। ব্যাটসম্যানদের দায়িত্বশীল ব্যাটিংয়ে তার সুফলও পেয়েছে বাংলাদেশ দল। তবে দুই একজনের ব্যক্তিগত পারফরমেন্স আশানুরূপ হয়নি।
সর্বশেষ চার ইনিংসে বড় স্কোর নেই ইমরুল কায়েসের। ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে আত্মবিশ্বাস বাড়িয়ে নেওয়ার অবারিত সুযোগ ছিলো। কিন্তু ব্যক্তিগত ১০ রানে পৌঁছানোর পরই রামপালের বলে ক্যাচ তুলে আউট। দলের সংগ্রহ তখন ২৬ রান। ওয়েস্ট ইন্ডিজের পেস বোলারদের ভয় পাওয়ার মতো বোলিংও হয়নি। নিখাদ ব্যাটিং উইকেটে থিতু হওয়ার চেষ্টা করলে আউট করা সহজ ছিলো না। রামপলের অফসাইডে ফেলা বল ব্যাটের কানায় লেগে সোজা উইকেটরক্ষকের গ্লাভসে।
তিন নম্বরে ব্যাট করতে নেমে শাহরিয়ার নাফিস খুবই প্রাণবন্ত ছিলেন। অফ সাইডে ভালো বল পেলেই মেরে খেলেছেন। কিন্তু ফিদেল এডওয়ার্ডের একটি বল লাফিয়ে উঠলে সোজা মুখের ওপরে আঘাত হানে। হেলমেটের গ্রিল বাড়ি খায় কপালে এবং নাক দিয়ে রক্তক্ষরণ হতে থাকলে, মাঠ থেকে তাকে তুলে (অবসর) নেওয়া হয়। ১৮ বলে ২১ রান নিয়ে অপরাজিত থাকা এই বাঁহাতি ব্যাটসম্যান সুযোগ মতো উইকেটে ফিরবেন।
অর্ধশতক হওয়ার পর পাগলাঘোড়ার মতো ছুটতে গিয়ে অপঘাতে মৃত্যু তামিম ইকবালের। অথচ খেলার শুরু থেকে উইকেট আগলে রাখতে কি ধৈর্য্যই না দেখিয়েছেন বাঁহাতি ব্যাটসম্যান। ৫২ রানের ইনিংসের জন্য ১৪১ বল মোকাবেলা করে শেষপর্যন্ত তিনি আউট হলেন অনিয়মিত বোলার মারলন স্যামুয়েলসের বলে।
সেশন ধরে গেলে প্রথম সেশনে ঝুঁকিপূর্ণ কোন শটই খেলেননি। বরং তার মতো মারকাটারি ব্যাটসম্যান অনেকগুলো শটপিচ বল অফসাইড দিয়ে বেরিয়ে যেতে দিয়েছেন। টেস্ট বা ওয়ানডে কোন ধরণের ক্রিকেটেই সচরাচর তামিমকে এভাবে ব্যাট করতে দেখা যায় না। তিনি বরং ব্যাট চালিয়ে খেলতে পছন্দ করেন এবং খেলেনও। দিনের তিন সেশনের মধ্যে দেড় সেশন ব্যাট করলেন তামিম।
ইনিংসের শুরুটা যেভাবে করেছিলেন বাঁহাতি এই ব্যাটসম্যান একটু সতর্ক থাকলে হয়তো নিজের শহরের ছোট্ট ছেলেটির আবদার মেটাতে পারতেন। বৃহস্পতিবার অনুশীলন সেরে তিনি যখন সাজঘরে ফিরছিলেন, পাশ থেকে এক কিশোর জানতে চইলেন ‘তামিম ভাই এই মাঠে আপনার সেঞ্চুরি দেখবো কবে’? তামিমের উত্তর ছিলো জানি না। অনাগত বিষয় জানার কথাও নয়। একটি অনাকাঙ্খিত শট খেলে তামিম ছেলেটির অপেক্ষার পালা যেমন বাড়ালেন, তেমনি নিজের প্রত্যাশিত লক্ষ্য অর্জনেরও।
নিজের মাঠ আগে যে পাঁচটি টেস্ট খেলেছেন তাতে সর্বোচ্চ ইনিংস ৮৬ রানের, ২০১০ সালের মার্চে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে। এছাড়া ভারতের বিপক্ষে ৩১ এবং ৫২ রানের দুটি ইনিংসও আছে। টেস্ট ক্রিকেটে দেশের সবচেয়ে ধারাবাহিক এই ব্যাটসম্যান চারটি শতক এবং নয়টি অর্ধশতক করেছেন। ২০১০ সালে ইংল্যান্ড সফরে পরপর দুই টেস্টে সেঞ্চুরি। ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষেও একটি শতক (১২৮ রান) আছে, ২০০৯ সালে কিংসটাউনে। সে জন্যই তো তার কাছে দেশের মানুয়ের প্রত্যাশা একটু বেশি।
রকিবুল হাসানকে টেস্টে ফেরানো হয়েছে প্রায় দুই বছর পর। প্রত্যাবর্তনের টেস্টে ভালোই খেলছিলেন। সাবলীল বলতে যা বোঝায় ঠিক তাই। কিন্তু ৪১ রান হতে ড্যারেন স্যামির একটি বলে এলবিডব্লু হয়ে গেলেন। সোজা সোজা বল ফেলে টোপ দিচ্ছিলেন ক্যারিবিয় অধিনায়ক। সফলও হন রকিবুলকে ফিরিয়ে দিয়ে। ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে রকিবুলের এটি দ্বিতীয় সর্বোচ্চ টেস্ট রান। ২০০৯ সালে ৬৫ রানের একটি ইনিংস খেলেছিলেন। সেটিই তার আট টেস্টের একমাত্র অর্ধশতক।
২০১০ সালে এই চট্টগ্রামে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে টেস্ট শুরুর আগের দিন অভিমান থেকে আচমকা অবসরের ঘোষণা দেন রকিবুল। অভিমান কেটে গেলে তাকে ক্রিকেটে ফিরতে হয় তিন মাসের নিষেধাজ্ঞা কাটিয়ে। ইংল্যান্ড সফরে ওয়ানেড খেললেও চোটের পড়ায় টেস্ট ম্যাচ খেলা হয়নি। আর সর্বশেষ জিম্বাবুয়ে সফরে দলে জায়গা হয়নি।
পঞ্চম উইকেটে অধিনায়ক মুশফিকুর রহিম এবং সাকিব আল হাসানের মধ্যে যে ৭৯ রানের জুটি হয়েছে তার মধ্যে ৪০ রান সাকিবের। থিতু হয়ে যাওয়ার পর তারা দুই জন যে ভাবে খেলছিলেন তাতে শেষ সেশনটা অনায়াশে পার করে দেওয়া যেতো। কিন্তু ওই যে অনিয়মিত বোলার স্যামুয়েলসের বল খেলতে গিয়ে আউট হয়ে গেলেন সাকিব।
বাংলাদেশ সময়: ১৮৪৬ ঘণ্টা, অক্টোবর ২১, ২০১১