চট্টগ্রাম: টেস্ট ক্রিকেটে বাংলাদেশের প্রত্যাশা কি? উত্তর ভালো খেলা। ওয়ানডে বা টি-টোয়েন্টির মতো সহজে বলে দেওয়া যায় না টেস্টে ওয়েস্ট ইন্ডিজকে হারিয়ে দেবে বাংলাদেশ দল।
বাংলাদেশ অধিনায়ক শুধু ভালো খেলার আশা দেখালেন এবং প্রতিশ্রুতি দিলেন। তাও দলের সবাই যদি প্রত্যাশিত খেলাটা খেলতে পারে। “টেস্টে এখন পর্যন্ত এমন দল হয়ে উঠতে পারিনি যে ওয়েস্ট ইন্ডিজকে হারিয়ে দেবো বলতে পারি। ”
যদিও দুই বছর আগে ওয়েস্ট ইন্ডিজের মাটিতে ক্যারিবিয়দের টেস্টে ধবলধোলাই দিয়ে এসেছে বাংলাদেশ দল। পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে অপ্রত্যাশিত ফল পেয়েছিলেন সাকিব আল হাসানরা। কিন্তু ওয়েস্ট ইন্ডিজের বর্তমান দল আগের চেয়ে অনেক পরিণত এবং গোছানো। তাদের পেস বোলিংয়ের বিপরীতে টানা ১৫ সেশনে পাল্লা দেওয়া সহজ কথা নয়।
জিম্বাবুয়ে সফরে সর্বশেষ যে টেস্ট খেলেছে বাংলাদেশ দল, তার ফলাফল নেতিবাচক। মাজুল দলের কাছে হেরে গিয়েছে একধাপ ওপরে থাকা দলটি। মূলত জিম্বাবুয়ে পেস বোলিংয়ের সামনে মুখ থুবড়ে পড়েছিলো জাতীয় দলের ব্যাটিং। চট্টগ্রাম জহুর আহমেদ স্টেডিয়ামে শুক্রবার থেকে যাদের বিপক্ষে খেলবে স্বাগতিক শিবির, তাদেরও মূল শক্তি পেস বোলিংয়ে। বাংলাদেশ অধিনায়কের ব্যাখ্যা অনেক বাস্তব সম্মত,“ওদের (ওয়েস্ট ইন্ডিজ) পেস আক্রমণ অনেক শক্তিশালী। স্পিন আক্রমণও খারাপ না। বিশুর মতো বোলার আছে ওদের। কিন্তু আমার মনে হয়, ব্যাটসম্যানরা যদি নিজেদের খেলা খেলতে পারে এবং চ্যালেঞ্জটা নিতে পারে, তাহলে আশা করি খুব একটা কঠিন হবে না। এমন বোলিং আক্রমণের বিপক্ষে খেলা ব্যাটসম্যানেেদর জন্য নতুন অভিজ্ঞতা। প্রথমবারের মতো এমন বোলিং আক্রমণের বিপক্ষে খেলব। ”
যে দলের পেসারদের ওয়ানডেতে খেলেছেন স্বাগতিক ক্রিকেটাররা, তাদেরকে টেস্টে বেশি বেশি ভয় পাওয়ার কারণ অন্য খানে। একজন বোলার টেস্টে ওভারের পর ওভার বল করার সুযোগ পান। দুইটি বাউন্সার দিতে পারেন। শট পিচ বল দিয়ে ব্যাটসম্যানদের গায়ে কাঁপন ধরানোর সুযোগ থাকে। অফ সাইডে ওভারের পর ওভার বল ফেলে ফাঁদে ফেলতে পারেন। কেমার রোচ, দিনেশ রামদিন এবং রবি রামপালের মতো ফাস্ট বোলার যে দলে খেলেন, সে দলটিকে টেস্ট ক্রিকেটে সমীহ না করে উপায় নেই।
তারওপর বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানরা শট বলে অনভ্যস্থ। দেশের সবগুলো উইকেটই তো হয় স্পিন নির্ভর। জাতীয় দলে ওই মানের পেসার না থাকায় খেলার চর্চাও হয় না। ফলে খেলতে নেমে অফ সাইডের বলে খোঁচা মেরে স্লিপে ক্যাচ দিয়ে ফিরে যান। ওয়েস্ট ইন্ডিজ কোচের বিষয়টি অবগত থাকায় বৃহস্পতিবার স্লিপে ক্যাচ প্র্যাকটিস করালেন তার খেলোয়াড়দের।
তবে উইকেট যদি বাংলাদেশ দলের অনুকূলে হয় তাহলে খেলা অন্যরকম হতে পারে। বাঁহাতি স্পিনার সাকিব আল হাসান, ইলিয়াস সানি বা সোহরাওয়ার্দী সবকিছু ভোঁজবাজির মতো বদলে দিলেও দিতে পারেন। পেস বোলিংটাও বর্তমানে মন্দ নয়। রুবেল হোসেন এবং সাহাদাত হোসেন আগের চেয়ে অনেক পরিণত। সব কিছুর পরে বলতে হয় টেস্টে প্রতিদ্বন্দ্বিতা গড়তে হলে প্রতিটি বিভাগে ভালো খেলতে হবে বাংলাদেশ দলকে।
ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে ১০ বছরে ছয়টি টেস্ট খেলেছে বাংলাদেশ দল। প্রথম দুই সিরিজ হয়েছে ২০০২ সালে বাংলাদেশে। দুই বছর পর ২০০৪ সালে ওয়েস্ট ইন্ডিজের মাটিতে। ওই সফরে দারুণ কিছু সাফল্য আছে বাংলাদেশের। হাবিবুল বাশার, মোহাম্মদ রফিক এবং খালেদ মাসুদ পাইল সেঞ্চুরি করেছিলেন। সিরিজের প্রথম টেস্ট ড্র হয়েছিলো। অবশ্য পরের টেস্ট বলে কয়ে জিতেছিলেন চার্লস ব্রায়ন লারা। সর্বশেষ ২০০৯ সালে ভঙ্গুর ওয়েস্ট ইন্ডিজকে ধবলধোলাই দিয়েছে সফলকারী দল। পরিসংখ্যানে এখনো ওয়েস্ট ইন্ডিজ এগিয়ে।
একদিক থেকে ওয়েস্ট ইন্ডিজের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ টেস্ট হবে চট্টগ্রামে। জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামে একটি ওয়ানডে ছাড়া কিছুই খেলেনি দলটি। কন্ডিশনের দিক থেকে তারা পিছিয়ে।
বাংলাদেশ সময়: ১৮৫০ ঘণ্টা, অক্টোবর ২০, ২০১১