ঢাকা, শুক্রবার, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫

খেলা

সাকিবকে নিয়ে উভয়সঙ্কটে বিসিবি

স্পোর্টস করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২০১৯ ঘণ্টা, জুলাই ২১, ২০১১
সাকিবকে নিয়ে উভয়সঙ্কটে বিসিবি

ঢাকা: জাতীয় দলের অধিনায়ক সাকিব আল হাসানকে নিয়ে উভয়সঙ্কটে পড়েছে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি)। শাসন-বারণ করতে পারছে না অপরিহার্য ক্রিকেটার হওয়ায়।

আবার আদর করে কাছেও টেনে নিতে পারছে না।

আদবকায়দার ধার-ধারেন না সাকিব। মতের বিরুদ্ধে গেলে যাচ্ছে তাই বলে দিতে পারেন। ইংলিশ কাউন্টি থেকে ফিরে জাতীয় দল নির্বাচন প্রসঙ্গে মন্তব্য করে হইচই ফেলে দিয়েছেন। অগ্রজ অধিনায়ক আকরাম খান, মিনহাজুল আবেদীন নান্নু এবং হাবিবুল বাশারের প্রতি বিন্দুমাত্র শ্রদ্ধাবোধ ছিলো না তাতে। অভিযোগ করেছেন, ‘জিম্বাবুয়ে সফরের জন্য জাতীয় দল নির্বাচন করার পর তাকে জানানো হয়েছে। আগে থেকে কিছু বলা হয়নি। ’

সত্য হলো প্রধান নির্বাচক আকরাম খান ক্রিকেট পরিচালনা বিভাগের ম্যানেজার সাব্বির খান এবং বাকি দুই নির্বাচকের উপস্থিতিতে মোবাইলফোনে অধিনায়ক সাকিবের মতামত নিয়েছেন। নির্বাচকদের দল নিয়ে আপত্তি করেননি তিনি। অথচ দেশে ফেরার পর চোখ উল্টে ফেলেন অধিনায়ক।

ঘটনার রেশ কাটতে না কাটতে সমালোচনার জন্ম দিয়েছেন জাতীয় দলের অনুশীলনে অনুপস্থিত থেকে। প্রধান কোচ স্টুয়ার্ট ল জাতীয় দলের দায়িত্ব বুঝে নিলে টানা দুইদিন অনুশীলনে নেই অধিনায়ক। বিসিবি থেকে ছুটি নেওয়ার প্রয়োজন পর্যন্ত মনে করেননি। বিসিবি থেকে সাকিবের খোঁজ পড়লে বৃহস্পতিবার সকালে ক্রিকেট পরিচালনা বিভাগের চেয়ারম্যান এনায়েত হোসেনের মোবাইলফোনে এসএমএস করে জানান,“বিশ্রাম এবং ব্যক্তিগত কাজের জন্য ২৩ জুলাই পর্যন্ত আমার ছুটি প্রয়োজন। ”

ক্রিকেট পরিচালনা বিভাগের চেয়ারম্যান আপত্তি করেননি। সাদা মনে অধিনায়ককে বলে দিয়েছেন ছুটির আবেদনপত্র দেওয়ার জন্য। ঘটনা চাওড় হয়ে যাওয়ায় সাকিবকে তলব করেন বিসিবি প্রধান নির্বাহী মঞ্জুর আহমেদ। বৃহস্পতিবার বিকেল পর্যন্ত প্রধান নির্বাহীর সঙ্গে দেখা করেননি তিনি। তবে ২৩ জুলাই পর্যন্ত ছুটি চেয়ে একটি আবেদনপত্র ক্রিকেট পরিচালনা বিভাগে লোকমারফত পাঠিয়ে দেন। প্রধান নির্বাহী ২১ জুলাই পর্যন্ত ছুটি মঞ্জুর করেন। যদিও শুক্রবার সকাল সাড়ে আটটায় প্রধান কোচ ল’র কাছে রিপোর্ট করে ছুটি নিয়ে চলে যাবেন। ক্রিকেট পরিচালনা বিভাগের ম্যানেজার সাব্বির খান জানান,“২৩ জুলাই পর্যন্ত ছুটি চেয়ে আবেদন করেছে। কিন্তু সিইও ২২ জুলাই পর্যন্ত ছুটি মঞ্জুর করেন। যেহেতু শুক্রবার সিইও’র সঙ্গে দেখা করতে হবে। সেজন্য ২১ জুলাই পর্যন্ত ছুটি নিচ্ছে। শুক্রবার বিসিবিতে এসে কোচের কাছে রিপোর্ট করে ছুটি নিয়ে যাবে হয়তো। ”

ইংলিশ কাউন্টি ক্রিকেট খেলে ইংল্যান্ড থেকে ১৭ জুলাই দেশে ফিরেছেন অধিনায়ক এবং সহ-অধিনায়ক। প্রধান কোচ ল এবং ফিল্ডিং কোচ জেসন সুইফট ঢাকায় এসেছেন পরেরদিন। জাতীয় দলের দায়িত্ব বুঝে নেন ২০ জুলাই। দায়িত্ব নেওয়ার পর সবার দেখা পেলেও অধিনায়কের টিকির নাগাল পর্যন্ত পাননি ল। সহ-অধিনায়ক তামিম অবশ্য কুঁচকিতে চোট পাওয়ায় আবেদন করে ছুটি নিয়েছেন। এরপরেও অনুশীলনের সময় মাঠে উপস্থিত হয়েছেন গত দুইদিন। কিন্তু অধিনায়ক ছুটি না নিয়ে বিজ্ঞাপনের শুটিং করেছেন। নির্ভরযোগ্য সূত্রে জানা গেছে, শক্তি দইয়ের বিজ্ঞাপনের মডেল হচ্ছেন সাকিব। দুইদিন ধরে গাজীপুরের হোতাপাড়ায় বিজ্ঞাপনের শুটিং নিয়ে ব্যস্ত ছিলেন। অথচ তিনি ছুটির আবেদন করেন বিশ্রাম চেয়ে!  

বিষয়টি খতিয়ে দেখতে খোঁজখবর করছে বিসিবি। ঘটনার সত্যতা পাওয়া গেলে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দেওয়া হতে পারে বলে জানিয়েছেন নির্ভরযোগ্য একজন কর্মকর্তা। শেষপর্যন্ত তা হবে কি না বলা মুশকিল। এর আগেও অনেক অনিয়ম করে পার পেয়েছেন অধিনায়ক। মুখে মুখে বলা হয়েছে চাছাছোলা কথাবর্তা থেকে বিরত থাকার জন্য। এবার পরিস্থিতি ভিন্ন।

বিসিবি সিইও মঞ্জুর আহমেদ অবশ্য বলেছেন,“আমরা বিষয়টি আগে যাচাই করে দেখবো। পরে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। ”

ক্রিকেট পরিচালনা বিভাগের চেয়ারম্যান এবং সিইওকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে সাকিবের সঙ্গে আলোচনা করার জন্য। জিম্বাবুয়ে সফরের আগে অনুশীলনে অধিনায়কের অনুপস্থিতিকে ভালো চোখে দেখছেন না সিইও। তিনি বলেন,“যখন নতুন কোচ দায়িত্ব নিয়েছেন তখন অধিনায়কের উপস্থিতি খুবই জরুরি ছিলো। ”

এদিকে বিসিবি মিডিয়া ও কমিউনিকেশন বিভাগের চেয়ারম্যান জালাল ইউনুস সাকিবের বর্তমান আচরণে অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন। তার মতে,“দেশের স্বার্থ সবার আগে। সে যদি শুটিংয়ের জন্য অনুশীলনে অনুপস্থিত থাকে তাহলে অন্যায় হয়েছে। নির্বাচকদের নিয়ে মন্তব্য করার আগে আলোচনা করতে পারতো। জিম্বাবুয়ে সফরটা আমাদের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। অধিনায়ককে সেটা বুঝতে হবে। সফরের আগে অনেক কষ্টে কোচিং স্টাফ জোগার করেছি। ল’কে বিশ্রাম নেওয়ার সুযোগ দেওয়া হয়নি। সে তো ইংল্যান্ড থেকে সরাসরি জিম্বাবুয়েতে যেতে চেয়েছিলেন। তাকে আমরা অনুরোধ করে আগে নিয়ে এসেছে। যখন কোচিং স্টাফ সবাই আছেন। তখন অধিনায়ক নেই। ”

সাকিবের আচরণের তীব্র নিন্দা করেছেন অন্য পরিচালকরাও। কেউ কেউ বলেছেন,“জাতীয় দলের জন্যই আজ সে সাকিব। আইপিএল এবং কাউন্টিতে সে নিজে খেলতে গেছে। সেখান থেকে অর্থ উপার্জন করেছে। বিসিবি তো তাকে পাঠায়নি। বিসিব এনওসি না দিলে কোন পর্যায়ের ক্রিকেট খেলতে পারবে না সাকিব। ক্রিকেটার পরিচায়টাই থাকবে না। ”

বাংলাদেশ সময়: ২০১০ ঘণ্টা, জুলাই ২১, ২০১১

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।