ঢাকা, শুক্রবার, ৬ বৈশাখ ১৪৩১, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫

খেলা

বাংলাদেশি গলফার সিদ্দিকের ব্রুনাই ওপেন জয়

স্পোর্টস ডেস্ক | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৬৫০ ঘণ্টা, আগস্ট ১, ২০১০
বাংলাদেশি গলফার সিদ্দিকের ব্রুনাই ওপেন জয়

ব্রুনাই: পেশাদার গলফে নতুন মাইলফলক স্পর্শ করলেন বাংলাদেশি গলফার সিদ্দিকুর রহমান। এশিয়ান অভিযানে প্রথমবারের মতো ব্রুনাই ওপেন ট্রফি জিতে দেশের জন্য বয়ে আনলেন বিরল সম্মান।



ব্রুনাই এম্পায়ার হোটেল এন্ড কান্ট্রি কাব মাঠে রোববার দক্ষিণ আফ্রিকার জোবে ক্রুগারকে প্লে-অফ ম্যাচে হারিয়ে এই সাফল্য তুলে নেন সিদ্দিক।

তিন লাখ ডলারের এই টুর্নামেন্টে সিদ্দিক পাবেন ৪৮ হাজার ৬০০ মার্কিন ডলার। বাংলাদেশি মুদ্রায় প্রায় ৩৫ লাখ টাকা। দেশের ক্রীড়াঙ্গনের ইতিহাসে এ যাবৎ কালের সবচেয়ে বেশি ব্যক্তিগত উপার্জন। সঙ্গে পেশাদার গলফে প্রথম কোন সাফল্য।

চার রাউন্ডের খেলায় অসাধারণ কৃতিত্ব দেখিয়েছেন বাংলাদেশি তরুণ। মোট ২৮৪ স্ট্রোকের মধ্যে ১৬টি শট কম নিয়ে ক্রুগারের সঙ্গে যৌথভাবে শীর্ষে পৌঁছান সিদ্দিক।

নাটকের শেষদৃশ্য তখনো অজানা। স্নায়ু চাপ হুহু করে বেড়ে যাওয়ার কথা। অভিজ্ঞ এক গলফারের বিপরীতে সাহসের পরীক্ষা দিতে হবে পেশাদার অঙ্গনের নবীন গলফারকে। সিদ্দিক স্নায়ু ঠিক রাখলেন। প্লে-অফে এক হোলের খেলায় চার স্ট্রোকে বল পাঠিয়ে দেন অভিষ্ঠ লক্ষ্যে। অর্থাৎ চারটি শট নিয়ে বল গর্তে পাঠান সিদ্দিক। প্রতিপক্ষ ক্রুগার একশট বেশি নেওয়ায় চ্যাম্পিয়ন হন বাংলাদেশি গলফার।

ব্রুনাইয়ের মাঠে সর্বোচ্চ ৭১ স্ট্রোকে ১৮ হোল পূর্ণ করতে হয়। প্রথম রাউন্ডে ৬৪ স্ট্রোকে সবগুলো হোলে বল পাঠান সিদ্দিক। দ্বিতীয় রাউন্ডে সমান সংখ্যক হোলে ৬৭ স্ট্রোকে বল পাঠন। তৃতীয় রাউন্ডে ৭০ স্ট্রোক নিয়ে চক্র পূরণ করেন। রোববার শেষ রাউন্ডে ১৮ হোলে বল পাঠাতে স্ট্রোক খেলেন ৬৭ বার।

২৬৯ স্ট্রোক নিয়ে টুর্নামেন্টের তৃতীয় সেরা হয়েছেন ফিলিপাইনের জুভিক পাগুনসান। তবে গতবারের রানারআপ ভারতের গগনজিত ভ্লুার এবার ২৭০ স্ট্রোক নিয়ে চার রাউন্ড শেষ করায় চতুর্থ স্থান পেয়েছেন।    

সাফল্যের প্রতিক্রিয়ায় সিদ্দিক বলেন,“প্রথম বাংলাদেশি হিসেবে এশিয়ান টুরে শিরোপা জিতেছি। এর আনন্দ বলে বোঝানোর নয়। আমার কাছে এখনো অবিশ্বাস্য মনে হচ্ছে। ”

তার মতে,“আমি আশা করি এই বিজয় বাংলাদেশের মানুষের মধ্যে গলফের প্রতি আগ্রহ বাড়াবে। এটা আমার এবং দেশের জন্য অনেক বড় সাফল্য। ”

বলবয় থেকে গলফের সুপার হিরো হয়ে উঠেছেন সিদ্দিক। পেছনের গল্পটা অনেক সংগ্রামের। স্কুলের বেতনের টাকা যোগাতে সেই বাল্য বয়সে কুর্মিটোলা গলফ কাবে বলবয়ের কাজ নেন।   সাহেবদের বল কুড়ানি সিদ্দিক একসময় কেডি হিসেবে দায়িত্ব পান। গলফ কাব বয়ে নেওয়াই ছিলো তার কাজ। সেই থেকে বিশ্বের অন্যতম অভিজাত খেলাটি শেখার সুযোগ আসে।

কিশোর সিদ্দিকের খেলা দেখে মুগ্ধ না হয়ে পারেননি কুর্মিটোলা গলফ কাবের সাহেবরা। সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেন। মেধা খাটিয়ে হাটি হাটি পা পা করে এগিয়ে যান। কুর্মিটোলা কাবের হয়ে ২০০৪ সালে প্রথম জাতীয় চ্যাম্পিয়ন হন। এরপর অপেশাদার জগতে জাতীয় এবং আন্তর্জাতিক মিলিয়ে ৩০টি টুর্নামেন্টে অংশ নিয়ে সাফল্য তুলে নেন ১৭ বার।

তিনিই প্রথম গলফার অপেশাদার টুর্নামেন্টে দক্ষিণ এশিয়ার সবগুলো দেশে শিরোপা জেতেন। সাফল্যের ধারায় থেকে পেশাদার জগতের দিকে দৃষ্টি দেন। পেশাদার গলফে নাম লেখানোর আগে অস্ট্রেলিয়া থেকে প্রশিক্ষণ নেন। স্কলারশিপ পেয়েও ভিসা জটিলতায় অস্ট্রেলিয়ায় যাওয়ার সুযোগ হারাতে বসেছিলেন। শেষে বাংলাদেশ অলিম্পিক অ্যাসোসিয়েশনের সহযোগিতায় ভিসাও পেয়ে যান। অবারিত সম্ভাবনার দ্বার খুলে যায় সিদ্দিকের সামনে।

২০০৭ সালে পেশাদার গলফ জগতে ঢোকার যোগ্যতা অর্জন করেন। ২০০৮ সালে পেশাদার অঙ্গনে বিচরণ শুরু। ভারতীয় সার্কিটে চারটি মেজর টুর্নামেন্ট জেতেন গত দুই বছরে। এশিয়ান পেশাদার সার্কিটে খেলার সুযোগ হয় ২০০৯ সালে। এবার তো সাফল্যের মঞ্চে।


২০ নভেম্বর ১৯৮৪ সালে সিদ্দিকের জন্ম। চার ভায়ের মধ্যে তিনি তৃতীয়। বাবা-মায়ের অভাবের সংসারে অনেক কষ্টে বেড়ে উঠেন ২৬ বছর বয়সী এই তরুণ।

বাংলাদেশ সময়: ১৮০২ ঘন্টা, জুলাই ২০১০

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।