ঢাকা, শুক্রবার, ৬ বৈশাখ ১৪৩১, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫

খেলা

পরিচালকদের রোষানলে জাতীয় দল ব্যবস্থাপনা কমিটি

স্পোর্টস করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৫৫৯ ঘণ্টা, জুলাই ৩১, ২০১০
পরিচালকদের রোষানলে জাতীয় দল ব্যবস্থাপনা কমিটি

ঢাকা: বিশ্বকাপ ঘড়ির পেন্ডুলাম দুলছে। ঘন্টা ধ্বনি বেজেই যাচ্ছে।

শুধু শব্দটা বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি) কর্মকর্তাদের কর্ণকূহর পর্যন্ত পৌঁছাতে পারছে না। সময়ের পাকে পড়ে কর্মতৎপর মানুষগুলোও আগ্রহ হারাতে বসেছে। যার ক্ষতির শিকার হচ্ছে বাংলাদেশের ক্রিকেট। মূলত জাতীয় দল।

ছয় মাস পরেই যাদেরকে বিশ্বমঞ্চে পরীক্ষা দিতে হবে। সেই জাতীয় দলের ক্রিকেটারদের নিয়ে এখনো তেমন পরিকল্পনা নেই। দল গোছানোর উদ্যোগ থেমে আছে। ব্যহত হচ্ছে জাতীয় দল নির্বাচক এবং ব্যবস্থাপনা কমিটির কর্মকান্ড।

অথচ অতীত দেখলে এসময়ে জাতীয় দলের বিশ্বকাপ প্রস্তুতি শুরু হয়ে যাওয়ার কথা। ২০০৭ সালে ওয়েস্ট ইন্ডিজ বিশ্বকাপের আগে যেমনটি হয়েছিলো। হাবিবুল বাশারের নেতৃত্বে জাতীয় দলের খেলোয়াড়দের মানোন্নয়নে একযোগে কাজ করেছিলেন তখনকার বোর্ডের কর্মকর্তারা। এখন দেখা যাচ্ছে বিপরীত চিত্র। কর্মচারীদের সঙ্গে দূরত্ব বাড়ছে বর্তমান পরিচালনা পর্ষদ কর্মকর্তাদের।

বিশেষ করে জাতীয় দল নির্বাচক এবং দল ব্যবস্থাপনা কমিটির কর্মকর্তারা ক্ষোভে ফুঁসছেন। ক্ষোভের সেই আগুনে ঘি ঢেলে দিচ্ছেন পরিচালকরাই। নির্বাচকদের সঙ্গে পরিচালকদের দূরত্ব তৈরি হয়েছে বেশ আগে। সেটাকে বৃহস্পতিবারের কার্যনির্বাহী কমিটির সভায় উসকে দেওয়া হয়েছে নির্বাচকদের মেয়াদ তিন মাস করায়। সেটা আরো ভয়াবহ রূপ নিতে পারে শিগগিরই।

ওই ঘটনা থেকেই কাঁদা ছোড়াছুড়ি শুরু। পরিচালকরা বলছেন নির্বাচকদের কাজের মূল্যায়নের পরই বিশ্বকাপ পর্যন্ত তাদেরকে দায়িত্ব দেওয়া না দেওয়ার বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।

ক্রিকেট পরিচালনা কমিটির প্রধান এনায়েত হোসেন সিরাজ শনিবার বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম.বিডিকে জানান, বোর্ডের সিদ্ধান্ত মেনে নির্বাচকদের সঙ্গে আলোচনায় বসবে মূল্যায়ন কমিটি। আলোচনা ফলোপ্রসু হলেই পরবর্তী মেয়াদে দায়িত্ব দেওয়া হবে তিন নির্বাচক রফিকুল আলম (প্রধান নির্বাচক), আকরাম খান ও জাহিদ রাজ্জাক মাসুমকে।

নির্বাচক মূল্যায়ন কমিটির প্রধান সিরাজ বলেন,“বিশ্বকাপ ছোট বিষয় নয়। নির্বাচকরা কিসের ভিত্তিতে জাতীয় দলের জন্য খেলোয়াড় বাছাই করবে সেটা অবশ্যই আমাদেরকে জানতে হবে। কোন মাপকাঠিতে অতীতে দল গড়েছে সেটাও যুক্তিদিয়ে বোঝাতে হবে। সেখানে কোন খাদ থাকলে আমরা নতুন করে ভাববো। ”

মাঠের পারফরমেন্সে নির্বাচকদের দায় কোথায় এমন প্রশ্নের উত্তরে সিরাজ বলেন,“দিনের পর দিন ব্যর্থ হলে নিশ্চয়ই কোন ক্রিকেটার দলে থাকতে পারে না। কিন্তু আমাদের দলে থাকছে। নতুন কোন ক্রিকেটারকে খুঁজে আনা হচ্ছে না?”

ইউরোপ সফরে জাতীয় দলের ব্যর্থতায় নির্বাচকদের ওপর অনাস্থা তৈরি হয়েছে বলে জানান নামপ্রকাশে অনিচ্ছুক নির্বাচকদের মূল্যায়ন কমিটির আরেক পরিচালক। তিনি অভিযোগ এনেছেন, ব্যক্তিগত পছন্দ অপছন্দের ওপর জাতীয় দলে অনেকেই সুযোগ পাচ্ছে। দিনের পর দিন ব্যর্থ হয়েও একাদশে থাকছেন বিশেষ কয়েকজন ক্রিকেটার। এমনকি ব্যর্থতার পরেও ক্রিকেটারদের সতর্ক করেন না নির্বাচকরা। এ অবস্থায় নির্বাচকদের সঙ্গে কথা বলা ছাড়া উপায় নেই। অবশ্যই তাদের পারফরমেন্স যাচাই করে দেখার সময় এসেগেছে।  

এর উত্তর নির্বাচকদের কাছেও আছে। আকরাম খান বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম.বিডিকে বলেন,“জাতীয় দল দেশের বাইরে থাকে আমরা ঢাকায় বসে তাদের পারফরমেন্স মূল্যায়ন করি। শুধু রান আর বোলিং দেখে সবকিছু মূল্যায়ন করা যায় না। ক্রিকেটারদের সঙ্গে থাকতে হয়। সাজঘরের পরিস্থিতি দেখতে হয়। দলের ভেতরে দলাদলি আছে কি না তা পর্যবেক্ষণ করতে হয়। সব দেখার পরই জাতীয় দল নির্বাচনের কাজ ভাল হয়। কিন্তু আমাদেরকে অন্ধকারে রেখে সুপার দল বানাতে বললেই হবে না। ”

নামপ্রকাশে অনিচ্ছুক এক নির্বাচক বলেন,“আমরা নামে মাত্র জাতীয় দলের ক্রিকেটার নির্বাচন করি। সবইতো করেন পরিচালকরা। ”

এখানেই শেষ নয় নির্বাচক এবং জাতীয় দলের পারফরমেন্স মূল্যায়ন কমিটি দাবি করছে রফিকুল ইসলামের নেতৃত্বধীন কমিটির তিনজনের মধ্যে মাঠে গিয়ে খেলা দেখার অভ্যাস নেই। তারা মিরপুর শেরেবাংলা জাতীয় স্টেডিয়ামে থাকতেই বেশি পছন্দ করেন। ফলে প্রতিভাবান ক্রিকেটার খুঁজে বের করতে পারছে না। ”

জাতীয় দল ব্যবস্থাপনা কমিটিরও সমালোচান হচ্ছে। একাদশ নির্বাচনে এবং মাঠে ও মাঠের বাইরে ক্রিকেটারদের যথাযথভাবে চালাতে পারছে না ব্যবস্থাপনা কমিটি বলে মনে করেন পরিচালকরা।

বাংলাদেশ সময়: ১৭১৩, জুলাই ৩১, ২০১০



বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।