ঢাকা, শুক্রবার, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫

খেলা

শচীনকে ভারতের বিশ্বকাপ উপহার

<img src=http://www.banglanews24.com/images/imgAll/2011March/SM/Sekandar-Ali-sm.jpg align=left height=80>সেকান্দার আলী, ওয়াংখেড়ে স্টেডিয়াম, মুম্বাই | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০১০১ ঘণ্টা, এপ্রিল ৩, ২০১১
শচীনকে ভারতের বিশ্বকাপ উপহার

মুম্বাই: ‘বন্দে মাতারাম’। মায়ের জন্য এই প্রার্থনা সফল।

দেশের মাটিতে বিশ্বকাপ জিতে নিয়েছে ভারত। বিশ্বকাপের ইতিহাসে এই প্রথম কোন দেশ, দেশের মাঠে বিশ্বকাপ জয়ের কৃতিত্ব দেখালো।

শ্রীলঙ্কা: ২৭৪/৬ (৫০ ওভার)
ভারত: ২৭৭/৪ ( ৪৮.২ ওভার)
ফল: ভারত ছয় উইকেটে জয়

দশম বিশ্বকাপ অনেক দিক থেকে ব্যতিক্রম। দেশের মাঠে স্বাগতিক হিসেবে প্রথম শিরোপা জয়। প্রথম এশিয়ার দুই দেশ ফাইনালে খেলেছে। শচীন রমেশ টেন্ডুলকার ২১ বছরের ক্রিকেট ক্যারিয়ারের বিদায়ী বিশ্বকাপে এসে শিরোপা জয়ের স্বাদ পেয়েছেন। ২৮ বছর পর ভারতের দ্বিতীয় বিশ্বকাপ শিরোপা জয়। টানা দুই বিশ্বকাপের ফাইনাল খেলেও পরাজয় বরণ করতে হয় শ্রীলঙ্কাকে।

দুই দেশের দুই কিংবদন্তির শেষ বিশ্বকাপ হওয়ায় ওয়াংখেড়ের ফাইনাল একটু বেশি মনযোগ কেড়েছে। যদিও বিদায়ী বিশ্বকাপের ফাইনালে তাদের কেউ ভালো খেলেননি। এসবের কিছু শচীনকে স্পর্শ করবে না। কারণ বিজয়ী দলের খেলোয়াড় তিনি। মুরালির মন খারাপ হলেও ক্রিকেট থেকে দিবায়টা নেহায়েত খারাপ হয়নি। টানা দুই বিশ্বকাপের রানার্সআপ এবং ১৯৯৬ সালের চ্যাম্পিয়ন শ্রীলঙ্কার নবীন ক্রিকেটার।  ভারত সর্বশেষ বিশ্বকাপ ফাইনাল খেলেছে ২০০৩ সালে দক্ষিণ আফ্রিকায় অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে। এবং ওই বিশ্বকাপে হ্যাট্রিক চ্যাম্পিয়নাদের কাছে হেরে যায়।

ওয়াংখেড়ে স্টেডিয়ামের উইকেট এত বেশি ভালো আচরণ করেছে, যেখানে ব্যাটম্যানরা অনায়াসে খেলেছেন। শ্রীলঙ্কা আগে ব্যাটিং করে ছয় উইকেটে ২৭৪ রান তোলে। ভারত ওই রান টপকে বিশ্বকাপ জেতে ৪৮.২ ওভারে।   

মালিঙ্গা বোলিংয়ের ইনিংস ওপেন করেছেন উইকেট দিয়ে। ওভারের দ্বিতীয় বলে বীরেন্দ্র শেবাগকে এলবিডব্লু’র ফাঁদে ফেলে ভয় ধরিয়ে দেন ভারত সমর্থকদের। শচীন চলে যাওয়ার পর তো নড়বড়ে অবস্থা হওয়ার উপক্রম। তাও রক্ষা, গৌতম গম্ভীর হাল ধরে ছিলেন। দ্বিতীয় উইকেটে ৮৩ রানের জুটি হওয়ার পর ভিরাট কোহলি ৩৫ করে ফিরে গেলে অধিনায়ক ধোনি সঙ্গ দেন গম্ভীরকে।

দায়িত্বশীলন নেতৃত্ব যাকে বলে অধিনায়ক ধোনি বিশ্বকাপের ফাইনাল ম্যাচে তাই করে দেখালেন। ব্যাটিং অর্ডার ভেঙ্গে চার নম্বরে নেমে অপরাজিত ৯১ রান তুলেছেন ৭৯ বলে। পুরো বিশ্বকাপে ব্যাটিং ব্যর্থতাকে মুছে দিয়ে ফাইনালে ম্যাচ সেরার পুরস্কারও জিতে নেন।

চতুর্থ জুটিতে ধোনি ও গম্ভীরের ব্যাট থেকে আগে ১০৭ রান। গম্ভীর আউট হয়েছেন ৯৭ রানে। পেরেরার একটি বল ব্যাটের ভেতরে লেগে স্ট্যাম্প ভেঙ্গে দেয়। ১২২ বলে নয়টি চার হাঁকিয়েছেন টপঅর্ডার এই ব্যাসটম্যান।  

গম্ভীর শতক না পেলেও ভারত যে জয় পেয়েছে এতেই মাহেলার শতক অকেজো। কপাল বটে মাহেলার। টানা দুই বিশ্বকাপের ফাইনালে খেলেও শিরোপা জেতা হয়নি। ২০০৭ সালে তো অধিনায়ক হিসেবে ওয়েস্ট ইন্ডিজের মাঠে অস্ট্রেলিয়ার কাছে হেরেছে। এবার ভারতের মাঠে ভারতের কাছে। এই বিশ্বকাপে যে দু’জন ব্যাটসম্যানের দুটি করে শতক আছে তাদের মধ্যে মাহেলা একজন। নিজের প্রথম ম্যাচে কানাডার বিপক্ষে শতক পেয়েছিলেন।

শ্রীলঙ্কার পরাজয়ের নৈপথ্যে গম্ভীররের ক্যাচ ফেলে দেওয়া। দুবার পুনঃজীবন দিয়ে লঙ্কানরাই তাকে বড় ইনিংস খেলতে দিয়েছেন। প্রথম ৩০ রানে ক্যাচ তুলেছিলেন গম্ভীর কিন্তু কুলাসেকারা তালুবন্দী করতে পারেননি। দ্বিতীয় দফায় ব্যক্তিগত ৪৯ রানে জীবন পেয়েছেন।  

শ্রীলঙ্কার খেলোয়াড়দের বলা হয় শীতল মস্তিস্কের যোদ্ধা। ফোসফাস এবং ঢুসঢাস নেই। আচরণের এই নমনীয়তা ব্যাটেবলে মনসংযোগ বাড়ায়। টসে জিতে যখন ব্যাটিং নিয়ে মাহেলা জয়াবর্ধনের শতকে শোভন স্কোরও দাঁড় করায় শ্রীলঙ্কা। ওহ, ভারত কিন্তু অল-আউট করতে পারেনি শ্রীলঙ্কাকে। ছয় উইকেটে ২৭৪ রান করেছে ৫০ ওভারে।

প্রথম উইকেট পড়েছিলো দলের ১৭ রানে। জহির খান উপুল থারাঙ্গার উইকেট ভেঙ্গে দিয়ে লঙ্কান শিবিরে আঘাত করেন। দ্বিতীয় উইকেটেও বড় জুটি হয়নি। অধিনায়কের সঙ্গে ওপেনার দিলশানের জুটি হয় ৪৩ রানের। বিশ্বকাপে দুর্দান্ত ফর্মে থাকা দিলশান ফাইনাল ম্যাচে ব্যক্তিগত ৩৩ রানে ফিরেছেন হরভজন সিংয়ের বলে সরাসরি বোল্ড হয়ে।

ওই অবস্থা থেকে দলের ইনিংসের গুণ টেনেছেন একা মাহেলা জয়াবর্ধনে। একেবারে হার না মানা শতক করেছেন বিশ্বকাপের ফাইনালে। অসাধারণ ইনিংস, ৮৮ বলে ১০৩ রান।

শীতল মস্তিষ্ক না হলে অনবদ্য এমন ইনিংস খেলা যায় না। অধিনায়ক সাঙ্গাকারার ব্যাট থেকে আসে ৪৮। এছাড়া নুয়ান কুলাসেকারা ৩২, সামারাভিরা ২১ এবং পেরেরা নয় বলে অপরাজিত ২২ রান যোগ করেন। মাহেলা এবং পেরেরা ব্যাটিং পাওয়ার প্লে থেকে তোলেন ৬৩ রান।  

দশম বিশ্বকাপে ভারত যে টপ ফেভারিট তালিকায় ছিলো তার প্রমাণ শিরোপা জয়। যুবরাজ সিংয়ের টুর্নামেন্ট সেরা হওয়া। অলরাউন্ড পারফরমন্সে দিয়ে চারটি বিশ্বকাপে ম্যাচ সেরার পুরস্কার পেয়েছেন যুবরাজ। খেলা শেষে ওই যুবরাজই তো বলেছেন শচীনের জন্যই আমরা বিশ্বকাপ জিতেছি।

ভারতীয় সময়: ২৩০০ ঘণ্টা, এপ্রিল ০২, ২০১১

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।