ঢাকা, শুক্রবার, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৮ রমজান ১৪৪৫

খেলা

অবশেষে জেগেছে গ্যালারির মুম্বাই

<img src="http://www.banglanews24.com/images/imgAll/2011March/SM/Sekandar-Ali-sm.jpg" alt="Sikander Ali" width="63" height="76" border="1" />সেকান্দার আলী, মুম্বাই | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৬০০ ঘণ্টা, এপ্রিল ২, ২০১১
অবশেষে জেগেছে গ্যালারির মুম্বাই

মুম্বাই: রাস্তার পাশে সরু গলি দিয়ে এগিয়ে গেলে চায়ের দোকান, কাঠের বেঞ্চে গাদাগাদি করে বসে, চা খেতে খেতে একে অন্যের আলোচনাটা জমে উঠেছিলো। কান পেতে বোঝার চেষ্টা করেও কথাগুলো বোঝা গেলো না।

মারাঠি ভাষায় কথা বলছিলেন। আলোচনার আদ্যপ্রান্ত বুঝতে না পেরে, শেষে প্রশ্ন করতে হলো তাদের মধ্যে কি নিয়ে আলোচনা হচ্ছে, ক্রিকেট কী না। উত্তর ‘না ক্রিকেট নিয়ে নয়। ওটা নিয়ে এখানে অত বেশি আলোচনা হয় না। মানুষ কাজ নিয়ে বেশি ব্যস্ত। এই হলো দশম বিশ্বকাপ ফাইনালের আগের রাতে মুম্বাই শহরের চিত্র।

তবে ক্রিকেট নিয়ে তাদের সঙ্গে আলোচনা এগোয় ভালো। রেকর্ড এবং তথ্য ভালোই জানা, খেলাটাও ভালো বোঝে। বিশেষ করে ভারত সম্পর্কে খুব কম তথ্যই তাদের অজানা।

রাতের কথা বাদ দেওয়া যাক। সকালে হুলুস্থুল পড়ে যাবে বলে যে ধারণা হয়েছিলো তেমন কিছুও চোখে পড়েনি। সন্ধ্যেয় পড়ে যাওয়ার যোগার, মুম্বাইয়ের মানুষের আসলে হলোটা কি! যে যার মতো অফিসে যাচ্ছে। বাজার করে বাসায় ফিরছে। টেক্সি চালক সোয়ারি নিয়ে দূরে যাচ্ছে। কখন বাসায় ফিরবে জানে না।

ওহ আরেক কথা, বিশ্বকাপ ফাইনাল নিয়ে মুম্বাইয়ে একেবারেই কোন সাজগোজ হয়নি। বাংলাদেশের মতো প্রধান সড়কগুলোর আশপাশের বাড়ির দেয়ালে রঙের প্রলেপ দেওয়া হয়নি। বিমানবন্দর থেকে বেরিয়ে প্রথম দর্শনে যে মুম্বাইকে দেখে মানুষ, চোখের জন্য তা সুখকর নয়। বস্তির জরাজীর্ণ পরিবেশ, মুসলমানদের বসবাস। বিশ্বকাপ নগরিতে ওই বস্তিগুলোকে বাইরে থেকে পর্দার আড়ালে নেওয়া হয়নি। তবে যেখানে ওয়াখেড় স্টেডিয়াম এবং ভদ্র লোকের বাস ওই জায়গাগুলো এমনিতেই সুন্দর। তাকে অতিরিক্ত রঙচঙে করার প্রয়োজন হয়নি।

আরব সাগরের চারপাশ যেভাবে বাঁধানো এবং রাতে আলোঝলমলে পরিবেশ পর্যটকদের মুদ্ধ করে। সেজন্যই বোধহয় শহরকে অন্যভাবে সাজানো হয়নি। তাই বলে মানুষের মধ্যে বিশ্বকাপের খেলা নিয়ে আলোচনা হবে না, তা কি করে হয়। ভারত-শ্রীলঙ্কার মধ্যকার ফাইনাল নিয়ে যা একটু আলোচনা দেখা গেছে তা মিডিয়ার কল্যাণে। শ্রীলঙ্কা থেকে আসা দর্শক, বিভিন্ন দেশের সাংবাদিক, আন্তর্জাতিক ক্রিকেট কাউন্সিলের কর্মকর্তারা হোটেলগুলোতে না থাকলে মুম্বাইকে মনেই হতো না বিশ্বকাপের নগরি যেখানে ফাইনাল খেলা হচ্ছে।     

বলিউডের তারকারা খেলা দেখবেন এবং কোন কোন রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব মাঠে থাকবেন সেসব খবর বেশি করে প্রচার করতে দেখা গেছে বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেলগুলোতে। এসব দেখার পর বাংলাদেশ থেকে মুম্বাইতে বিশ্বকাপের ফাইনাল ম্যাচ কাভার করতে আসা সাংবাদিকদের মধ্যে প্রশ্নের উদয় হয়। বাংলাদেশের মতো ক্রিকেট পাগল জাতি কি বিশ্বের অন্য কোথাও আছে? সত্যিই নাই। দশম বিশ্বকাপের ফাইনাল খেলা যদি বাংলাদেশের মিরপুর শেরেবাংলা জাতীয় স্টেডিয়ামে হতো, তাহলে ঢাকার মানুষের মধ্যে তিন থেকে চারদিন উৎসব লেগে থাকতো। বাদ্যবাজিয়ে, পতাকায় সেজে, সমর্থন দেওয়ার জন্য তৈরি হতো। মুম্বাইতে কিন্তু তা হয়নি। যে যার মতো ব্যস্ত।

তবে খেলার দিন সকালের পরিবেশটা ছিলো ভিন্ন। শনিবার অর্ধদিবসের কর্ম শেষ করে, খেলা শুরুর আগে, যে যার মতো বাসায় ফিরেছে পড়িমরি করে, টিভিতে খেলা দেখবে বলে। স্থানীয় সময় দুপুর আড়াইটায় খেলা শুরুর ঘণ্টা ঘানেক আগে ওয়াংখেড় স্টেডিয়ামও জ্যামপ্যাক। অর্থাৎ ৩৩ হাজার দর্শকের বেশিরভাগ খেলা দেখতে চলে এসেছেন মাঠে। যারা টিকিট পাননি তাদরে জন্য বাসায় টিভি আছে। মুম্বাই মহানগরের পক্ষ থেকে বড় পর্দায় খেলা দেখার উদ্যোগ নেওয়া হয়নি। ব্যক্তিগত উদ্যোগেও বড় পর্দা লাগেনি। মূল শহরের বাইরের অবস্থা কি সেটা জানা সম্ভব নয়। তবে আরব সাগরে তীরে গড়ে ওঠা আধুনিক মুম্বাই নগরিতে বিশ্বকাপ খেলার জৌলুস বলতে টিভি সেট, নয়তো মাঠে গিয়ে খেলা দেখা এবং প্রিয় দলকে সমর্থন দেওয়া।

মুম্বাইয়ের মানুসজনের সঙ্গে আলোচনা করে বোঝা গেলো তারা ভারতের জয়ের অপেক্ষায় আছেন। তাই আগে ভাগে উৎসব হচ্ছে না। খেলা শেষ হলে এবং শিরোপা জিতলে উম্মাতাল হয়ে নাচে-গানে মাতিয়ে তুলবেন মুম্বাই শহর। আসলে ভারত জিতে গেলে সারা ভারতই নাচবে। রঙের হলি হবে। জমপেশ জমে যাবে বার এবং নাইটক্লাবগুলো।

ভারতীয় সময়: ১৪৪০ ঘণ্টা, এপ্রিল ০২, ২০১১

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।