ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১১ বৈশাখ ১৪৩১, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫

খেলা

শহীদদের জন্য বিশ্বকাপ জিতবে শ্রীলঙ্কা: সাঙ্গাকারা

স্পোর্টস করেসপন্ডেন্ট, মুম্বাই থেকে | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২০২৪ ঘণ্টা, এপ্রিল ১, ২০১১
শহীদদের জন্য বিশ্বকাপ জিতবে শ্রীলঙ্কা: সাঙ্গাকারা

মুম্বাই: বিশ্ব ক্রিকেটে শ্রীলঙ্কা কতটা ধারাবাহিক তা বোঝার জন্য ক্রিকেট তথ্য শালায় নাক মুখ ডুবিয়ে রেকর্ড ঘাটার প্রয়োজন নেই। দুটি বিশ্বকাপ দেখলেই যথেষ্ট।

২০০৭ সালে ওয়েস্ট ইন্ডিজ বিশ্বকাপের রানার্সআপ মাহেলা জয়াবর্ধনের শ্রীলঙ্কা। দশম বিশ্বকাপের ফাইনালে মাহেলার বন্ধু কুমার সাঙ্গাকারার শ্রীলঙ্কা।

শিরোপা যোগ হলে প্রাপ্তি হবে তিনটি বিশ্বকাপের ফাইনাল খেলে দুটিতে চ্যাম্পিয়ন। অস্ট্রেলিয়া এবং ওয়েস্ট ইন্ডিজ ছাড়া এই কৃতিত্ব কেউ দেখাতে পারেনি। ৯৬’র বিশ্বচ্যাম্পিয়নদের সামনে রেকর্ড গড়ার সুযোগ এসেছে। অর্জুনা রানাতুঙ্গার পরে শ্রীলঙ্কার বিশ্বকাপ জয়ী অধিনায়ক হলেও হয়ে যেতে পারেন সাঙ্গাকারা।

স্বপ্ন সত্যি হলে, একটি সুন্দর ছবি টাঙিংয়ে রাখা হবে সিংহলিজ স্পোর্টস কাব গ্রাউন্ডের লঙ্কান ক্রিকেট বোর্ড অফিসে। ১৫ সদস্যের একটি দলের বিজয় উল্লাসের ছবি বাঁধিয়ে রাখা হবে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট কাউন্সিলসহ ক্রিকেটের গুরুত্বপূর্ণ ভবন, স্টেডিয়াম এবং  সর্বপরি আর্কাইভে। ৯৬’র বিশ্বকাপ জয়ী দলের সদস্য মুত্তিয়া মুরালিধরনের এটি পঞ্চম বিশ্বকাপ। শনিবার ফাইনালে জিতে গেলে দ্বিতীয়বার শিরোপা জয়ের স্বাদ পাবেন এই স্পিন উইজার্ড। ফাইনালে জয় পারাজয় যাদেরই হোক বিশ্বকাপ শেষে বিদায় নিচ্ছেন মুরালি। স্পিন জাদুকরের শেষটা অন্যভাবে স্মরণীয় করে রাখতে চান লঙ্কান দলপতি সাঙ্গাকারা। যদিও তিনি সংবাদ সম্মেলনে বলেননি মুরালির জন্য বিশ্বকাপ জিততে চাই। বলেছেন,“যেদিন থেকে বিশ্বকাপ ক্যাম্পেইন শুরু সেই থেকে আমরা শ্রীলঙ্কার জন্য জিততে চেয়েছি। আমাদের সিদ্ধান্ত অনড়। শ্রীলঙ্কার জন্যই জিততে চাই। ”

দেশের চেয়ে বড় কিছু হয় না। মুরালিও দেশের জন্য খেলেন। মুরালিকে এই প্রশ্ন করা হলে তিনিও হয়তো বলতেন দেশের জন্যই তো খেলছি। বিদায় নেওয়ার আগে দেশকে আরেকটি বিশ্বকাপ উপহার দিয়ে যেতে চাই। ”

ভারতের চেয়েও শ্রীলঙ্কার বিশ্বকাপ রেকর্ড অনেকাংশে ভালো। গত পাঁচ আসরের তিনটির ফাইনালিস্ট তারা। দুবারের রানার্সআপ। একবারের চ্যাম্পিয়ন। সেখানে ভারতেরও তৃতীয় বারের মতো ফাইনালে খেলছে। তবে সেই ১৯৮৩ সালে কপিল দেবের নেতৃত্বে শিরোপা জয়ের পর দ্বিতীয়টি পাওয়া হয়নি। ২০০৩ সালে সৌরভ গাঙ্গুলীর নেতৃত্বে ভারত ফাইনালে খেললেও হেরেছে অস্ট্রেলিয়ার কাছে। শনিবারের অল-এশিয়া ফাইনালে ভারত বা শ্রীলঙ্কা যে দলেরই জয় হোক না কেন, দ্বিতীয়বার শিরোপা স্বাদ পাবে তারা।

ওয়াংখেড় সাক্ষী হবে কালজয়ী দু’জন ক্রিকেটারের শেষ বিশ্বকাপ ম্যাচ হিসেবে। মুরালির ক্রিকেট থেকে বিদায়, শচীন টেন্ডুলকারের বিশ্বকাপ থেকে। উভয় দলের জন্য ফাইনাল হয়ে দাঁড়িয়েছে আনেকটা আবেগের। লঙ্কান দলপতি ফাইনালে শচীনের দলকেই এগিয়ে রাখলেন,“তারা খুবই ভালো একটি দল। ফেভারিট হিসেবে এই টুর্নামেন্ট জিততে পারে। সেজন্যই তারা ফাইনালে। প্রত্যেকে চাইবে ভারত শিরোপা জিতুক এবং যেভাবে খেলেছে তার ধারাবাহিকতা ধরে থাক। ”

তাই বলে নিজেদেরকে দুর্বল মানছেন না সাঙ্গকারা। “আমি মনে করি না আমরা আন্ডারডগ। আমরা ভালো ক্রিকেট দল। ভারত দুই কি একবছর হলো প্রত্যেকের বিপরীতে ফেভারিট হিসেবে খেলছে। এবং তারা তাকিয়ে আছে শিরোপা জয়ের জন্য। আমরা এখানে এসেছি কাল আমাদের সামর্থ্য অনুযায়ী ক্রিকেট খেলতে। ”

নিউজিল্যান্ডকে হারিয়ে ফাইনালে খেলা নিশ্চিত হওয়ার পরই সাঙ্গাকারা সতীর্থদের আবেগ সংবরণ করতে বলেছিলেন। নেতার অনুরোধে নিজেদের সংযত রেখেছেন একদল সিংহ পুরুষ। “প্রত্যেকেই মুখিয়ে আছে। তবে ভালো লাগছে সবাই যে আবেগ সংবরণ করতে পারায়। কাল অনেক বড় দায়িত্ব পালন করতে হবে আমাদেরকে। বিশ্বকাপ অনেক বড় আসর, এখানে বেশি কিছু করতে যাওয়া বোকামি। আমরা যা পারি এবং যেটুকু শিখেছি তাই করতে এসেছি। ”

শ্রীলঙ্কাকে বিশ্বকাপ ফাইনালে প্রেরণা যোগাচ্ছে হাজার হাজার শহীদের আত্মা। দেশের জন্য যারা জীবন দিয়েছেন তাদের জন্য হলেও বিশ্বকাপ জিতে দেশে ফিরতে চান অধিনায়ক। “খুব ভালো সময়ে আমরা এখানে এসেছি। অনেক মানুষ দেশের জন্য প্রাণ দিয়েছে। তাদের জন্য আমরাপ বিশ্বকাপ দেশে নিয়ে যেতে চাই। ”

ভারত স্বাগতিক হলেও সম্প্রতি ওয়াংখেড়ে খেলা হয়নি। গ্রুপ ম্যাচে শ্রীলঙ্কা খেলেছে। মাঠ এবং উইকেট সম্পর্কে ভালো ধরাণা আছে তাদের। অধিনায়ক তো উইকেটের প্রশংসা করলেন। একটু দুর্বলতাও আছে লঙ্কান শিবিরে। দু’একজনের সামান্য চোট সম্যাও আছে বলে শুক্রবার সংবাদ সম্মেলনে জানান সাঙ্গাকারা।

১৯৯২ থেকে পাকিস্তানের চ্যাম্পিয়ন হওয়ার মধ্যদিয়ে সেই যে শুরু এরপর বিশ্বকাপের প্রতিটি আসরে ফাইনাল খেলেছে এশিয়ার দল। যদিও চ্যাম্পিয়ন হতে পারেনি অস্ট্রেলিয়ার দাপটের মুখে। এবার ভারত-শ্রীলঙ্কার যেই জিতুক শিরোপা এশিয়ার।

৯৯ সালে পাকিস্তান খেলে অস্ট্রেলিয়ার সঙ্গে। ২০০৩ সালে অস্ট্রেলিয়ার বিপরীতে ফাইনালে খেলেছে ভারত। ২০০৭ সালেও এশিয়ার দল হিসেবে ফাইনালে অস্ট্রেলিয়ার মোকাবেলা করে শ্রীলঙ্কা।

ভারতীয় সময়: ১৯৩০ ঘণ্টা, এপ্রিল ০১, ২০১১

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।