ঢাকা, শুক্রবার, ১৪ চৈত্র ১৪৩০, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৮ রমজান ১৪৪৫

খেলা

প্রকৃতির কাছে হেরেছে বাংলাদেশ: জেমি সিডন্স

স্পোর্টস করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৭৩০ ঘণ্টা, জুলাই ২২, ২০১০
প্রকৃতির কাছে হেরেছে বাংলাদেশ: জেমি সিডন্স

ঢাকা: এতটা বদলে গেছেন কোচ জেমি সিডন্স! সমালোচনা করা যার অভ্যাস, সেই মানুষটি ইউরোপ সফর শেষে দেশে ফিরে শান্ত একটা পরিবেশ তৈরির চেষ্টা করেছেন। অপেক্ষাকৃত দুর্বল প্রতিপক্ষের কাছে ব্যর্থতা আড়াল করতে যুক্তির পর যুক্তি দিয়ে গেলেন।



অপেশাদার দুটি দলের কাছে পরাজয়ের চেয়ে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ঐতিহাসিক জয়কে নিয়ে এসেছেন সামনে। এরপরেও প্রশ্নবানে জর্জরিত হয়েছেন। হযরত শাহ্ জালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে বৃহস্পতিবার ভোরের আলোতে ফ্যাকাশে হয়ে ওঠে জেমির সাদা মুখটি। শেষে হতাশা ঝড়ে ভ্রমণ কান্ত কণ্ঠে। বিস্ময় নিয়ে বলেন,“এত বড় একটি জয়ের ব্যাপারে কারো আগ্রহ নেই। কোন প্রশ্ন হলো না। ”

সত্যিই ইংল্যান্ডের বিপক্ষে পাওয়া জয়কে আড়াল করে দিয়েছে আয়ারল্যান্ড এবং নেদারল্যান্ডসের কাছে হার। যদিও জাতীয় দলের কোচের দৃষ্টিতে এ পরাজয় অঘটন মাত্র। খর্ব শক্তির দুটি দল, ভিন্ন দুটি ম্যাচে অঘটন ঘটিয়েছে পেশাদার টেস্ট দলের বিপক্ষে।

জেমি সিডন্সের মুখেই শোনা যাক,“কন্ডিশনে কতটা সমস্যা হয়েছে বোঝানো যাবে না। বৃষ্টি ভেজা মাঠ। ভ্রমণ কান্তি। অনুশীলনেরও সুযোগ ছিলো না। এমন পরিস্থিতি খুব বেশি ভালো খেলা সম্ভব হয় না। তারওপর টস হেরেছি। স্রোতের বিপরীতে খেলতে হয়েছে। দুটি হারই ছিলো অঘটন। ”

ইংল্যান্ড সফরে একদিনের ক্রিকেট সিরিজে দারুণ খেলেছে বাংলাদেশ। এনিয়ে কারো দ্বিমত থাকার কথা নয়। প্রথম ম্যাচে প্রতিদ্বন্দ্বীতা গড়ে তোলা। দ্বিতীয় ম্যাচে জয়। শেষ ম্যাচের হারটাকে লজ্জাজনক বলা যাবে না। টি-টোয়েন্টি বিশ্বচ্যাম্পিয়নদের বিপক্ষে এককথায় বাংলাদেশের পারফরমেন্স ভালো।

আশার আলো দেখিয়ে মাত্র তিনদিনের ব্যবধানে ক্রিকেটাররা দপ করে নিভে যাবে এমনটা ভাবতে পারেননি কোচ জেমি সিডন্সও। অতি আত্মবিশ্বাস না ভয় থেকে আয়ারল্যান্ডের কাছে সিরিজের প্রথম ম্যাচ হেরে বসে বাংলাদেশ, সে যুক্তি খন্ডালেন না। একটু ঘুড়িয়ে বলেছেন,“শেষ তিনটি ম্যাচ অবশ্যই আমাদের জেতা উচিৎ ছিলো। কিন্তু পরিস্থিতি এমন ছিলো, যা হয়ে উঠেনি। দুই ম্যাচেই টস হারাটা ছিলো আমাদের জন্য সমস্যা। ”

তবে মোটের ওপরে ইংল্যান্ড সফরকে ইতিবাচক হিসেবেই দেখছেন এ অস্ট্রেলিয়ান। তাঁর মতে,“আমি ইতিবাচকভাবেই দেখছি। ইংল্যান্ডের সঙ্গে অসাধারণ ক্রিকেট খেলেছে ছেলেরা। একটি জয় আছে। শেষ তিন ম্যাচের মধ্যে দুটিতে হারলেও সফরটা ভালো হয়েছে। ”

বেলফাস্টের বৈরি পরিবেশে ধরাশায়ী হলেও ২০১১ সালের বিশ্বকাপে দেশের মাঠে আইরিশদের দেখে নেওয়ার হুমকি দিয়ে রাখলেন জেমি। বলছিলেন,“আমরা অবশ্যই বিশ্বকাপে ভালো খেলবো। এখানে আইরিশদের হারাবোই। ”

কোচের পথ অনুসরণ করে এগিয়েছেন অধিনায়ক মাশরাফি বিন মুর্তজা। অধিনায়কের দৃষ্টিতেও বৈরি পরিবেশই তাঁদেরকে হারিয়ে দিয়েছে। বলেন,“আয়ারল্যান্ডের কন্ডিশনটা একটা ব্যাপার ছিলো। আমাদের এখানে তাদেরকে ৩-০ তে হারিয়েছি। ওদের ওখানে প্র্যাকটিস করতে পারিনি। নেটে একটু বোলিং ব্যাটিং করতে পারলে ভালো হতো। টসটাও গুরুত্বপূর্ণ হয়ে দাঁড়িয়েছিলো। ”

মাশরাফির দৃষ্টিতে ইংল্যান্ড সফরে প্রত্যাশার চেয়েও ভালো খেলেছে তাঁর দল। বলেন,“আমরা ইংল্যান্ডে যতটা ভাল করেছি ততটা অনেকেই আশা করেনি। আবার আয়ারল্যান্ড এবং নেদারল্যান্ডসে খারাপ করায় ওই সাফল্যে কিছুটা প্রভাব ফেলেছে। পেশাদার ক্রিকেটার হিসেবে আমাদের অবশ্যই শেষ দুটি ম্যাচ জেতা উচিৎ ছিলো। ”

ব্যর্থতার দায় খন্ডাতে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের (বিসিবি) কাঠগড়ায় দাঁড়াতে হবে ক্রিকেটারদেরকে। বোর্ড কর্মকর্তারা এমন মন্তব্য করেছেন শোনার পর অধিনায়ক শুধু এটুকুই বলেছেন,“ জয়টা অবশ্যই সবার জন্য আনন্দের। হার আমাদের জন্য। মাঠে তো আমরাই খেলি। দায়টা তো আমাদেরই। ”

অধিনায়ক হিসেবে দলের সাফল্য ব্যর্থতার কাটা-ছেঁড়া করতে গিয়ে মাশরাফির মনের এক কোনে এক চিলতে বেদনার চিনচিনে যন্ত্রণা দিচ্ছে নেদারল্যান্ডসের কাছে হার। মিস ফিল্ডিংয়ের কারণেই ম্যাচ হারতে হয়েছে বলে জানিয়েছেন নড়াইল এক্সপ্রেস।

নেতৃত্ব ফিরে পাওয়ার পর সতীর্থ খেলোয়াড়দের সঙ্গে কতটা মানিয়ে নিতে পেরেছেন মাশরাফি বলা মুশকিল। সহখেলোয়াড়দের কাছ থেকে সহযোগিতা পেয়েছেন কি না এমন প্রশ্নের উত্তর একটু ঘুড়িয়ে দিয়েছেন অধিনায়ক। বলেন,“সবাই দেশের জন্য খেলেছে। হয়তো ভালো খেলার চেষ্টা করে পেরে ওঠেনি। ”

সহ-অধিনায়ক সাকিব আল হাসান এবং মোহাম্মদ আশরাফুল ছাড়া দলের বাকি সবাই দেশে ফিরেছেন বৃহস্পতিবার সকাল পৌনে ছয়টায়। সাকিব ইংল্যান্ডে কাউন্ট্রি ক্রিকেট খেলছেন। আর আশরাফুল ছুটি কাটাচ্ছেন।

বাংলাদেশ সময়: ১৮৪০ ঘন্টা, জুলাই ২২, ২০১০

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।