ঢাকা, শুক্রবার, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫

ফুটবল

শৈশবের মেসি, বর্তমানের মেসি

মীম নোশিন নাওয়াল খান, নিউজরুম এডিটর | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৪০৮ ঘণ্টা, জুলাই ৯, ২০১৪
শৈশবের মেসি, বর্তমানের মেসি

ফুটবল খেলাটা যে সবুজ ক্যানভাসে ছবি আঁকার মতো ব্যাপার হতে পারে, তা কি কখনো ভেবে দেখেছ? আমরা অনেকেই এভাবে ভাবি না। কিন্তু আমাদের নতুন করে ভাবাতে শেখাচ্ছেন যে শিল্পীটি, তার নাম লিওনেল মেসি।

ফুটবল মাঠে তিনি দক্ষ শিল্পী, দলের জয়ের কারিগর।

মেসিকে আমরা সবাই চিনি। ফুটবল জাদুতে পৃথিবীকে মোহাচ্ছন্ন করে রাখা এই মানুষটি কারো কাছে ভিনগ্রহের ফুটবলার, কারো কাছে খুদে জাদুকর।

আর্জেন্টিনার রোজারিওতে জন্ম মেসির। তার বাবা হোর্হে হোরাসিও মেসি এবং মা সেলিয়া মারিয়া কুচ্চিত্তিনি। মেসির বাবা ইস্পাত কারখানায় কাজ করতেন ও মা খণ্ডকালীন পরিচ্ছন্নতাকর্মী ছিলেন। মেসির দুই ভাই, এক বোন।

খুব ছোটবেলা থেকেই ফুটবলের প্রতি আগ্রহ ছিল আজকের খুদে জাদুকরের। তার বাবা স্থানীয় ফুটবল ক্লাব গ্রান্দোলির কোচ ছিলেন। পাঁচ বছর বয়সেই সে ক্লাবে যোগ দেন মেসি। ১৯৯৫ সালে মেসি যোগ দেন নিউওয়েল’স ওল্ড বয়েজ ক্লাবে।

১১ বছর বয়সে মেসির গ্রোথ হরমোনের সমস্যা দেখা দেয়। এর চিকিৎসা ছিল অত্যন্ত ব্যয়বহুল। মাসে ৯০০ মার্কিন ডলার প্রয়োজন ছিল। তার পরিবারের পক্ষে চিকিৎসার এ খরচ বহন করা সম্ভব ছিল না।

স্থানীয় ক্লাব রিভার প্লেট সে সময় মেসিকে নেওয়ার আগ্রহ দেখিয়েছিল। কিন্তু মেসির চিকিৎসা করার বিষয়টা এক্ষেত্রে সমস্যা হয়ে দাঁড়ায়। এরপর বার্সেলোনার সেসময়ের ক্রীড়া পরিচালক কার্লেস রেক্সাচ মেসির খেলা দেখে মুগ্ধ হন। তিনি মেসিকে বার্সেলোনায় নেওয়ার ব্যাপারে আগ্রহ প্রকাশ করেন। তখন হাতের কাছে কাগজ না পেয়ে ন্যাপকিনেই মেসির বাবার সঙ্গে চুক্তিপত্র লিখে ফেলেন তিনি। বার্সেলোনা মেসির চিকিৎসার দায়িত্বও নেয়। এরপর মেসি ও তার বাবা পাড়ি জমান বার্সেলোনায়।

২০০৩ সাল পর্যন্ত বার্সেলোনার যুব একাডেমির ইনফান্তিল বি, কাদেতে বি এবং কাদেতে এ দলে খেলেছেন মেসি। চমৎকার খেলে সবার নজরে আসেন তিনি। ২০০৪ সালে লা লিগায় বার্সেলোনার তৃতীয় কনিষ্ঠতম খেলোয়াড় হিসেবে মেসির অভিষেক হয়। এরপর ধীরে ধীরে তিনি হয়ে ওঠেন বার্সেলোনার অবিচ্ছেদ্য অংশ, দলের জয়ের কারিগর। পায়ের জাদুতে পৃথিবীকে বিস্মিত করে মেসি হয়ে ওঠেন ভিনগ্রহের ফুটবলার।

ব্যালন ডি অর সহ অসংখ্য পুরস্কার রয়েছে মেসির ঝুলিতে। ব্যক্তিগত ছাড়াও বার্সেলোনার হয়ে তার অর্জনও বিস্ময়কর। চারবারের বর্ষসেরা খেলোয়াড় মেসির বিরুদ্ধে অবশ্য আর্জেন্টাইনদের অভিযোগের শেষ নেই। মেসি ক্লাব ফুটবলে যতটা উজ্জ্বল, আর্জেন্টিনার জার্সিতে ততটাই নিষ্প্রভ।

তাই আর্জেন্টাইনদের মতে, মেসি আর্জেন্টিনার নয়, বার্সেলোনার। তবে এবারের বিশ্বকাপে সে দুর্নাম কিছুটা হলেও ঘুঁচিয়েছেন তিনি।

অনেকে মেসিকে সর্বকালের সেরা ফুটবলারের স্বীকৃতি দিলেও বেশিরভাগ মানুষই এখনই মেসিকে সে মুকুট পরাতে রাজি নন। তাদের মতে আর্জেন্টিনার হয়ে বিশ্বকাপ জিতলেই মেসি হয়ে উঠতে পারবেন সর্বকালের সেরা।  

তবে সবার সব অপবাদ ঘুঁচিয়ে, নিন্দুকের মুখে তালা লাগিয়ে আর্জেন্টিনার মেসি তার জাদু নিয়ে হাজির হয়েছেন এবারের বিশ্বকাপে। মেসিকে আর্জেন্টিনার অধিনায়কের আর্মব্যান্ড পরানোর পর থেকেই দেশের হয়ে তিনি একটু একটু করে আলো ছড়াতে শুরু করেন। এই বিশ্বকাপে আর্জেন্টিনার সবচেয়ে এবং বলা চলে একমাত্র উজ্জ্বল নক্ষত্র মেসি। এখন সবার মুখে তাই মেসি বন্দনা। এ পর্যন্ত বিশ্বকাপে আর্জেন্টিনার সবগুলো ম্যাচেই মেসির অসামান্য প্রতিভার সাক্ষী হয়েছে বিশ্ব।

এখন তাই আর্জেন্টাইনরা মেসিমন্ত্রে মোহিত। চুপ হয়ে গেছেন সমালোচকেরাও। মেসির পায়ের জাদুতে আর্জেন্টাইন সমর্থকরা বুনছেন বিশ্বকাপ জয়ের স্বপ্ন। মেসিভক্তরাও আশায় বুক বাঁধছেন, এবার বিশ্বকাপ হয়ে উঠবে মেসিময়, মেসির আলোয় আলোকিত।

ভিনগ্রহের ফুটবল জাদুকরের পায়ে ভর করে আর্জেন্টিনা কতদূর যেতে পারে- তা দেখার অপেক্ষায় গোটা বিশ্ব। সেই সঙ্গে অপেক্ষা মেসির এক কিংবদন্তি ফুটবলার হয়ে ওঠার। বুধবার দিনগত রাত ২টায় হল্যান্ডের বিপক্ষে ম্যাচের পর স্পষ্ট হবে সব।

বাংলাদেশ সময়: ১৩৪৮ ঘণ্টা, জুলাই ০৯, ২০১৪

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।