ঢাকা, বুধবার, ১১ বৈশাখ ১৪৩১, ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ শাওয়াল ১৪৪৫

ফুটবল

বিশ্বকাপ-২০১৪

বিস্ময়-হতাশা-আনন্দ ও উত্তেজনা ।।সালেক সুফি।।

... | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৬০০ ঘণ্টা, জুন ২৮, ২০১৪
বিস্ময়-হতাশা-আনন্দ ও উত্তেজনা ।।সালেক সুফি।।

এর মধ্যেই কেটে গেছে ২০তম ফিফা বিশ্বকাপ-২০১৪’র ১৫ দিন। ব্রাজিলের নয়নাভিরাম ১২টি আধুনিক স্টেডিয়ামের ৪৮টি ম্যাচ সাক্ষী হয়েছে চূড়ান্ত বিস্ময়, কিছু অবিশ্বাস্য বিপর্যয়, আনন্দরাশি ও ব্যাপক উত্তেজনার।

   

ম্যাচ প্রতি ২.৮৩ গড়ে চোখ জুড়ানো অনেক গোলসহ মোট গোল হয়েছে ১৩৬টি।

৭টি দল ঘুরে ফিরে গত ১৯টি বিশ্বকাপ জিতেছিল। ইতোমধ্যে তিন বড় দল ইতালি, ইংল্যান্ড ও স্পেনের বিদায়ের সাক্ষী হয়েছে এই বিশ্বকাপ। অতীতে এই তিন দল মিলে বিশ্বকাপ জিতেছে ৬টি।

বিশ্বকাপ বেশ কিছু বিতর্ক ও বাজে রেফারিংয়েরও সাক্ষী হয়েছে।

এখন পর্যন্ত মোট লালকার্ড দেখানো হয়েছে ৯টি। উরুগুয়ে ও লিভারপুল তারকা লুইজ সুয়ারেজ ৯ ম্যাচের নিষেধাজ্ঞা এবং ৪ মাসের জন্য ফিফা অনুমোদিত ফুটবল সংক্রান্ত যে কোনো কর্মকাণ্ডে নিষিদ্ধ হয়েছেন।

বিশ্বকাপে ইতালিয়ান ডিফেন্ডার জিওর্জিও চিলিনির ঘাড়ে কামড় দেওয়ার জন্য তাকে এই শাস্তি দেওয়া হয়।

নেদারল্যান্ড সর্বোচ্চ ১০ গোল জড়িয়েছে বিপক্ষ দলের জালে।

আর্জেন্টিনার লিওনেল মেসি, ব্রাজিলের নেইমার ও জার্মানির থমাস মুলার প্রত্যেকে ৪ গোল করে টুর্নামেন্টে সর্বোচ্চ গোলদাতার আসন ভাগাভাগি করে আছেন।

সেইসঙ্গে বেশ ভালোই চলছে তাদের নিজ নিজ দলের বিশ্বকাপ যাত্রা এবং তাদের কাছ থেকে আরও গোলের আশা করে সবাই।

জার্মানির মিরোস্লাভ ক্লোসা ইতোমধ্যেই ব্রাজিল কিংবদন্তি রোনালদোর বিশ্বকাপে সর্বোচ্চ ১৫ গোলের রেকর্ডে ভাগ বসিয়েছেন।

শনিবার থেকে ১৬টি দল তাদের কোয়ার্টার ফাইনাল পূর্ববর্তী লড়াইয়ে নামবে।

লেখাটি চলতি বিশ্বকাপের বিস্তৃত বিশ্লেষণ ও যতটা সম্ভব অনুমানের একটি প্রচেষ্টা।

কোয়ার্টার পূর্ববর্তী লাইন আপ-

ব্রাজিল বনাম চিলি, মেক্সিকো বনাম নেদারল্যান্ড, কলম্বিয়া বনাম উরুগুয়ে, কোস্টারিকা বনাম গ্রিস, ফ্রান্স বনাম নাইজেরিয়া, আর্জেন্টিনা বনাম সুইজারল্যান্ড, জার্মানি বনাম আলজেরিয়া ও বেলজিয়াম বনাম যুক্তরাষ্ট্র।

শেষ ষোলর তালিকায় চোখ বুলালে দেখা যায়, এর মধ্যে ইউরোপের ৬টি, দক্ষিণ আমেরিকার ৫টি, উত্তর আমেরিকার ২টি, আফ্রিকার ২টি এবং ১টি কেন্দ্রীয় আমেরিকার দল। দুর্ভাগ্যবশত এই সেরাদের দলে কোনো এশিয়ার দল নেই। অস্ট্রেলিয়া, দক্ষিণ কোরিয়া, ইরান ও জাপান, এই ৪টি দল ১২টি ম্যাচ খেলে ৯টি হার এবং ৩টি মাত্র ড্র করতে পেরেছে।  

প্রত্যাশিতভাবে, দক্ষিণ আমেরিকার ৮ দলের মধ্যে দ্বিতীয় পর্ব নিশ্চিত করেছে ৫টি। ইউরোপের দলগুলোর মধ্যে গেলবারের চ্যাম্পিয়ন স্পেন, বিশ্বকাপ জয়ী ইতালি ও ইংল্যান্ড, ক্রিস্টিয়ানো রোনালদোর পর্তুগাল, ক্রোয়েশিয়া, রাশিয়া এবং অভিষিক্ত বসনিয়া-হার্জেগোভনিয়া বিদায় নিয়েছে।

আলজেরিয়া ও নাইজেরিয়া দ্বিতীয় পর্ব নিশ্চিত করা আফ্রিকানদের বিকাশমান শক্তির প্রমাণ রাখে। যুক্তরাষ্ট্রের মত উত্তর আমেরিকাও দ্বিতীয় পর্বে যাওয়ার ক্ষেত্রে তাদের শতভাগ সাফল্যের দাবি করতে পারে। সেক্ষেত্রে সেন্ট্রাল আমেরিকার বিস্ময় হিসেবে নেওয়া যায় কোস্টারিকার নাম। তারা শুধু শেষ ষোলই নিশ্চিত করেনি, গ্রুপ পর্ব থেকে ইতালি-ইংল্যান্ডকে বিদায় করে দেওয়ারও প্রধান কারণ।

গ্রুপ ‘এ’র খেলাগুলো:
প্রত্যাশিতভাবেই স্বাগতিক ব্রাজিল ক্রোয়েশিয়ার বিপক্ষে ৩-১ গোলে, মেক্সিকোর বিপক্ষে গোলশূন্য ড্র ও ক্যামেরুনের বিপক্ষে ৪-১ গোলে জয়ী হয়।   শুরুতে ব্রাজিলকে তার চিরচেনা ছন্দে দেখা না গেলেও শেষ ম্যাচে তারা স্বরূপে ফেরে।
বস্তুত মেক্সিকান গোলরক্ষক ওচোয়ার নৈপূণ্যে ম্যাচে ব্রাজিল জয়বঞ্চিত থাকে। নেইমার, অস্কার ও বাকিদের নিশ্চিত সব গোলের আক্রমণ রুখে দেয় ওচোয়া।  

গ্রুপ ‘বি’র ম্যাচগুলো:
এটি ছিল অন্যতম কঠিন একটি গ্রুপ। গত বিশ্বকাপের চ্যাম্পিয়ন স্পেন, রানারআপ নেদারল্যান্ড, দক্ষিণ আমেরিকান শক্তিশালী প্রতিপক্ষ চিলি ও ‘নেভার সে ডাই’ মেজাজের অস্ট্রেলিয়া নামগুলো শুনলেই খানিকটা আঁচ করা যায়।

প্রথম ম্যাচে স্পেন পেনাল্টি থেকে গোল করে শুরুটা ভালো করলেও, আরিয়েন রোবেন ও রবিন ফন পার্সির দুর্দান্ত খেলায় ৫-১ গোলে ধরাশয়ী হয় স্পেন।

পরবর্তী অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ম্যাচে নেদারল্যান্ড ৩-২ গোলের কষ্টার্জিত জয় পেলেও, ২-০ গোলে খুব সহজেই টপকে যায় চিলির বাধা।  
স্পেন অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে শেষ ম্যাচে ৩-০ গোলে সান্ত্বনার জয় পেলেও বড্ড দেরি হয়ে যায়। ততক্ষণে নেদারল্যান্ড ও চিলি নিশ্চিত করে ফেলে তাদের শেষ ষোলর টিকিট।

গ্রুপ ‘সি’ খেলাগুলো:
সি-কে তুলনামূলক সোজা গ্রুপই বলা চলে। দক্ষিণ আমেরিকান দল কলম্বিয়া খুব সহজেই তিন জয় তুলে নেয়। গ্রিস ও জাপান তাদের জন্য কোনো মাথাব্যথার কারণ হয়ে দাঁড়াতে পারেনি।

তবে এ পর্বে আইভরিকোস্টের জন্য খানিকটা দুঃখ থেকে যায়। বিশ্বকাপে ছোট দলগুলোর মধ্যে অপ্রত্যাশিত সাড়া জাড়ানোর তালিকায় তাদের নাম ওপরের দিকেই থাকবে। শেষ ষোল খেলার দৌড়ে আইভরিকোস্ট এগিয়ে থাকলেও অনেকটা সৌভাগ্যবশত তাদের জায়গা নেয় গ্রিস।
জাপান ছিল এ গ্রুপের সবচেয়ে দুর্বল দল, কেবলমাত্র গ্রিসের বিপক্ষে গোলশূন্য ড্র নিয়ে তাদের সন্তুষ্ট থাকতে হয়।

গ্রুপ ‘ডি’র ম্যাচগুলো:
বিশ্বকাপজয়ী দুই দল ইতালি-ইংল্যান্ডেরর কারণেই এ গ্রুপকে ‘গ্রুপ অব ডেথ’ বলে আখ্যায়িত করা হয়। ডি গ্রুপ তথা বিশ্বকাপেরই বিস্ময় কোস্টারিকা। শুরুতেই ফেবারিট উরুগুয়েকে ৩-১ গোলে এবং ইতালিকে ১-০ গোলে হারিয়ে আলোচনায় আসে তারা। ইংল্যান্ডের বিপক্ষে গোলশূন্য করলেও গ্রুপ চ্যাম্পিয়ন হয়ে শেষ ষোল নিশ্চিত করে সেন্ট্রাল আমেরিকার এই দলটি।   

অন্যদিকে ইনজুরির কারণে সুয়ারেজ প্রথম ম্যাচ খেলতে না পারলেও, তার একক নৈপূণ্যে দ্বিতীয় ম্যাচে ইংল্যান্ডকে ২-১ গোলে হারায় উরুগুয়ে।  
অতি গুরুত্বপূর্ণ তৃতীয় ম্যাচে উরুগুয়ে ইতালিকে ১-০ গোলে হারিয়ে দ্বিতীয় পর্ব নিশ্চিত করে। কিন্তু ম্যাচটি ইতালিয়ান ডিফেন্ডারের কাঁধে সুয়ারেজের কামড়ের ন্যাক্কারজনক ঘটনার সাক্ষী হয়।

গ্রুপ ‘ই’র ম্যাচগুলো:
তুলনামূলকভাবে সহজ এই গ্রুপে বিশ্বকাপজয়ী ফ্রান্স মোটামুটি স্বস্তিতেই ছিল। দুই জয় ও এক ড্র নিয়ে গ্রুপ চ্যাম্পিয়ন হওয়াটা যেন তাদের অবধারিত ছিল।
তবে সুইজারল্যান্ড ও দক্ষিণ আমেরিকার ইকুয়েডরের মধ্যে একজনকে বাছা ছিল বেশ শক্তই। কিন্তু সুইজারল্যান্ড তাদের সুযোগগুলো কাজে লাগিয়ে ফ্রান্সের পর তারা গ্রুপ পর্বের বাধা পেরোয়।
গ্রুপে সবচেয়ে দুর্বল দল ছিল হন্ডুরাস এবং তার‍া সবগুলো ম্যাচেই পরাজয় বরণ করে। দক্ষিণ আমেরিকার দল হিসেবে একমাত্র ইকুয়েডরই পেরোতে পারেনি গ্রুপ পর্বের বাধা।

গ্রুপ ‘এফ’র ম্যাচগুলো:
মহাতারকা মেসির কাঁধে সওয়ার হয়ে হট ফেবারিট আর্জেন্টিনা একটু ধীর গতিতেই শুরু করে। প্রথমেই বসনিয়ার অভিষেক আনন্দকে মাটি করে মেসি ম্যাজিকে ২-১ গোলে জয় তুলে নেয় আর্জেন্টিনা। এমনকি ইরান ৮৯ মিনিট গোলশূন্য আটকে রাখলেও শেষ মূহূর্তে মেসির অসাধারণ গোলে ১-০ তে জয় পায় তারা। তুমুল প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ ম্যাচে নাইজেরিয়ার বিপক্ষে ৩-২ গোলে জিতে গ্রুপ চ্যাম্পিয়ন হয়ে শেষ ষোল নিশ্চিত করে আর্জেন্টিনা।  
এ ম্যাচে মেসি ২ গোল করেন। বিশেষ করে তার দ্বিতীয় ব্যানানা ফ্রি কিক টুর্নামেন্টের অন্যতম সেরা গোল হিসেবে বিবেচিত হবে।

গ্রুপ ‘জি’র ম্যাচগুলো:
ক্রিস্টিয়ানো রোনালদোর পর্তুগালকে হারানোসহ ইউরোপিয়ান পাওয়ার হাউজ জার্মানি প্রত্যাশিতভাবেই গ্রুপ চ্যাম্পিয়ন হয়ে পরের পর্বে গেছে।
প্রথম ম্যাচে থমাস মুলারের হ্যাট্রিকে জার্মানি ৪-০ গোলে উড়িয়ে দেয় পর্তুগালকে। যদিও পরের ম্যাচেই জার্মানিকে ২-২ গোলে রুখে দেয় ঘানা।
দ্বিতীয় পর্বে স্থান না পাওয়াটা ঘানার জন্য দুর্ভাগ্যই বলতে হবে। গ্রুপ থেকে জার্মানির পর দ্বিতীয় দল হিসেবে শেষ ষোলতে গেছে যুক্তরাষ্ট্র।

গ্রুপ ‘এইচ’র ম্যাচগুলো:
গ্রুপের সবচেয়ে গোছানো দল হিসেবে কোনো ঝামেলা ছাড়াই তিন জয় নিয়ে শেষ ষোলতে গেছে বেলজিয়াম। ম্যাচে বিপক্ষ দল রাশিয়া, আলজেরিয়া ও দক্ষিণ কোরিয়াকে রীতিমতো নাড়াচাড়াই করতে দেয়নি তারা।  
২০১৮ বিশ্বকাপের স্বাগতিক রাশিয়ার থেকে ভাল অবস্থানে থেকে বেলজিয়ামের পর দ্বিতীয় পর্বে গেছে আলজেরিয়া।
গ্রুপের সবচেয়ে দুর্বল হিসেবে দক্ষিণ কোরিয়া রাশিয়ার সঙ্গে ১-১ গোলের ড্র নিয়েই বিদায় নেয় বিশ্বকাপ থেকে।

সম্ভাব্য কোয়ার্টার ফাইনাল:
ব্রাজিল বনাম কলম্বিয়া, নেদারল্যান্ড বনাম কোস্টারিকা, ফ্রান্স বনাম জার্মানি ও আর্জেন্টিনা বনাম বেলজিয়াম।

সম্ভাব্য সেমি-ফাইনাল:
ব্রাজিল বনাম জার্মানি ও আর্জেন্টিনা বনাম নেদারল্যান্ড।

সম্ভাব্য ফাইনাল
ব্রাজিল বনাম আর্জেন্টিনা।

এটা অনুমাণ করার দরকার নেই কে জিতবে!

বাংলাদেশ সময়: ১২৫৯ ঘণ্টা, ২৮ জুন, ২০১৪

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।