ঢাকা, শনিবার, ৭ বৈশাখ ১৪৩১, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫

খেলা

পরাজয়ে বাংলাদেশের বিশ্বকাপ যাত্রা

সেকান্দার আলী | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৮৪২ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ১৯, ২০১১
পরাজয়ে বাংলাদেশের বিশ্বকাপ যাত্রা

ঢাকা: বাংলাদেশের সম্ভাবনার মিনার উঁকি দিতে পারেনি ভারতের রানের পাহাড়ে আড়াল হওয়ায়। খাবি খেতে খেতে একটা রান হয়েছে।

তবে মুখ তুলে দাঁড়ানো হয়নি। ৩৭১ রানের লক্ষ্যে থেকে ৮৭ রান কম করে গুটিয়ে যায় সাকিব বাহিনী।

পোর্ট অ স্পেন ফিরে আসেনি। বরং প্রতিশোধের আগুনে পুড়তে থাকা ভারতের জয় হয়েছে। যেটুকু প্রতিদ্বন্দ্বীতা হয়েছে পরের ম্যাচের জন্য তা পাথেয় হয়ে জয়ের প্রেরণা যোগালে হয়।           

ইনিংসের শুরুটা দারুণ করেছিলো বাংলাদেশ। ভারতের দুই লিজেন্ডের চেয়েও দুর্বার ছিলেন ইমরুল কায়েস এবং তামিম ইকবাল। বলের হিসেবে রান তোলেন সুপার সনিক গতিতে। ৩০ বলে বাংলাদেশের সংগ্রহ দাঁড়ায় ৫০ রানে। কিন্তু ইমরুলের অকাল বিদায়ে হোঁচট খায় টাইগার বাহিনী। সাত বাউন্ডারি মিলিয়ে ৩৪ রান নিয়ে মুনাফ প্যাটেলের বলে সরসরি বোল্ড হন ইমরুল।

একবার পুর্নজীবন পেয়েছিলেন বাঁহাতি ব্যাটসম্যান জুনায়েদ সিদ্দিকী। ব্যক্তিগত ১০ রানের সময় ব্যাটেবলে না হওয়ায় বল ওপরে উঠে যায়। ইউসুফ পাঠান তালুবন্দী করেও শেষপর্যন্ত নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারেননি। ৩৭ রান হওয়ার পর দ্বিতীয়বার ভুল করায় খেসারত দিতে হয় জুনায়েদকে।  

হরভজন সিংয়ের বল আগে বেরিয়ে খেলতে চেয়েছিলেন জুনায়েদ। কিন্তু লাইন মিস করায় বল চলে যায় উইকেটরক্ষক মহেন্দ্র সিং ধোনির হাতে। একমুহূর্ত বিলম্ব না করে উইকেট ভেঙ্গে দেন ভারত অধিনায়ক।

আশার প্রদীপ মিটমিট করে জ্বালতে থাকে উদ্বোধনী ব্যাটসম্যান তামিম ইকবালের ছন্দে থাকায়। আগের মতো ধৈর্য্য হারাননি। দাতে দাত চেপে উইকেটে পড়েছিলেন রানের জন্য। বিধিবাম ৭০ রান করে ফিরতে হলো তাকে। ইউসুফ পাঠানের বল তুলে দেন। ৮৬ বলের যে ইনিংসটা খেলেছেন তিনি সেটা তামিমের নয়। মাত্র চারবার বল সীমানার বাইরে পাঠিয়েছেন। একটি ছয় আছে তাতে। একদিনের ক্রিকেটে তামিমের এটি ১৭তম অর্ধশতক।
ওয়ানডে শীর্ষ অলরাউন্ডার অর্ধশতক না পেলে উপায় ছিলো না। লজ্জাজনক হার জুটতো। অবশ্য অধিনায়ক আরেকটু দায়িত্বশীল ব্যাটিং করলে লড়াই জমে যেতো। ইউসুফ পাঠানের বলে ক্যাচ তুলে দিয়ে আউট হন ৫৫ রানে। বাংলাদেশের সংগ্রহে তখন ২৩৪ রান।

এরপর যা হওয়ার তাই হয়েছে। উইকেটে যাওয়া আসার মিছিল। ঢাকা প্রিমিয়ার ক্রিকেটে দুর্দান্ত ফর্মে থাকা এই উইকেটরক্ষক ব্যাসম্যান মুশফিকুর রহিম ২৫, রকিবুল হাসান ২৭, মাহমুদউল্লাহ ৬, নাঈম ইসলাম ২, আব্দুর রাজ্জাক ১ রান করেন। প্রত্যেকে কিন্তু প্রিমিয়ার ক্রিকেটের পারফরমার। অথচ ভারতের বিপক্ষে হোঁচট খেয়েছেন।      

ভারতের ইনিংটা ছিলো দর্শনীয়। নিখাদও বলা যেতে পারে। বীরেন্দ্র শেবাগ এবং ভিরাট কোহলি শতক হাঁকিয়েছেন। পর পর দুই জুটিতে লম্বা ইনিংস খেলে রানের পাহাড় গড়েছেন। প্রমাণ হলো মিরপুরের উইকেট ভারতীয়দের জন্য ব্যাটিং স্বর্গ। বাংলাদেশের স্পিনারদের কিছু করার নেই। আব্দুর রাজ্জাক, সাকিব এবং নাঈম ইসলামের বাঁহাতের আঙ্গুল জাদু দেখাতে পারেনি। রান আটকে দেওয়ার মতো বলও হয়নি। দুই পেসারের মধ্যে রুবেল হোসেন তুলনামূলক ভালো বোলিং করেন। উইকেট না পেলেও রানের খরচ কম হয়েছে। কিন্তু শফিউল ইসলামের বোলিং যাচ্ছেতাই। প্রথম ওভারে সাত ওভারে ৬৯ রান দিয়ে পেয়েছেন একটি উইকেট।

শিশির ভেজা রাতে ব্যাটিং সুবিধা নিতে টস জিতে বোলিং বেছে নেন অধিনায়ক সাকিব। আগে ব্যাটিংয়ের সুযোগ পেয়ে খুশিতে নাচতে নাচতে ক্রিজে যান শেবাগ ও শচীন টেন্ডুলকার। উড়ন্ত সূচনাও পায় ভারত। স্বাগতিক বোলারদের ওপর ঝড় বয়ে দিয়ে উদ্বোধনী জুটি ৬৯ রান তুলে নেয়।

ভুল করে রান-আউট না হলে বিশ্বকাপের উদ্বোধনী ম্যাচ হয়তো ইনিংসে তিন শতকের ইতিহাস গড়তো। ২৮ রান হলে ক্রিজের দক্ষিণ প্রান্ত থেকে রান নিতে উত্তর প্রান্তে পৌঁছে যান শচীন। কিন্তু শেবাগ প্রান্ত বদল না করায় অনায়াসে উইকেট ভেঙ্গে দেয় বাংলাদেশ। শচীন ফিরে যাওয়ার বৃথা চেষ্টা না করে সোজা সাজঘরের পথ ধরেন।    

গৌতম গম্ভীর ও শেবাগের দ্বিতীয় জুটিতে ৮৩ রান পায় ভারত। গম্ভীর ৩৯ বলে ৩৯ রান নিয়ে অফ স্পিনার মাহমুদউল্লাহ’র শিকার হন। তৃতীয় জুটি মারদাঙ্গা খেল দেখান। ২০৩ রানের জুটি হয় ভিরাট কোহলি ও শেবাগের মধ্যে। লড়াকু শেবাগকে শেষপর্যন্ত ফিরতে হয়।

সাকিবের বলে আউট হওয়ার আগে বিশ্বকাপে পঞ্চম সর্বোচ্চ ইনিংসটি খেলেন শেবাগ। ১৪০ বলে করেন ১৭৫ রান। পরিচ্ছন্ন ইনিংস খেলতে মারকাটারি এই ব্যাটসম্যান ১৯ বার বল সীমানার বাইরে পাঠান। যার মধ্যে পাঁচবার বাতাসে ভেসে সীমনা পেরিয়েছে বল। ৪৭.৩ ওভার পর্যন্ত উইকেটে ছিলেন শেবাগ। বাকি ২.৩ ওভার থেকে কোহলিও কাঁটায় কাটায় শতক পূর্ণ করেন (অপ:)। ইনিংস শেষে ভারতের সংগ্রহ চার উইকেটে ৩৭০ রান।    

বাংলাদেশ দল: তামিম ইকবাল (সহ-অধিনায়ক), ইমরুল কায়েস, জুনায়েদ সিদ্দিকী, রকিবুল হাসান, সাকিব আল হাসান (অধিনায়ক), মুশফিকুর রহিম (উইকেটরক্ষক), মাহমুদউল্লাহ, নাঈম ইসলাম, আব্দুর রাজ্জাক, শফিউল ইসলাম, রুবেল হোসেন।

ভারত দল: মহেন্দ্র সিং ধোনি (অধিনায়ক), গৌতম গম্ভীর, জহির খান, ভিরাট কোহলি, মুনাফ প্যাটেল, ইউসুফ পাঠান, শান্তাকুমারণ শ্রীশান্ত, বীরেন্দ্র শেবাগ, হরভজন সিং, যুবরাজ সিং ও শচীন টেন্ডুলকার।  

বাংলাদেশ সময়: ২১২৮ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ১৯, ২০১১


 

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।