ঢাকা, বুধবার, ১১ বৈশাখ ১৪৩১, ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ শাওয়াল ১৪৪৫

খেলা

বিশ্বকাপের উদ্বোধনী অনুষ্ঠান:

ভিনদেশি পত্রিকার উপস্থাপনায় মিশ্র মনোভাব

আনোয়ারুল করিম, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২১১৭ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ১৮, ২০১১
ভিনদেশি পত্রিকার উপস্থাপনায় মিশ্র মনোভাব

ঢাকা: বিশ্বকাপ ক্রিকেটের দশম আসরের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের সংবাদ পরিবেশনের ক্ষেত্রে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সংবাদপত্র ও গণমাধ্যমে ভিন্ন ভিন্ন মাত্রায় সংবাদ পরিবেশিত হয়েছে। কোথাও প্রশংসা হয়েছে আবার কোনো কোনো সংবাদপত্রে সমালোচিতও হয়েছে উদ্বোধনী অনুষ্ঠানটি।

তবে সবচেয়ে সমালোচনামুখর ছিলো প্রতিবেশি শহর কলকাতার সংবাদপত্রগুলোই।  

শুক্রবার প্রকাশিত পত্রিকাগুলো পর্যালোচনা করে দেখা যায়, ঢাকায় বিশ্বকাপ ক্রিকেটের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের সংবাদ পরিবেশনের ক্ষেত্রে উন্নাসিকতা দেখিয়েছে কলকাতার কয়েকটি দৈনিক পত্রিকা। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের আগে এসব পত্রিকার কেউ কেউ ঢাকার প্রস্তুতি নিয়ে ভূয়সী প্রশংসা করলেও বৃহস্পতিবারের অনুষ্ঠানকে ‘হেয়’ করেও সংবাদ পরিবেশন করে কয়েকটি পত্রিকা।

এই সংবাদপত্রগুলোর উন্নাসিকতা দেখে মনে হয়েছে, এরা নিজেরাই ১৯৯৬ সালে তাদের শহরের ইডেন গার্ডেনে বিশ্বকাপের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানটি অনেকেরই হাসির খোরাক হয়েছিল, সে কথাটি বেমালুম ভুলে গেছে। সেদিনের লেজার শো নিয়ে বিপত্তির কথা এখনো সবার মুখে মুখে।     

তবে কলকাতার সব পত্রিকাই একই ধরণের নয়। কোনো কোনো পত্রিকা অবশ্য ঢাকার এই আয়োজনের প্রশংসা করেছে। ঢাকার আয়োজনকে ওপারের বাঙালির আয়োজন বলেও কৃতিত্বের সঙ্গী হয়েছে কেউ কেউ। ঢাকা এর মাধ্যমে দক্ষিণ এশিয়ার গ-ি ছাড়িয়ে গেছে এমনও উল্লেখ করেছে একটি পত্রিকা।

কলকাতার পত্রিকাগুলোর মধ্যে উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের সবচেয়ে বেশি সমালোচনা করে শুক্রবার সংবাদ পরিবেশন করে আনন্দবাজার পত্রিকা ও আজকাল। আনন্দবাজারের শিরোনাম হচ্ছে ‘রং আর আলোয়  যেন হারিয়ে থাকল ক্রিকেটই’। এ শিরোনামই বলে দেয় সংবাদটির ভেতরে কী থাকতে পারে!

‘আজকাল’-এর সমালোচনা খুবই সরাসরি। তারা লিখেছে, ‘আড়াই ঘণ্টারও বেশি সময় ধরে চলা এই অনুষ্ঠানে বৈচিত্রের কোনো অভাব ছিল না। তবুও জমেনি উদ্বোধনী অনুষ্ঠান। অধিক সন্ন্যাসীতে গাঁজন নষ্ট হওয়ার মতো ব্যাপার। অনেক কিছুই ছিল, তবু যেন আসল উপাদান ছিল অনুপস্থিত। প্রথম পর্ব তো দিশাহীন, মন্থর ও উৎকর্ষহীন। ’

আজকাল আরও লিখেছে, ‘এরিয়াল ক্রিকেটের লেজার শো জমেনি। প্রথম থেকে শেষ পর্যন্ত রবীন্দ্রনাথের মইয়ে চড়ে উতরে গেল এবারের অনুষ্ঠান। তাই বলতে হয় উদ্বোধনী হল রবীন্দ্রময়। ’

ভারতীয় একটি প্রতিষ্ঠানের করা এই লেজার শো নিয়ে বাংলাদেশের দর্শকদের কেউ কেউ সাফ গেমসের লেজার শোর সঙ্গে তুলনা করে কিছুটা ম্লান হয়েছে এমনটা বলার চেষ্টা করলেও ঢাকার সংবাদপত্রে তার কোনো ছাপ কিন্তু পড়েনি।

আর কলকাতার সংবাদপত্র লেজার শো’র নিন্দা করলে তা কিন্তু নিজের গায়েই লাগবে। কারণ এবারের লেজার শোটি ভারতীয় প্রতিষ্ঠান উইজক্র্যাফ্ট-এর করা।     

আনন্দবাজারের সমালোচনা আজকালের চেয়ে আরও বেশি। তারা উদ্বোধনী অনুষ্ঠানই নয়, সড়কে মানুষের জট, প্রেসবক্সের সমস্যা সবকিছুই নিয়ে এসেছে তাদের রিপোর্টিংয়ে। তারা লিখেছে, ‘অনুষ্ঠানের জন্য এমনই শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত বক্স বানানো হয়েছে যে, তার ভিতর দিয়ে আওয়াজ ঢুকছে না। কাজ করছে না কোজড সার্কিট টিভি। ইন্টারনেট সংযোগ নেই। ’

তবে আলোকসজ্জার ব্যাপারে আনন্দবাজার অবশ্য আজকালের মতো মনোভাব পোষণ করেনি। তারা লিখেছে, ‘বিষ্যুদবারের সন্ধ্যায় লেজারই বাংলাদেশের মান বাঁচিয়ে গেল। ’

হয়তো ভারতীয় প্রতিষ্ঠানের লেজার শো বলেই!

অনুষ্ঠানের ভারতীয় অংশের সমালোচনা করে আনন্দবাজার পত্রিকা লিখেছে, ‘অনুষ্ঠানে ভারতীয় অংশ বলতে যা দেখানো হল তা কেবল বলিউডি নাচ-গান। বিশ্বকাপে ভারতীয় ক্রিকেট মানে তো কপিল থেকে গাওস্কর। সচিন থেকে সৌরভ। কোনও দৃশ্যায়নে ক্রিকেট গুরুত্ব পেল না, এ কেমন বিশ্বকাপ ক্রিকেটের উদ্বোধন? নাকি একে বিচিত্রানুষ্ঠান হিসেবে দেখতে হবে? ব্যাট-বল-গ্লাভসের বাইরে?’

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বক্তব্যের উল্লেখ করে আনন্দবাজারের প্রতিবেদক লিখেছেন, ‘ক্রিকেটের আঙিনায় ভাষা দিবস উদযাপনের ডাক বা বঙ্গবন্ধুর উত্তাল আহ্বান যে খুব সাড়া ফেলল, তার প্রমাণ নেই। ’

উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের প্রশংসা করে যারা লিখেছে তাদের মধ্যে দৈনিক গণশক্তি ও দৈনিক প্রয়াগ উল্লেখযোগ্য।  

দৈনিক প্রয়াগ লিখেছে, ‘দক্ষিণ এশীয় গণ্ডি ছাড়িয়ে ঝলমলে ও চোখ ধাঁধানো এক অন্যরকম উদ্বোধনী অনুষ্ঠান দেখলো ক্রিকেট বিশ্ব। দরিদ্র একটি দেশে ক্রিকেটকে নিয়ে কত উদ্যম, জোয়ার আর প্রাণশক্তি একসঙ্গে ঢেউয়ের মতো এগিয়ে যেতে পারে- তাই যেন দেখালো ঢাকা। ’

অনুষ্ঠানের প্রশংসা করে প্রয়াগ আরও লেখে, ‘ ইতিহাস ও সংস্কৃতির মেলবন্ধনে বঙ্গবন্ধু স্টেডিয়ামে এদিন দক্ষিণ এশিয়ার ভারত, বাংলাদেশ ও শ্রীলঙ্কার অন্য এক রূপকেই দেখা গেল। এর মধ্য দিয়েই হয়ে গেল দশম বিশ্বকাপ ক্রিকেটের বোধন। ’

‘এদিন ঢাকার বঙ্গবন্ধু জাতীয় স্টেডিয়ামে লেজার শো ছাড়িয়ে গেল ’৯৬-এ ইডেনের লেজার শো’কে’, একথাও উল্লেখ করেন প্রয়াগের প্রতিবেদক।

‘সংবাদ প্রতিদিন’ উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের সংবাদের শুরুতেই লিখছে, ‘শুরুর আগে একটা আশঙ্কা ছিল। নয়াদিল্লিতে কমনওয়েলথ গেমস এবং গুয়ানঝু অলিম্পিকের বর্ণোজ্জল উদ্বোধন সম্প্রতি দেখেছে মানুষ। ঢাকার কাছে উদ্বোধনটি ছিল বড় মাপের চ্যালেঞ্জ। ’ তবে শেষ পর্যন্ত কলকাতা থেকে আসা পত্রিকাটির প্রতিবেদক লিখেছেন, ‘প্রথম দিনটা মনে গেঁথে রইল। আগামী দেড় মাসের রসদ ওখান থেকেই তো পেতে হবে ক্রিকেটারদের, সংগঠকদের, সাংবাদিকদের। ’

‘বর্তমান’ পত্রিকার ঢাকা সফরে আসা প্রতিবেদক লিখছেন, ‘ঢাকা শহরে পা রাখার পর থেকে চারিদিকে চরম বিশৃঙ্খলা চোখে পড়ছে। উদ্যোক্তাদের দেখার পর বার বার মনে হয়েছিল, পারবে তো বাংলাদেশ? পারবে তো বাঙালি? তবে ধারণাটা বদলাতে সময় লাগলো না। ... সোয়া দু’ঘণ্টার অনুষ্ঠানে এপার-ওপার বাংলা মিলেমিশে একাকার হয়ে গেল। ’

ভিনদেশি ইংরেজি পত্রিকাগুলোতে অবশ্য বার্তা সংস্থাগুলোর পরিবেশিত সংবাদই বেশি প্রকাশিত হয়েছে।

টাইমস অব ইন্ডিয়ার প্রতিবেদনে উদ্বোধনী অনুষ্ঠানকে ‘চোখ ধাঁধানো’ বলে উল্লেখ করা হয়েছে।

দ্য হিন্দু’র শিরোনাম হচ্ছে, ‘এ শো অব কালার অ্যান্ড ট্রাডিশন’। প্রতিবেদনটিতে উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের প্রশংসা করা হয়।  

দুবাইভিত্তিক পত্রিকা গালফ নিউজ লিখেছে, ‘উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের দিনটি বাংলাদেশের জন্য একটি ঐতিহাসিক দিন। ’

নিউজিল্যান্ডের পত্রিকা নিউজিল্যান্ড হেরাল্ড প্রশংসাই করেছে। তারা লিখেছে, ‘৪০ মিলিয়ন ডলার ব্যয়ের অনুষ্ঠানের দু’টি বিষয় উল্লেখ করার মতো। প্রথমটি ১৪ অধিনায়কের রিকশায় প্রবেশ, দ্বিতীয় বিষয় হলো: ঝুলন্ত ক্রিকেট। ’

বাংলাদেশ সময়: ২১১৫ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ১৮, ২০১১

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।