ঢাকা, শুক্রবার, ১২ বৈশাখ ১৪৩১, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫

খেলা

বিশ্বকাপে না থেকেও আছেন মাশরাফি

স্পোর্টস করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২০১৫ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ১৮, ২০১১
বিশ্বকাপে না থেকেও আছেন মাশরাফি

ঢাকা: বলতে বলতে কণ্ঠ ধরে আসছিলো মাশরাফির। মনের ভেতরে জমে থাকা চাপা কষ্ট জল হয়ে চোখ বেয়ে বেরিয়ে আসার মতো অবস্থা।

তবুও নিজেকে শান্ত রাখলেন নড়াইল এক্সপ্রেস। আবেগ সংবরণ করলেন ইস্পাত কঠিন মন দিয়ে।

মানুষ বলে সবকিছু চেপে যাওয়া যায় না। অভিব্যক্তি থেকেও কখনো কখনো মনের ভেতরটা পড়া যায়। ভীষণ কষ্টে আছেন মাশরাফি। শরীরে কোন আঘাত লাগেনি। হাঁটুতে যে চোট লেগেছিলো তা সেরে গেছে। চোটটা মনের ভেতরে। দহণ করছে অহরনিশি।   

নড়াইল এক্সপ্রেস শুক্রবার অনুশীলন নেটে গতির ঝর তোলেন। লাইন-লেন্থ সব যথার্থ হওয়ায় মাশরাফির বল খেলতে মোহাম্মদ আশরাফুলের সমস্যাই হচ্ছিলো। বেশির ভাগ বল রক্ষণাত্মক ভঙ্গিতে নিয়ন্ত্রণ করেছেন সাবেক অধিনায়ক। ওই দৃশ্য দেখে অনুশীলনে উপস্থিত কারো বুঝতে বাকি নেই ‘মাশরাফি খেলার মতো ফিট’। অথচ তিনি বিশ্বকাপে খেলবেন না। দর্শক হয়ে খেলা দেখবেন। সেটা যেন বেশি বেশি পিড়া দিচ্ছে দেশ সেরা পেসারকে,“ছন্দে থেকে পুরো লেন্থে বল করছি। গতি তুলছি। তবুও আমার বিশ্বকাপ খেলা হবে না। খুব কষ্ট হচ্ছে। ”

অনুশীলনে ১৫ জন ক্রিকেটারই ছিলেন। রাত পোহালে যারা খেলতে নামবেন সেই তরকাদের তারকা মাশরাফি প্রত্যেকের আগ্রহের কেন্দ্র বিন্দুতে ছিলেন। শুধু দেশের নয়, বিদেশ থেকে বিশ্বকাপ কাভার করতে আসা সাংবাদিকরাও খানিক সময়ের জন্য ব্যস্ত হয়ে পড়েন মাশরাফিকে নিয়ে। কষ্ট চেপে রেখে জাতীয় দলের সম্ভাবনা নিয়ে দু’চার কথা বলতে হলো নড়াইল এক্সপ্রেসকে।

মঙ্গল কামনা করেছেন বিশ্বকাপ দলের,“যারা একাদশে খেলবে আশা করবো প্রত্যেকে নিজের দায়িত্ব সম্পর্কে সচেতন থাকবে। বোলাররা লাইন-লেন্থ ধরে বল করলে শেবাগরা কিছু করতে পারবে না। পেসাররা ভালো একটা শুরু এনে দিতে পারলে স্পিনারা বাকি কাজ করতে পারবে। আমাদের ব্যাটিং যথেষ্ট ভালো। তামিম, ইমরুল, জুনায়েদ রান পেলে সাকিব ইনিংসটাকে ভালো জায়গা নিয়ে যেতে পারবে। ”

মাশরাফির অনেক দিনের পুরনো সতীর্থরাই বিশ্বকাপের সৈনিক। অপরিহার্য বোলারকে ছাড়া খেলতে নামতে তাদেরই ভালো লাগে কি করে। অধিনায়ক সাকিব যেমন বললেন,“মাশরাফি ভাই থাকলে খুবই ভালো হতো। পেস আক্রমণ শক্তিশালী হতে পারতো। তার অনুপস্থিতিতে যারা খেলবে তারাও ভালো। ছয় মাস হলো প্রত্যেকে ভালো ক্রিকেট খেলছে। সমস্যা হবে না। ”

ভারতের সঙ্গে বরাবরই দুর্বার মাশরাফি বিন মুর্তজা। ৮৩’র বিশ্বচ্যাম্পিয়নদের বিপক্ষে আগের যে দুটি জয় আছে বাংলাদেশের সেখানে ম্যাচ সেরা হয়েছিলেন মাশরাফি। ২০০৪ সালের ২৬ ডিসেম্বর বঙ্গবন্ধু জাতীয় স্টেডিয়ামে ভারতের বিপক্ষে অলরাউন্ড নৈপূণ্য দেখিয়েছিলেন। ব্যাট হাতে ৩১ রান নিয়ে অপরাজিত এবং ৯ ওভার বল করে ৩৬ রানে দুই উইকেট পেয়ে ম্যাচ সেরা। ত্রিনিদাদের পোর্ট অ স্পেনে ঐতিহাসিক বিজয়ে নড়াইল এক্সপ্রেসের অবদান অনেক। ৯.৩ ওভার বল করে ৩৮ রানে চার ব্যাটসম্যানকে ফিরিয়েছিলেন। বিশ্ব ক্রিকেট বোদ্ধারা ম্যাচ সেরার পুরস্কার তুলে দিয়েছিলো মাশরাফির হাতে।

বাংলাদেশের সাফল্যের প্রেরণার নাম মাশরাফি শুক্রবার উদ্বোধনী ম্যাচে না থেকেও থাকবেন ছায়া হয়ে। মানুষের মুখে মুখে, অন্তরের অন্তস্থলে। ওয়েস্ট ইন্ডিজে বলে ছিলেন ‘ধরিয়ে দেবানে’। ধরিয়ে দিয়েছিলেন। এবার ভারতকে ধরিয়ে দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেননি কেউ। কারণ মাশরাফি যে নেই।  

বাংলাদেশ সময়: ২০১০ ঘন্টা, ফেব্রুয়ারি ১৮, ২০১১

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।