ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১২ বৈশাখ ১৪৩১, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫

খেলা

অতীত ভুলতে চান ধোনি, সাকিবের স্মৃতিতে ত্রিনিদাদ

সেকান্দার আলী | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৮৪৪ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ১৮, ২০১১
অতীত ভুলতে চান ধোনি, সাকিবের স্মৃতিতে ত্রিনিদাদ

ঢাকা: ‘ভুলতে চাইলেও কি ভোলা যায়!’ মহেন্দ্র সিং ধোনিরা চান ভুলে যেতে দুঃস্বপ্নের সেই দিন। যেদিন পোর্ট অ স্পেনে ভারতকে পাঁচ উইকেটে হারিয়েছিলো বাংলাদেশ।

১৭ মার্চ ২০০৭, এখনো ফিরে ফিরে আসে ভারত-বাংলাদেশ ক্রিকেট আলোচনায়। ২০১১ সালের বিশ্বকাপের উদ্বোধনী ম্যাচ পূর্ব সাংবাদ সম্মেলনেও ধোনিকে স্মরণ করিয়ে দেওয়া হয় সে দিনের কথা। ভারত অধিনায়কের উত্তর ছিলো,“যা হয়ে গেছে তা নিয়ে ভাবতে চাই না। ”

সত্যিই তো; ওয়েস্ট ইন্ডিজ বিশ্বকাপ নিয়ে ভেবে দুঃখ বাড়িয়ে লাভ কি। তার চেয়ে বরং সাম্প্রতিক সুখস্মৃতি মনে করা ঢের উত্তম। দু’বছর ধরে দারুণ ক্রিকেট খেলছে ভারত। জয়, জয় এবং জয় শব্দের সঙ্গে মিতালি হয়েছে। সুপার সনিক গতিতে এগিয়ে চলা ক্রিকেট পরাশক্তিরা নিশ্চয় ভয় পাবে না। সত্যিই কি তাই? ভয় না পেলে পোর্ট অ স্পেনের কথা মনে করতে চায় না কেন? উল্টো প্রশংশাও করে,“বাংলাদেশ ভালো দল। সম্প্রতি অনেক ভালো ক্রিকেট খেলছে। খেলাও হচ্ছে তাদের মাঠে। আমার মনে হয় ভালো প্রতিদ্বন্দ্বীতা হবে। ”

অধিনায়ক হিসেবে প্রতিপক্ষকে সম্মান দেখানোর রেওয়াজ মেনে নিশ্চয় অভিব্যক্তি প্রকাশ করেননি শতকোটি মানুষের নেতা ধোনি। উন্নাসিক ভারতীয়দের মানসিকতায় এমনিতে পরিবর্তন আসেনি। সাকিব বাহিনী গেল দুই বছর যেভাবে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট অঙ্গন দাপিয়ে বেড়িয়েছেন, তাতে সমীহ না করে উপায় আছে। ওয়েস্ট ইন্ডিজকে টেস্ট এবং একদিনের ক্রিকেট সিরিজে ধবলধোলাই, জিম্বাবুয়েকে পরপর তিনটি সিরিজে হারিয়ে দেওয়া, ফর্মের তুঙ্গে থাকা ইংলিশদের কাছ থেকে জয় ছিনিয়ে নেওয়া, নিউজিল্যান্ডকে মিরপুর শেরেবাংলা জাতীয় ক্রিকেট স্টেডিয়ামে ৪-০’তে ধবলধোলাই। একদিনের ক্রিকেট র‌্যাঙ্কিংয়ে ওয়েস্ট ইন্ডিজকে পেছনে ফেলে অষ্টম স্থানে উন্নীত হওয়ার পর বলে দেওয়ার প্রয়োজন নেই বাংলাদেশ ভালো খেলছে।  

মিনোস শব্দটি বাংলাদেশের সঙ্গে এখন জুড়ে দেওয়ার সহস করে না কেউ। বরং স্বাগতিক দলের ক্রিকেটারদের বৈশিষ্টগুলো উত্তম রূপে তুলে ধরে ধোনি প্রমাণ করলেন শনিবারের দিবারাত্রির খেলা নিয়ে ভারতই চাপের মুখে আছে। “ভালো মানের বেশ কয়জন স্পিনার আছে বাংলাদেশ দলে। তাদের মধ্যে তিনজন বাঁহাতি অফ স্পিনার। যাদের ওপর নির্ভর করে বাংলাদেশ। এখানকার কন্ডিশনও স্পিন সহায়ক। তাদের ব্যাটসম্যানরাও ভালো করছেন। সব মিলিয়ে ভারসাম্য একটি দল বাংলাদেশ। ”

এতকিছুর পরও জয়ের ক্ষুধা নিবারণের তারণা আছে ভারতের। প্রতিশোধের আগুণও জ্বলছে। তবুও মুখ ফুটে একবারও ধোনি বলেননি বাংলাদেশকে হারিয়ে দেবে তার দল। ঘুরিয়ে বলেছেন,“আমরা ভালো ক্রিকেট খেলছি। প্রত্যেকে সামর্থ্য অনুযায়ী চেষ্টা করছে। দু’টি প্রস্তুতি ম্যাচ জিতে এখানে এসেছি। সেই সঙ্গে যোগ হয়েছে উপমহাদেশের কন্ডিশন। সেজন্য আমাদেরকে ফেভারিট ভাবা হচ্ছে। ”

বাংলাদেশ অধিনায়কও জয় পাওয়ার বিষয়ে খুব বেশি কিছু বলেননি। অনেক বেশি কূটনৈতিক ছিলেন সংবাদ সম্মেলনে। “আমাদের ৬টি ম্যাচ খেলতে হবে। আমরা ম্যাচ বাই ম্যাচ চিন্তা করছি। আমাদের কেবল ভারত নিয়ে চিন্তা করলে হবে না। আমরা চিন্তা করছি কিভাবে নিজেদের উন্নতি করা যায়। কি করে সাফল্য কড়ায়ত্ব করা যায়। বেসিক কাজগুলো আমাদের করতে হবে। সেটা করতে পারলেই ভালো ক্রিকেট খেলা সম্ভব হবে। ”

ওয়েস্ট ইন্ডিজ বিশ্বকাপে খেলা অনেক ক্রিকেটারই এখন বাংলাদেশ দলে পরিণত। ভারতের বিপক্ষে যে তিনজনের ব্যাটে রান এসেছে তারা এখন দলের মূল ভূমিকায়। ৫৬ বলে ৫৩ রান করা সাকিব অধিনায়ক। ৫৬ রানের হার না মানা ইনিংস খেলা মুশফিকুর রহিম উইকেটরক্ষক। এবং ৫১ রানের ঝড়ো ইনিংস খেলা বিস্ময় বালক তামিম ইকবাল সহ-অধিনায়ক।

আব্দুর রাজ্জাকও আছেন স্পিনারদের নেতা হয়ে। ১০ ওভারে ৩৫ রান দিয়ে গুরুত্বপূর্ণ তিন ব্যাটসম্যানকে ফিরিয়েছিলেন বাঁহাতি এই স্পিনার।

শীর্ষ ওয়ানডে অলরাউন্ডার সাকিব, নিখাদ স্পিনার রাজ্জাক, স্পিন অলরাউন্ডার নাঈম ইসলাম ও মাহমুদউল্লাহরা কিক করলে শনির দশায় পেয়ে বসতে পারে ভারতকে। এর সঙ্গে তামিম ইকবালের মারকাটারি ব্যাটিং। ইমরুল কায়েস, জুনায়েদ সিদ্দিকী, মুশফিকুর রহিমরা ভালো ইনিংস খেলতে পারলে এবং খন্ড খন্ড জুটি গড়ে তোলা সম্ভব হলে জয় দিয়ে বিশ্বকাপ অভিযান শুরু করতে পারে বাংলাদেশ।

অনেক দিক থেকে ভারতের বিপরীতে বাংলাদেশকে এগিয়ে রাখা যেতে পারে। হাজার হাজার সমর্থক, সংবাদমাধ্যমের সমর্থন, চেনা মাঠ, পছন্দের উইকেট তৈরি হয়েছে মিরপুরে। সঙ্গে সুখস্মৃতিও আছে। সাকিবের জন্য তো অবশ্যই,“ভারতের বিরুদ্ধে জয় স্মরণীয় হয়ে আছে। তাছাড়া পুরো ক্যারিবীয় বিশ্বকাপই আমাদের জন্য স্মরণীয়। তবে বিশেষ ভাবে বলবো ভারত ও দক্ষিণ আফ্রিকাকে হারানোর স্মৃতিটা। ”

আগের বিশ্বকাপের চেয়ে এবার দলটিও বেশ ভালো বলে দাবি করেছেন সাকিব। ভালো খেলা তো হতেই পারে। অধিনায়কের মতে,“২০০৭ এমন হতো যে একদিন আমরা খুব চাঙ্গা থাকতাম, আবার একদিন ডাউন, কিন্তু এখন আমাদের দলটার অমন অবস্থা নেই। এখন আমাদের দলটি প্রতিদিনই একই রকম মানসিকতা নিয়ে মাঠে আসে। আমাদের ফাস্ট বোলাররা ভাল বল করছে। ব্যাটসম্যানরা দারুণ আত্মবিশ্বাসী ও ধারাবাহিক। এবং আমাদের ফিল্ডিংটা বেশ উন্নতি করেছে এ সময়ে। ”

ফলাফল কি হবে সেটা পরের কথা। সাকিবের পরামর্শ মেনে খেললে ভলো না করে উপায় নেই,“আমার মনে হয় চাপ নেয়ার মতো যথেষ্ঠ বয়স ও অভিজ্ঞতা সবার আছে। আমি কেবল তাদের বলেছি এটা অন্য আর দশটি ম্যাচের মতোই একটি ম্যাচ। আমাদের সবাইকে কেবল নিজেদের দায়িত্বটা পালন করে যাওয়ার কথা বলেছি। ”

বিশ্বকাপের জন্য দারুণ প্রস্তুতি নিয়েছে মহেন্দ্র সিং ধোনির দল। দক্ষিণ আফ্রিকা সফর শেষে দেশের মাটিতে অস্ট্রেলিয়া এবং নিউজিল্যান্ডের মতো ক্রিকেট পরাশক্তির বিপক্ষে প্রস্তুতি ম্যাচ খেলেছে। সব মিলিয়ে ভারতের প্রস্তুতি বাংলাদেশের চেয়ে যোজন যোজন এগিয়ে।

তুলনামূলক বাংলাদেশের বিশ্বকাপ প্রস্তুতি অতটা জোড়ালো হয়নি। ডিসেম্বরে সর্বশেষ আন্তর্জাতিক সিরিজ খেলেছে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে। এরপর ঢাকা প্রিমিয়ার ক্রিকেট খেললেও আন্তর্জাতিক ক্রিকেট খেলা হয়নি। তবে দুটি প্রস্তুতি ম্যাচের সুযোগ হয়েছে। ১২ ফেব্রুয়ারি চট্টগ্রাম জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামে কানাডাকে নয় উইকেটের বিশাল ব্যবধানে হারালেও পাকিস্তানের কাছে মঙ্গলবার বাজেভাবে হেরে যায়। যদিও এসব নিয়ে ভাবছেন না বাংলাদেশ অধিনায়ক। ভাবছেন একটি নতুন ম্যাচের কথা। যেখানে নেতৃত্ব দিতে হবে তাকে।

বাংলাদেশ সম্ভাব্য একাদশ: সাকিব আল হাসান (অধিনায়ক), তামিম ইকবাল (সহ-অধিনায়ক), ইমরুল কায়েস, জুনায়েদ সিদ্দিকী, মুশফিকুর রহিম, মাহমুদউল্লাহ, নাঈম ইসলাম, রকিবুল হাসান, আব্দুর রাজ্জাক, রুবেল হোসেন ও শফিউল ইসলাম।

ভারত সম্ভাব্য একাদশ: মহেন্দ্র সিং ধোনি (অধিনায়ক), বীরেন্দ্র শেবাগ, পিজুস চাওলা, গৌতম গম্ভীর, হরভজন সিং, জহির খান, বিরাট কোহলী, আশিস নেহরা/মুনাফ প্যাটেল, ইউসুফ পাঠান, সুরেশ রায়না, শচীন টেন্ডুলকার।  

বাংলাদেশ সময়: ১৮২৪ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ১৮, ২০১১

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
welcome-ad