ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১৪ চৈত্র ১৪৩০, ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৭ রমজান ১৪৪৫

খেলা

সুন্দর বাংলাদেশকে দেখলো বিশ্ব

সেকান্দার আলী | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২০৩০ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ১৭, ২০১১
সুন্দর বাংলাদেশকে দেখলো বিশ্ব

ঢাকা: অনিন্দ্য সুন্দর যাকে বলে বিশ্বকাপ উদ্বোধনী মঞ্চ ঠিক তাই। রঙীন আলোয় বঙ্গবন্ধু জাতীয় স্টেডিয়ামে দেখার মতো দৃশ্য তৈরি হয়।

রাতের আকাশে বর্ণীল আলো বিচ্ছুরিত হয় ক্ষণে ক্ষণে।

শিহরিত হয়ে শরীর। আবেগ মেশানো আনন্দ ধ্বনি দেন দর্শকরা। এই দর্শক হলেন বাংলার মানুষ। যাদের স্বপ্ন লালিত বিশ্বকাপের পর্দা উঠে জমকালো উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের মধ্যদিয়ে। বিশ্বের মানুষ জেনে যায় বাঙ্গালীও পারে। অতিথি পরায়ন বীরের জাতি ‘সুন্দর’ উপহার দিয়েছে বিশ্বকে।

চীনের বেইজিং অলিম্পিক বা গুয়াজু এশিয়ান গেমসকে ছাড়িয়ে যাওয়ার মতো উপাত্ত হয়তো অনুষ্ঠানে ছিলো না। তবে আন্তরিকতা ছিলো সামর্থ্যরে ভেতরে সুন্দর একটি উদ্বোধনী অনুষ্ঠান উপহার দেওয়ার।

ইভেন্ট ম্যানেজমেন্ট প্রতিষ্ঠান উইজক্রাফটকে দায়িত্ব দেওয়া হয় অনুষ্ঠান সুসম্পন্ন করার জন্য। আন্তর্জাতিক ক্রিকেট কাউন্সিলের অনুমোদন পেয়ে উইজক্রাফট বাংলাদেশের এশিয়াটিককে নিয়ে চোখধাঁধানো অনুষ্ঠানের পরিকল্পনা করে। প্রায় একমাসের প্রস্তুতি শেষে বৃহস্পতিবার ১৭ ফেব্রুয়ারি বঙ্গবন্ধু স্টেডিয়ামে সন্ধ্যায় অবগুন্ঠন খুলে দেওয়া হয়। চমক দেখে মানুষ।

যাকে ঘিরে এই উদ্বোধনী অনুষ্ঠান সেই ক্রিকেট কিন্তু বাদ জায়নি। শিল্প ব্যাংকের দেয়ালে বড় পর্দায় ওপরে লেজার রশ্মির আলো ফেলে ক্রিকেট ম্যাচ দেখানো হয়। যাকে বলে আলোর খেলা। থেকে থেকে দপ করে জ্বলে ওঠা উর্ধ্বমুখি আতশ বাজির বিচ্ছুরিত আলো দারুণ দেখতে।

শ্রুতিমধুর হিন্দি গানের তালে তালে পরিবেশিত হয় নৃত্য। এ দেশের স্কুলের ছেলে মেয়েরাই কিন্তু ভারতের গানের সঙ্গে তাল মিলিয়ে নেচেছেন। দর্শকদের করতালিও কুড়িয়েছেন।

আতশ বাজির ফোয়ারা যেমন ছিলো তেমনি লেজার রশ্মির তুর্কি নাচন অনুষ্ঠানকে সুশোভিত করে তোলে। দুর্বলতাগুলো আড়াল করে রেখেছে আলোর ছোটাছুটি।

বিশ্বকাপের প্রধান সহ-আয়োজক ভারতের জন্য বরাদ্দ ছিলো ১২ মিনিট। যেখানে তুলে ধরা হয় তাদের ঐতিহ্য, ইতিহাস, সংস্কৃতি। শ্রীলঙ্কার জন্য বরাদ্দ সময়টুকু যথার্থ ব্যবহার করা হয়েছে। সিংহ মূর্তির জাহাজ নিয়ে লঙ্কানরা পাড়ি জমায় উদ্বোধনীর মঞ্চে। শিল্পী, কলাকুশলীদের নামিয়ে নৌঙর তোলে। হাতির সমাবেশ ঘটে ছিলো অনুষ্ঠানে। সত্যিকারের হাতি নয়। প্রতিকৃতি নিয়ে সুরের তালে নাচ দেখানো হয়।

সিংহল ঐতিহ্য খানিক সময়ের জন্য দু’চোখ ভরে দেখে নেয় উপস্থিত দর্শকরা। স্যাটেলাইটের কল্যাণে দৃশ্যগুলো একদেশ থেকে অন্যদেশ, এক মহাদেশ থেকে অন্য মহাদেশে দেখা গেছে।

সবশেষে বাংলাদেশের অংশ। ২০ মিনিট পেয়েছে আয়োজক বাংলাদেশ। খ্যাতিমান কণ্ঠশিল্পী সাবিনা ইয়াসমিন শোনান দেশের গান। জনপ্রিয় গায়িকা মমতাজ পরিবেশন করেন আমার ঘুম ভাঙ্গায়া গেলোরে মরার কুকিলে.., খায়রুন লো.. এবং নান্টু ঘটকের কথা শুইনা..। রুনা লায়লা গেয়েছেন শিল্পী আমি শিল্পী.., দমাদম মাস ক্যালেন্ডার.. জনপ্রিয় দুটি গান।

শিবলী মাহমুদ পরিবেশন করেন নৃত্য, বৈষ্টমি, গ্রামবাংলার কৃষক, ভাষা শহীদদের স্মরণে আব্দুল গাফফার চৌধুরী রচিত একুশে ফেব্রুয়ারির গান আমার ভায়ের রক্তে রাঙ্গানো একুশে ফেব্রুয়ারি আমি কি ভুলিতে পারি দৃশ্যায়ন করা হয়, স্বাধীনতার চেতনাকে বিশ্বের দরবারে তুলে ধরা হয় নৃত্যের তালে তালে।

বঙ্গবন্ধুর কন্ঠে গর্জে উঠে এবারের সংগ্রম স্বাধীনতার সংগ্রাম, এবারের সংগ্রম মুক্তির সংগ্রাম। এছাড়াও দেশাত্ববোধক গানের সঙ্গে ডিসপ্লে হয়।

সবকিছু যে ছবির মতো। বাঙ্গালীর গায়ে কাটা দেওয়ার মতো অবস্থা। কে কবে এতটা আবেগ দিয়ে দেশকে বিদেশের মানুষের সমানে তুলে ধরেছে। এই প্রথম এত বিশাল পরিসরে প্রচার পেলো বাংলাদেশের ঐতিহ্য। সুযোগ করে দিয়েছে ক্রিকেট। যাকে ঘিরে উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের মহাযজ্ঞ।

বাংলাদেশ সময়: ২০১৭ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ১৭, ২০১১

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।