ঢাকা, শুক্রবার, ৬ বৈশাখ ১৪৩১, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫

ফুটবল

ফ্যাব ফোরের ম্যাজিকের অপেক্ষায় ভোররাত

সাঈদ শিপন, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৭৫৬ ঘণ্টা, জুন ১৫, ২০১৪
ফ্যাব ফোরের ম্যাজিকের অপেক্ষায় ভোররাত ছবি: সংগৃহীত

ঢাকা: লিয়নেল মেসি, গঞ্জালো হিগুয়েইন, সার্জিও আগুয়েরো, এ্যাঞ্জেল ডি মারিয়া- এ শুধু এক একটি নাম না, বিশ্বের বাঘা বাঘা গোলরক্ষকদের জন্য মূর্তিমান আতঙ্ক। যে কোনো রক্ষণ দুর্গকে নিমিষেই দুমড়ে মুচড়ে দিতে এদের একজনই যথেষ্ট।

আর এ চার (ফ্যাব ফোর) তারকাই কি না এক সঙ্গে লড়বেন আর্জেন্টিনার হয়ে।
 
তাইতো দেশটির ফুটবল ভক্তরা নিজেদের দলকে ধরে নিচ্ছেন বিশ্বের অন্যতম শক্তিশালী দল হিসেবে। তাদের বিশ্বাস, রক্ষণভাগে কিছুটা দুর্বলতা থাকলেও, ফ্যাব ফোরের সম্মিলিত প্রচেষ্টা কাটিয়ে দেবে দীর্ঘদিনের ‘বিশ্বকাপ’ খরা। আর তাদের এ স্বপ্ন যাত্রা শুরু হচ্ছো কয়েক ঘণ্টা পরেই।
 
সোমবার ভোর ৪ টায় এবারের বিশ্বকাপে নিজেদের প্রথম ম্যাচ খেলতে নামেবে শিরোপার অন্যতম দাবিদার আর্জেন্টিনা। হোক না ভোররাত, প্রিয় দলের খেলা দেখতে তা কোনো বাধাই সৃষ্টি করতে পারবে না। লিয়নেল মেসি, গঞ্জালো হিগুয়েইন, সার্জিও আগুয়েরো, এ্যাঞ্জেল ডি মারিয়া এক একটি সুপার হিরোর সুপার ম্যাজিক দেখতে সকাল থেকেই কাউন্ট ডাউনে নেমে পড়েছে দলটির ভক্ত সমর্থকেরা।
 
বর্তমান বিশ্ব ফুটবলের অন্যতম সফল এ চার এ্যাটাকার নিজ ক্লাবের পক্ষে যোগ্যতার প্রমাণ দিয়ে হয়ে উঠেছেন ক্লাবের মধ্যমনি। এখন দেশের জন্য এক সঙ্গে লড়বেন তারা। ক্লাব ফুটবলে নিজ ক্লাবকে দুহাত উজাড় করে দেওয়া এ চার সুপার হিরো কি পারবেন আকাশী-সাদা জার্সিধারীদের শীর্ষস্থানে নিয়ে যেতে? কাটাতে পারবে কি ২৬ বছরের শিরোপা খরা।
 
দেশটির ফুটবল ঈশ্বর ডিয়োগ ম্যারাডোনার হাত ধরে সেই ১৯৮৬ বিশ্বকাপে টফি উচু করে ধরে ছিলো আর্জেন্টিনা। এর পর একে একে ৬টি বিশ্বকাপ অর্থাৎ ২৬ বছর চলে গেছে। আর বিশ্ব শিরোপা হাতে নিয়ে আনন্দ করতে পারেনি দেশটি।
 
২৬ বছরে পারেনি তাই কি? এবার পারবে-এমন স্বপ্নে বিভোর ভক্তদের জন্য কিছুটা সুখব হলো দেশটির ফুটবল ঈশ্বর ডিয়োগা ম্যারাডোনা যেবার বিশ্বকাপের ট্রফি তুলে ধরেছিলেন সে সময় তার বয়স ছিলো ২৬ বছর। আর এবারের স্বপ্ন দেখানো ফ্যাব ফোরের ৪জনের বয়স এখন ২৬ বছর।
 
বার্সেলোনার সুপারস্টার লিয়নেল মেসি এরইমধ্যেই কিংবদন্তী ফুটবলার দিয়েগো ম্যারাডোনাকে টপকে আর্জেন্টিনার সর্বকালের সেরা গোল স্কোরারের আসনে নিজেকে নিয়ে গেছেন। ৮৫ ম্যাচে তার গোল সংখ্যা ৩৭টি। আধুনিক বিশ্ব ফুটবলের অন্যতম সেরা খেলোয়াড় হিসেবেও তাকে বিবেচনা করা শুরু হয়েছে। আর্জেন্টিনার জার্সিতে বিবর্ণ মেসি এ বদনামও এখন অনেকটা মুছে গেছে। আর্জেন্টিনা দলের অধিনায়কের দায়িত্ব নিয়ে খেলা ২১ ম্যাচে তার গোল সংখ্যা ২০টি।
 
বার্সেলোনার চির শত্রু রিয়াল মাদ্রিদের তারকা ডি মারিয়াও নেই পিছিয়ে। চ্যাম্পিয়নস লীগ রিয়াল মাদ্রিদেকে চ্যাম্পিয়ন করতে রেখেছেন অন্যতম ভূমিকা। দেশের পক্ষে ডি মারিয়া ৪৫ ম্যাচে করেছেন ১১ গোল। অবশ্য গোলে সংখ্যা দিয়ে এ সুপার হিরোকে মূল্যায়ন করা ঠিক হবে না। পায়ের কারুকাজে তার ডিফেন্স চেরা পাসই তো প্রয়োজন দলের জন্য। গোল করতে আছেন মেসি, হিগুয়েইন ও আগুয়েরো।
 
সুযোগ সন্ধানী স্ট্রাইকার হিসেবে পরিচিত হিগুয়েইন জাতীয় দলের হয়ে ৩৬ ম্যাচে করেছেন ২২ গোল। রিয়েল মাদ্রিদ হয়ে সম্প্রতি তিনি যোগ দিয়েছেন ইতালিয়ান সিরি-আ লীগের ক্লাব নাপোলিতে।
 
ফ্যাব ফোরের অপর সদস্য ফুটবল ঈশ্বর ম্যারাডোনার মেয়ে জামাই আগুয়েরো। ম্যানচেস্টার সিটিতে আগুয়েরো নিজেকে চিনিয়েছেন বেশ ভালো ভাবেই। ৫০ ম্যাচে তার দখলে রয়েছে ২১ গোল। তবে আজ (সোমবার ভোর) জাতীয় দলের জার্সিতে ক্যারিয়ারের সবচেয়ে বড় পরীক্ষাটাই দিতে যাচ্ছেন ২৬ বছর বয়সী এই তরুণ। আর্জেন্টিনার আক্রমণভাগের যে ঔজ্জ্বল্য সেটা ম্লান করতে আজ খালি পায়ে আগুনের ওপর দিয়ে হাঁটার পরীক্ষা তাঁর।

আগুয়েরোর জন্যও তো আজকের ম্যাচটা এক প্রকার অগ্নীপরীক্ষা। কারণ ম্যানচেস্টার সিটিতে তার ফর্মে ভরসা রেখেই জুভেন্টাসের কার্লোস তেভেজকে দলে জায়গা দেননি কোচ আলেহান্দ্রো সাবেইয়া।
 
ইনজুরিতে থাকলেও ম্যানচেস্টার সিটিকে ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগ জেতাতে তার অবদান কম নয়। এখন অবশ্য ইনজুরি পেছনে ফেলে পুরো ফিট ২৬ বছর বয়সী আগুয়েরো। আর শুরু থেকে নিজের ছন্দে খেলতে পারলে আগুয়েরো কতটা ভয়ংকর সেটা ভালো করে জানেন বসনিয়ান তারকা ফরোয়ার্ড এডিন জেকো। ম্যানসিটিতে দুজন মিলে প্রতিপক্ষের জালে করেছেন গোল উৎসব। আজ সেই দুই বন্ধুই হয়ে যাচ্ছেন শত্রু।
 
প্রিয় দলের এমন চার সুপার হিরোর সুপার জাদু দেখার অপেক্ষায় বাংলাদেশের ছেলে, বুড়োসহ সববয়সীরা। প্রিয় দল খেলবে, গোল করবে, আর জিতবে এমনই প্রত্যাশা তাদের।
 
স্কুল ছাত্র হৃদয়। থাকে রামপুরা। স্কুলের টিফিনের টাকা জমিয়ে ৮০০ টাকা দিয়ে কিনেছেন প্রিয় দলের পতাকা। হৃদয়ের বলেন, হোক না যতই রাত খেলা দেখবই। আমার হিরো মেসি। তবে গঞ্জালো হিগুয়েইন, সার্জিও আগুয়েরো, এ্যাঞ্জেল ডি মারিয়া কেউ কম না। এমন প্লেয়ার যে দলে থাকে তাদের হারায় কে।
 
মিরপুরের কালশীর বিহারী পল্লীর ঘটনার প্রতিবাদ জানাতে জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে মানববন্ধনে যোগদেন সাইয়েল। খেলার কথা বলতেই দুঃখ ভুলে বলে ওঠে, আমি আর্জেন্টিয়ানার সমর্থক। মনে যত দুঃখই থাকুক, রাত জেগে খেলা দেখবই। আশা করি আর্জিন্টিনা জিতবে এবং কমপক্ষে চার গোল দেবে।
 
এমনই স্বপ্ন দেখছে ম্যারাডোনা পাগলে এদেশের ফুটবল ভক্তরা। ম্যারাডোনার পর বিশ্বকাপের টফির স্বপ্ন এবার তাদের পূরণ করবে সময়ের সেরা তারকা মেসি। দেখ যাক এখন তাদের এ স্বপ্নের প্রথম যাত্রা কেমন হয়। এ জন্য অপেক্ষা করতে হবে আমর মাত্র কয়েক ঘণ্টা।

বাংলাদেশ সময়: ১৭৫৩ ঘণ্টা, জুন ১৫, ২০১৪

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
welcome-ad