ঢাকা, মঙ্গলবার, ১০ বৈশাখ ১৪৩১, ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ শাওয়াল ১৪৪৫

ফুটবল

মাত্র ২ দিনের অপেক্ষা

বিশ্বকাপের ট্র্যাজিক হিরোরা

মুহাম্মদ মেহেদী হাসান | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০০৪৩ ঘণ্টা, জুন ১০, ২০১৪
বিশ্বকাপের ট্র্যাজিক হিরোরা

ঢাকা : বিশ্বদরবার যদি রাজ্য হয়, মেসি-নেইমার-রোনালদোরা নিশ্চয় রাজপুত্র। কেননা ফুটবল তো খেলার রাজাই।



খেলার রাজা ফুটবলের অনেক রাজপুত্রদের হাতে ওঠেনি ফুটবলের তাজমুকুট বিশ্বকাপ। তারা থেকে গেছেন তাজহীন ট্র্যাজিক হিরো হয়ে। অথচ তারা সকলেই এক-একজন ফুটবল রাজার যোগ্যতম পুত্র। বলছি ফিগো-স্টেফানো, প্লাতিনি-বেস্ট এর মত অনেক রাজপুত্রের কথা।

লুইস ফিগো। পর্তুগালের এই সুপারস্টার মিডফিল্ডার বার্সা-ইন্টার-রিয়ালের মত ক্লাবের দাপুটে খেলোয়াড় ছিলেন। ইউসেবিওর পর পর্তুগালের অন্যতম সেরা তিনি। ইউরোপ ও বিশ্বসেরা হয়েছেন। পর্তুগালের গোল্ডেন জেনারেশন দলের সদস্য ছিলেন। কিন্তু পর্তুগালকে কোন আন্তর্জাতিক শিরোপা এনে দিতে পারেননি।

আলফ্রেডো ডি স্টেফানো। আর্জেন্টিনায় জন্মানো এই বিশ্বসেরা তিনটি দেশ আর্জেন্টিনা-কলম্বিয়া-স্পেনের হয়ে খেলেছেন। কিন্তু বিশ্বকাপে কোয়ালিফাই করতে পারেননি কোন দলকেই। ৬২ সালে স্পেনকে কোয়ালিফাই করালেও চোটের কারণে বিশ্বকাপে যাওয়া হয়নি তার।

মিশেল প্লাতিনি। ফ্রান্সের এ খেলোয়াড় তিনটি বিশ্বকাপ খেলেছেন। যার দুটিতে সেমিফাইনাল অবধি। জেতা হয়নি কোন বিশ্বকাপ।

জর্জ বেস্ট। উত্তর আয়ারল্যান্ডের এ খেলোয়াড় ১৯টি ক্লাবের হয়ে খেলেছেন। ইউরোপ সেরা হয়েছেন। দেশকে বিশ্বকাপে কোয়ালিফাই করাতে পারেননি।

ফেরেন্স পুসকাস। তার খেলার সময় রিয়াল টানা ৫ বার ইউরোপিয়ান কাপ জেতে। তিনি ৫৫৩ ক্লাব ম্যাচে ৫২৫টি গোল করেন। জাতীয় দল হাঙ্গেরির হয়ে করেন ৮৫ ম্যাচে ৮৪ গোল। ১৯৫৪ সালের বিশ্বকাপে ফাইনাল খেলে তার দল ২-০ তে এগিয়ে থেকেও ৩-২ ব্যবধানে হারে পশ্চিম জার্মানির কাছে। গোড়ালির চোট নিয়ে কিছু সময় মাঠে ছিলেন পুসকাস। কেবল জেতা হয়নি ট্রফিটা।

ইউসেবিও। মোজাম্বিকে জন্ম হলেও খেলেছেন পর্তুগালের হয়ে। আফ্রিকার সর্বকালের সেরা তিনি। বেনফিকার হযে ৭২৫টি গোল করেন ৭২৭ ম্যাচে। ইউরোপ সেরা হয়ে প্রথম খেলোয়াড় হিসেবে জিতেছেন গোল্ডেন বুট। ১৯৬৬ বিশ্বকাপে ৯ গোল করে সর্বোচ্চ গোলদাতা হন। সেমিফাইনালে পেনাল্টি শুট আউটে ইংল্যান্ডের কাছে হারে পর্তুগাল।

সক্রেটিস। ফুটবলকে জয় করা ব্রাজিলের এই মহানায়কের কাছে বিশ্বকাপটা যেন শুধুই এক হাহাকার।

ইয়োহান ক্রুইফ। টোটাল ফুটবলের জনক বলা হয় তাকে। ক্লাবের হয়ে ৩৫০ গোলের সাথে নেদারল্যান্ডসের হয়ে করেছেন আরো ৩৩টি। মাঠে প্রায় সব পজিশনেই খেলতেন তিনি। ১৯৭৮ বিশ্বকাপে রাজনৈতিক কারণে নিজেকে প্রত্যাহার করে নেন তিনি। ফাইনালে স্বাগতিক আর্জেন্টিনার কাছে হারে নেদারল্যান্ডস।

রুদ খুলিত। তিনবারের ইউরোপ সেরা ও একবার বিশ্বসেরা হয়েছেন। পাশে পেয়েছেন মার্কো ফন বাস্তেন ও ফ্রাঙ্ক রাইকার্ডের মত বিশ্বসেরা সতীর্থদের। কিন্তু বিশ্বকাপ ছুঁয়ে দেখা হয়নি নেদারল্যান্ডসের এই তিন বন্ধুর কারোই।

পাওলো মালদিনি। বিশ্বকাপে সবচেয়ে বেশি সময় মাঠে কাটানোর রেকর্ড তার। ২৬ বছরের দীর্ঘ ক্যারিয়ারে ইতালির হয়ে খেলেছেন ১২০ ম্যাচ। এসি মিলানের হয়ে ৯০২টি ম্যাচ খেলে ৭টি সিরি-আ’র সাথে ৫টি ইউরোপিয়ান কাপ জিতেছেন। ইতালি বিশ্বকাপ জেতে ১৯৮২ ও ২০০৬ সালে। আর তিনি জাতীয় দলে খেলেন ১৯৮৪ থেকে ২০০২ অবধি। ইতালির বিশ্বকাপ জয়ের ঠিক মাঝের ক্যরিয়ারটুকু তার।

রবার্তো বাজ্জিও। ক্লাবের হয়ে ২০০ গোলের সাথে জাতীয় দল ইতালির হয়ে ২৭টি গোল করেছেন। ৫ গোল করে ১৯৯৮ বিশ্বকাপে দলকে ফাইনালে নিয়েছিলেন। ফাইনালে তার মিস করা পেনাল্টি শুট আউট’টিই হয়ে দাঁড়ায় ব্রাজিলের চ্যাম্পিয়ন হওয়ার কারণ।

ব্রাজিলের জিকো, রাশিয়ার লেভ ইয়াসিন, ক্যামেরুনের রজার মিলারের মত আরো অনেক ফুটবল পুত্রের হাতে ওঠেনি বিশ্বকাপ তাজমুকুট।

মেসি রোনালদো আরো দু’একটা বিশ্বকাপ খেলার সুযোগ পেলেও সুইডেনের জ্লাতান ইব্রামোভিচের দেশ বিশ্বকাপে কোয়ালিফাই করতে পারেনি। আর্জেন্টিনার বাতিগোল খ্যাত বাতিস্তুতা, কার্লোস তেভেজ খালি হাতে ফেরাদের দলে। ফ্রাঙ্ক ল্যাম্পার্ড, স্টিভেন জেরার্ড, মিরোস্লাভ ক্লোসার এবার শেষ সময়। এই সংখ্যা যেন শেষ হবার নয়।

রাজ্যের জনগণ না চাইলেও মেসি-রোনালদো-নেইমারদের কে কে এই তালিকার হাহাকার বাড়াবেন তা কেবল খেলার রাজা ফুটবলই জানেন। যেখানে রাজারা কখনোই জনগণের কথা ভাবেননি বলে প্রচলিত।

বাংলাদেশ সময়: ১২৪১ ঘণ্টা, জুন ১০, ২০১৪

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।