বেলফাস্ট: তামিম ইকবাল রান পেলেন, জয় পেলো বাংলাদেশ। অনেক কাঠ-খড় পুড়িয়ে শুক্রবার ৬ উইকেটে হারালো আয়ারল্যান্ডকে।
এ জয়ে দুই ম্যাচ একদিনের সিরিজ শেষ হলো ১-১ এ সমতায়।
আয়ারল্যান্ড জুজুর ভয়ে একদিন আগে কুকড়ে গিয়েছিলেন ক্রিকেটাররা। ভাগ্যে জুটেছিলো ৭ উইকেটের পরাজয়। ২৪ ঘন্টার ব্যবধানে সেই ক্রিকেটাররাই ভয়কে জয় করলেন। একেবারে বলে কয়ে হারালেন আইরিশদের।
প্রতি সাক্ষাতেই এভাবে উড়িয়ে দেওয়ার কথা। কিন্তু হয়নি। উল্টো গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্তে হেরেছে বাংলাদেশ। ২০০৭ সালে ওয়েস্ট ইন্ডিজ বিশ্বকাপের কথাই ধরা যাক। ভারত আর দক্ষিণ আফ্রিকার মতো ক্রিকেট পরাশক্তির কাছ থেকে জয় ছিনিয়ে নেওয়ার পর আয়ারল্যান্ডের কাছেই হেরেছিলো বাংলাদেশ।
একদিনের আন্তর্জাতিক ম্যাচে সেটিই ছিলো দুই দেশের প্রথম সাক্ষাৎ। এরপর অবশ্য ২০০৮ সালে দেশের মাঠে আইরিশদের হোয়াইট ওয়াশ করেছিলো বেঙ্গল টাইগাররা।
প্রথম টি-টোয়েন্টি সাক্ষাতেও একই দশা। একবছর আগে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের দ্বিতীয় আসরে একেবারে নাস্তানাবুদ হয়েছিলো বাংলাদেশ। আইরিশদের কাছে হেরেই গ্রুপ পর্বে বিশ্বকাপ শেষ করে বাড়ি ফিরতে হয়েছিলো। এনিয়ে সমালোচনাও কম হয়নি।
সর্বশেষ ঘটনা আরো দুঃখজনক। ইংল্যান্ডের কাছ থেকে তরতাজা একটি জয় নিয়ে বেলফাস্টে গিয়েই হোঁচট খায় মাশরাফি বাহিনী। হারের ব্যবধানটাও বড়। টেস্ট খেলুড়ে বাংলাদেশকে ৭ উইকেটে হারিয়ে দেয় ওয়ানডে মর্যাদার দল আয়ারল্যান্ড।
কারোই মেনে নেওয়ার কথা নয়। বাংলাদেশের ক্রিকেটাররাও হয়তো মেনে নিতে পারছিলেন না। এ জন্যই তো দ্বিতীয় ম্যাচে ঘুড়ে দাঁড়ানোর প্রানান্তকর চেষ্টা সফল হয়েছে।
তবে কাজটি সহজ করে দিয়েছেন বাংলাদেশের বোলাররা। প্রতিপক্ষকে ১৮৯ রানের মধ্যে বেঁধে ফেলা সম্ভব না হলে অঘটন শব্দটাই স্থায়ী হয়ে যেতো। নিন্দুকেরাও সুযোগ পেয়ে বুলি আউড়াতে ছাড়তেন না।
টস জিতে আগে ব্যাটিং নিয়ে ফাঁদে পা দেয় আয়ারল্যান্ড। বাংলাদেশের পেস আক্রমণের সামনে একের পর এক উইকেট হারিয়ে দিশেহারা হওয়ার উপক্রম হয়। শেষে উপায়ান্তর না দেখে উইকেট বাঁচাতে রানের গতি স্লথ করে আনে।
অধিনায়ক মাশরাফি বিন মুর্তজা এবং শফিউল ইসলাম দলীয় ২৮ রানে তিন উইকেট তুলে নেওয়ার পর দুই বাঁহাতি স্পিনার আব্দুর রাজ্জাক এবং সাকিব আল হাসান ফিরিয়ে দেন দুইভাই নেইল ও’ব্রেইন (২৭) ও কেভিন ও’ব্রেইনকে (১৪)। তখন আয়ারল্যান্ডের সংগ্রহ ছিলো ৫ উইকেটে ৬২ রান। ষষ্ঠ এবং সপ্তম জুটিতে যা একটু রান এসেছে। গ্যারি উইলসনের ৬০ এবং জন মোনির ২৮ মিলিয়ে শেষ পর্যন্ত ৪৬ ওভারের ইনিংসে ৯ উইকেট হারিয়ে তোলে ১৮৯ রান।
বোলিংয়ে দাপট বলেতে যা বোঝায় শফিউল আর সাকিব আল হাসানই দেখিয়েছেন। ৯ ওভারে ৫৫ রান দিয়ে চারটি উইকেট নিয়েছেন পেসার শফিউল। আর সহ-অধিনায়ক শীর্ষ অল-রাউন্ডারের বোলিংয়ের সংখ্যাতত্ত্ব ৯-২১-২। আইরিশদের বসিয়ে দেওয়ার জন্য এরচেয়ে ভালো রান চেক হতে পারে না।
ব্যাটিংয়ে বাংলাদেশের শুরুটা কিন্তু ভালো হয়নি। দলীয় ১০ রানে উইকেট হারিয়ে বসে। ট্রেন্ট জনস্টনের বলে ক্যাচ তুলে বিদায় নেন ইমরুল কায়েস। দ্বিতীয় জুটি ভাগে ৪১ রানে। জুনায়েদ কেভিন ও’ব্রেইনের বলে ক্যাচ দিয়ে ১৩ রানে সাজঘরে ফেরেন।
দায়িত্ব পড়ে তামিম ইকবালের কাঁধে। প্রতিপক্ষ চতুর বোলারদের ফাঁদে পা না দিয়ে ধৈর্য্য দিয়ে এগিয়ে যান। জর্জ ডর্কেলের শিকার হওয়ার আগে দলের সংগ্রহে রেখে যান ৭৪ রান। ছয়টি চার এবং একটি ছয়ের মার দিয়ে নিজের ইনিংসটি সাজিয়েছেন মারকুটে তামিম।
বাকি কাজটুকু করেছেন সাকিব আর মুশফিকুর। শেষ পর্যন্ত অপরাজিত থেকে সাকিব ৩৩ আর মুশফিকুর ১৩ রান তুলে দলকে জয়ের বন্দরে পৌঁছে দিয়েছেন ৩৭.৪ ওভারে।
ম্যাচ সেরা হয়েছেন শফিউল ইসলাম।
বাংলাদেশ সময়: ২০৪৪ ঘন্টা, জুলাই ১৬, ২০১০