ঢাকা, শুক্রবার, ৬ বৈশাখ ১৪৩১, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫

খেলা

নির্বাচকরা কাঁদালেন মাশরাফিকে

স্পোর্টস করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২০০৪ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১৯, ২০১১
নির্বাচকরা কাঁদালেন মাশরাফিকে

ঢাকা: প্রধান নির্বাচক রফিকুল আলম যখন একাডেমি ভবনের সভাকক্ষে বিশ্বকাপের দল ঘোষণায় ব্যস্ত, মাশরাফি বিন মুর্তজা তখন পাশের মাঠে অনুশীলনে। খবরটা চাওড় হতে সময় লাগেনি।

বাতাসের গতিতে ছড়িয়ে পড়ে বিশ্বকাপ দলে নেই নড়াইল এক্সপ্রেস। মাশরাফির কানেও পৌঁছায়।

বুকের কষ্ট চেপে রেখে ফিল্ডিং কোচ জুলিয়ান ফাউন্টের সঙ্গে অনুশীলন করছিলেন নড়াইল এক্সপ্রেস। কিন্তু সাধারণ মানুষ মাশরাফির বাদ পড়া মেনে নিতে পারছিলেন না। একাডেমি মাঠের পাশের দোতলা সিড়িতে দাঁড়িয়ে, বিশ্বকাপ দলে মাশরাফিকে চেয়ে স্লোগান দিচ্ছিলেন। চোখের জল তখনো চেপে রেখেছিলেন দেশসেরা পেসার।

অনুশীলন শেষে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলার সময়, শেষপর্যন্ত নিজেকে ধরে রাখতে পারেননি। ইস্পাত কঠিন মাশরাফির চোখ থেকে গড়িয়ে পড়ে জল। তবুও চোখ ঢেকে কষ্ট আড়াল করার চেষ্টা করেন নড়াইল এক্সপ্রেস। একটি প্রশ্নের উত্তর দিতে গিয়ে আবেগের সব বাঁধন মুক্ত করে দেন। অভিজ্ঞতার আলোকে ক্রীড়াঙ্গনের খ্যাতিমান একজন সাংবাদিক প্রশ্ন রেখেছিলেন,“ক্যারিয়ারে অনেক উত্থান পতনের মধ্যদিয়ে এগিয়েছেন আপনি। আজকের দিনটি আপনার জন্য কতটা কষ্টের? মাশরাফির উত্তর ছিলো,“অবশ্যই আমার জীবনের সবচেয়ে কষ্টের দিন আজ। ” এরপর বাক শক্তি হারিয়ে ফেলেন। বেদনার রস চোখ থেকে বেরিয়ে আসতে থাকে কান্না হয়ে।

ভাগ্যের নির্মম পরিহাস অনেক সহ্য করেছেন, কিন্তু এবার পারেননি। একটি বারের জন্য মাশরাফির ত্যাগের কথা ভাবেননি জাতীয় দল নির্বাচকরা। ফিজিও’র প্রতিবেদন দেখে বিশ্বকাপ দল থেকে মাশরাফির মতো বোলারকে ছুঁড়ে ফেলতে দ্বিধা হয়নি তাদের। নির্বাচকদের কাছ থেকে সামান্য সহানুভূতিও পাননি। বাদ দেওয়ার আগে সাবেক অধিনায়ককে ডেকে কথা বলার প্রয়োজন বোধ করেননি কেউ। সেটাই বেশি পোড়াচ্ছে মাশরাফিকে,“আমি বাদ যেতেই পারি। তাই বলে কেউ একবার আমাকে জানানোর প্রয়োজনবোধ করেননি!”

ঢাকা প্রিমিয়ার লিগের ম্যাচে ব্যাটিংয়ের সময় ডান হাঁটুতে চোট পান আবাহনী অধিনায়ক। প্রতিস্থাপিত লিগামেন্টের খানিকটা ছিড়ে গেছে। সব কিছু পর্যবেক্ষণ শেষে চিকিৎসকদের পরামর্শ অনুযায়ী নিজেকে ফিরে পাওয়ার সংগ্রামে নেমেছেন পেসার মাশরাফি। ২৬ দিনে অনেকটা পথ এগিয়েছেন। রানিং, ব্যাটিং করছেন। মঙ্গলবার খাটো দৈর্ঘ্যরে রানআপ নিয়ে বোলিংও করেছেন। বুধবার করেছেন ফিল্ডিং প্র্যাক্টিস। পরিচর্যার অগ্রগতি স্বাভাবিকের চেয়ে ভালো তবুও..। মাশরাফির দুঃখটা এখানেই,“২৬ দিন আগে যখন আমি স্ক্রাচে ভর দিয়ে এসেছিলাম, তখনই বলেছিলাম বিশ্বকাপ খেলবো। বলতে পারেন এখনো পুরো লেনথে বোলিং শুরু করতে পারিনি। তবে ২৬ দিন পরে যদি চার পাঁচ স্টেপ নিয়ে বোলিং করতে পারি, বাকি ২০/২২ দিনে অবশ্যই কিছু একটা হতো। আশা করেছিলাম একটা সুযোগ অন্তত পাবো। ”

অনেক দেশই চোট আক্রান্ত খেলোয়াড়দের রেখে বিশ্বকাপ দল সাজিয়েছে। অস্ট্রেলিয়া এবং ভারত তার জ্বলন্ত উদাহরণ। কিন্তু বাংলাদেশের নির্বাচকরা মাশরাফির ওপর ভরসা রাখতে পারেননি। তাই বলে দলের জন্য অমঙ্গল কামনা করেননি দেশ সেরা পেসার,“খবরটা শুনতে আমি প্রস্তুত ছিলাম না। শতভাগ আত্মবিশ্বাস ছিলো বিশ্বকাপ দলে থাকবো। আমার নিজস্ব আত্মবিশ্বাস এমনই। এখন আমার কিছু করার নেই। তারপরেও তাদের সিদ্ধান্তকে সম্মান করি। যারা খেলবে দোয়া করি ভালো করুক। ”

এই হলেন বাংলাদেশের সবচেয়ে জনপ্রিয় ক্রিকেটার মাশরাফি বিন মুর্তজা। যার স্বপ্ন ছিলো দেশের মাঠে বিশ্বকাপ খেলার। আত্মবিশ্বাস ছিলো ১৫ সদস্যের চূড়ান্ত দলে রাখা হবে তাকে। ১৯ ফেব্রুয়ারির আগেই সম্পূর্ণ সুস্থ হয়ে বিশ্বকাপ মাতাবেন। স্বপ্ন ভেঙ্গে খান খান হয়ে গেছে একদুপুরে। তবে নির্বাচকরা বলছেন অন্যকথা। সুস্থ হলে এবং খেলার মতো শারীরিক অবস্থা ফিরে পেলে বিশ্বকাপে খেলবেন নড়াইল এক্সপ্রেস।

আগামী ৯ ফেব্রুয়ারির আগে খেলার মতো শারীরিক অবস্থা ফিরে পেলে বিশ্বকাপ দলে অন্তর্ভুক্ত করা সম্ভব। স্বাগতিক হিসেবে এই সুবিধা থাকছে। এছাড়া বিশ্বকাপ চলাকালে বর্তমান দলের কোন একজনকে চোট আক্রান্ত অথবা ব্যক্তিগত কারণে খেলতে অপারগ দেখিয়ে; আন্তর্জাতিক ক্রিকেট কাউন্সিলে (আইসিসি) আবেদন করে; সুযোগটা নিতে পারে বিসিবি।

প্রশ্ন উঠেছিলো অনেক দেশ তাদের অসুস্থ খেলোয়াড়কে দলে রেখেছে। মাশরাফিকে কী রাখা যেতো না? উত্তরে প্রধান নির্বাচক বলেন,“মাশরাফির চোট অন্যরকম। ফেব্রুয়ারির প্রথম সপ্তার আগে সে পুরো লেনথে বল করতে পারবে না। এছাড়া ম্যাচ ফিটনেস এবং খেলার জন্য স্বাভাবিক ছন্দ ফিরে পেতে প্রায় এক মাস লেগে যাবে। তারপরেও সে যদি খেলার মতো ফিট হয়, দলে নেওয়ার সুযোগ তো থাকছেই। ”

অধিনায়ক সাকিব আল হাসানেরও বিশ্বাস মাশরাফির বিশ্বকাপে খেলার সুযোগ শেষ হয়ে যায়নি। তার ভাষায়,“মাশরাফি ভাই অনেক শক্ত মনের মানুষ। আমার মনে হয় তিনি বিশ্বকাপের আগেই সুস্থ হয়ে দলে ফিরবেন। ৮ জানুয়ারি পর্যন্ত বিসিবি তাকে দলে নিতে পারবে। তিনি ফিরলে হয়তো একজন ব্যাটসম্যানকে বাইরে যেতে হবে। অনেকভাবে এই সুযোগটা নেওয়া যায়। আশা করি মাশরাফি ভাই সেই চ্যালেঞ্জ নিবেন। ”

কিন্তু কথাগুলো এই মুহূর্তে বিশ্বাস হচ্ছে না মাশরাফির,“এখন কিছু বলা কঠিন। জানি না কিভাবে এটা সম্ভব। তবে আমি আমার চেষ্টা করে যাবো। বিশ্বকাপ খেলার জন্য নয়, পরের খেলাগুলোর জন্য প্রস্তুত হতে। সুযোগ আসলে সেখানে খেলবো। ”

বাংলাদেশ সময়: ১৯৪৭ ঘন্টা, জানুয়ারি ১৯, ২০১১
এসএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
welcome-ad