ঢাকা, বুধবার, ১০ বৈশাখ ১৪৩১, ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ শাওয়াল ১৪৪৫

খেলা

প্রশ্নবিদ্ধ আম্পায়ার্স কমিটির চেয়ারম্যান মাহমুদ জামাল

স্পোর্টস করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৯০২ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১০, ২০১১
প্রশ্নবিদ্ধ আম্পায়ার্স কমিটির চেয়ারম্যান মাহমুদ জামাল

ঢাকা: আম্পায়ার নাদির শাহর ওপর বেজায় চটেছেন ক্রিকেট বোর্ডের আম্পায়ার্স কমিটি চেয়ারম্যান মাহমুদ জামাল। আন্তর্জাতিক ক্রিকেট কাউন্সিল (আইসিসি)’র তালিকাভুক্ত এই আম্পায়ারের বিরুদ্ধে দায়িত্বে অবহেলার অভিযোগ এনে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেওয়ার কথাও ভাবছেন তিনি।

বিকেএসপিতে আবাহনী ও ওরিয়েন্টের মধ্যকার ম্যাচ পরিচালনার জন্য নির্বাচিত আম্পায়ার ছিলেন নাদির শাহ। কিন্তু দুই দিন হলো বিসিবির সংশ্লিষ্ট বিভাগের সঙ্গে কোন যোগাযোগ নেই তার। এমনকি আম্পায়ার্স কমিটি থেকে একের পর এক ফোন করেও যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি বলে জানান মাহমুদ জামাল।

আম্পায়ার্স কমিটির সঙ্গে সোমবার দুপুর পর্যন্ত কোন যোগাযোগ না রাখায় নাদির শাহকে বরখাস্তের মতো কঠিন সিদ্ধান্ত নেওয়ার কথা ভাবছিলেন মাহমুদ জামাল। কিন্তু বিসিবির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মঞ্জুর আহমেদ আম্পায়ার্স কমিটির চেয়ারম্যানকে অনুরোধ করেন আপাতত কারণ দর্শানো নোটিশ দেওয়ার জন্য।

এবিষয়ে জানতে চাইলে মাহমুদ জামাল বাংলানিউজকে বলেন,“শুনেছি তিনি অসুস্থ, কিন্তু আমাদের সঙ্গে কোন যোগাযোগ হয়নি। সত্যিই অসুস্থ হলে কিছু করার নেই। তবে অসুস্থতার প্রমাণপত্র দিতে না পারলে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। কারণ তিনি বিসিবির বেতন ভুক্ত একজন কর্মচারির মতোই। অসুস্থ হলেও আমাদের জানানো উচিৎ ছিলো। ”

এদিকে নাদির শাহকে বাংলানিউজ থেকে একাধিকবার ফোন করেও পাওয়া যায়নি। তার সেলুলার ফোনটি রিং বাজলেই যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন করে দিয়েছেন। ফলে বিসিবি আম্পায়ার্স কমিটির সঙ্গে যোগাযোগ না রাখার প্রকৃত কারণ জানা যায়নি।

তবে গত দুই মাস বেতন না পাওয়ায় বিসিবির ওপর কিছুটা বিরক্ত আম্পায়ার নাদির শাহ। বেতন না পাওয়ায় ক্ষুব্ধ হয়ে গত শুক্রবার সাংবাদিকদের কাছেও আক্ষেপ প্রকাশ করেন আন্তর্জাতিক এই আম্পায়ার।
 
আম্পায়ারদের দুই মাস বেতন না দেওয়ার দায় বিসিবির নির্বাহী কমিটির ওপর চাপিয়েছেন সংশ্লিষ্ট বিভাগের চেয়ারম্যান। তিনি বলেন,“আম্পায়ারদের নীতিমালা করতে গিয়ে বেতন বন্ধ রাখা হয়েছে। এখানে আমার কিছু করার নেই। সিদ্ধান্তটি নির্বাহী কমিটির। ”

বিসিবি প্যানেলের পাঁচ আম্পায়ারের চুক্তির মেয়াদ শেষ হওয়ায় বেতন বন্ধ রাখা হয়। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন পরিচালক জানান, নির্বাহী কমিটির সভায় মাহমুদ জামালই আম্পায়ারদের বেতন বন্ধের সুপারিশ করেন। চেয়ারম্যানের প্রতি সম্মান দেখিয়ে দুই মাস আম্পায়ারদের বেতন আটকে রাখা হয়েছে।

আম্পায়ার্স কমিটির চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধেও পক্ষপাতিত্বের অভিযোগ উঠেছে। রাজশাহীর আম্পায়ার মিজানুর রহমান মিলনকে বিশেষ সুবিধা দিয়ে বেতন ভুক্তদের তালিকায় রেখেছেন চেয়ারম্যান। খোদ আম্পায়ার্স কমিটির মধ্যেও আলোচনা হচ্ছে মিলনের কাছ থেকে উৎকোচ নিয়ে বিসিবির বেতন ভুক্তদের তালিকায় রেখেছেন তিনি।

অথচ ২০১০ এবং ২০১১ মৌসুমে জাতীয় লিগে মাত্র একটি ম্যাচে আম্পায়ার ছিলেন মিলন। ঢাকা প্রিমিয়ার ক্রিকেট লিগের আট রাউন্ডে মাত্র একটি ম্যাচে দায়িত্বে ছিলেন। তার আম্পায়ারিংয়ের মান নিয়েও বিতর্ক রয়েছে। মোহামেডান থেকে মিলনের বিরুদ্ধে অভিযোগ দেওয়া হয়েছে। প্রশ্নবিদ্ধ আম্পায়ারিংয়ের বিষয়ে অবগত আছেন মাহমুদ জালালও,“আগে ভালো ছিলো, এক বছর হলো মিলনের আম্পায়ারিংয়ের মান খারাপ হয়েছে। অনেক অভিযোগও আছে। কিন্তু আম্পায়ার্স বিভাগের নীতিমালা না থাকায় তাকে চুক্তি থেকে বাদ দিতে পারছি না। এছাড়া বেতনের বিষয়টি দেখে বিসিবি প্রশাসন। এখানে আমার হাত নেই। ”

তবে নিজের জেলার আম্পায়ার এবং উৎকোচ নিয়ে বিসিবির বেতন ভুক্ত তালিকায় রাখার বিষয়টি অস্বীকার করেন জামাল,“আমি মিলনের কাছ থেকে টাকা নেই, কথা সত্য নয়। এছাড়া সে আমার রাজশাহীর ছেলে হলেও, আলাদাভাবে দেখি না। দেশের ৬৪ জেলার আম্পায়ারদের অভিভাবক আমি। এমন অন্যায় আমি কেন করতে যাব?”

বিসিবি থেকেও দু’রকমের ভাষ্য পাওয়া গেছে। সিইও মঞ্জুর আহমেদ সোমবার বাংলানিউজকে জানান,“প্রত্যেকটা বিভাগ নিজস্ব নীতি মেনে চলে। বেতন আমাদের মাধ্যমে হয় ঠিক, কিন্তু আম্পায়ারদের চুক্তির বিষয়টি দেখে সংশ্লিষ্ট বিভাগ। আম্পায়ার্স কমিটি থেকে কাউকে বাদ দিতে বলা হলে আমরা তাকে বাদ দিতে পারি। কিন্তু তিনি তো আমাদের কাছে কোন সুপারিশ করেননি। ”

২০০৮ সালের সেপ্টেম্বর থেকে বেতন ভুক্ত প্রথম শ্রেণীর আম্পায়ার মিলন। আগামী ১৩ এপ্রিল পর্যন্ত বেতন ভুক্ত থাকবেন তিনি। সর্বশেষ বৈঠকে আগের পাঁচজনের সঙ্গে শহীদ ইবনে সৈকতকে অর্ন্তভুক্ত করা হয়েছে। এখন বিসিবির চুক্তিভুক্ত আম্পায়ার ছয়জন। আইসিসির তিন আম্পায়ার এনামুল হক মনি, নাদির শাহ, সৈকত ছাড়া ‘এ’ গ্রেডের তিনজন হলেন, মাহফুজুর রহমান লিটু, মিজানুর রাহমান মিলন এবং তানভির আহমেদ।

সবকিছু জেনেও মিলনের চুক্তির মেয়াদ বেড়েছে আম্পায়ার্স কমিটির চেয়ারম্যানের হাত দিয়েই। তবে এই অবস্থা বেশি দিন থাকবে না বলে জানান বিসিবি সিইও। আম্পায়ার্স কমিটির জন্য নীতিমালা তৈরি প্রায় চূড়ান্ত। এই মাসের শেষের দিকে কার্যকর করা সম্ভব হবে বলে মনে করেন মঞ্জুর আহমেদ।

আন্তর্জাতিক তিন আম্পায়ারকে মাসে ৪০ হাজার এবং প্রথম শ্রেণীর তিনজনকে ৩০ হাজার টাকা করে বেতন দেওয়া হয়।

বাংলাদেশ সময়: ১৮৪৫ ঘন্টা, জানুয়ারি ১০, ২০১১

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।