ঢাকা: বিশ্বকাপ টিকিট নিয়ে বিস্ময়কর সব তথ্য দিচ্ছে ক্রিকেট বোর্ড। এলোমেলো হিসেব।
একটু খেয়াল করে দেখলে বোঝা যায় খোদ বিসিবি টিকিট নিয়ে খেলছে। মন্ত্রী, সাংসদ, সরকারি বিভিন্ন মহল, বিভিন্ন ক্রীড়া ফেডারেশন, কাব সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক, বিসিবি পরিচকালক এবং কাউন্সিলদের জন্য বিনামূল্যে টিকিট সরবরাহ করবে বিসিবি। শনিবার ঘটা করে সংবাদ সম্মেলন ডেকে মুস্তফা কামাল দাবি করেন,“একটি টিকিটও সৌজন্য হিসেবে দেওয়া হচ্ছে না। তবে বিসিবির তহবিল থেকে কিনে দেওয়া হবে!”
সত্যিই সেলুকাস! সৌজন্য দিচ্ছে না, কিনে দিচ্ছে। কোষাগার খালি করে খুশি করা হচ্ছে সরকারের বিভিন্ন মহলকে। এর পেছনে বিসিবি সভাপতির যুক্তি,“মন্ত্রী, সাংসদরা জনপ্রতিনিধী। তাদের কাছ থেকে অনেকভাবে সহযোগিতা পাই আমরা। তাদেরকে টিকিট না দিলে কি করে হয়। ”
পাল্টা প্রশ্নও উঠেছিলো, সাংসদরা জনগণের ভোটে নির্বাচিত। রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানের মঙ্গল করা জনপ্রতিনিধীদের নৈতিক দায়িত্ব। বিনামূল্যে কেন টিকিট দেওয়া হবে? এর সদুত্তোর দিতে পারেননি বিসিবি সভাপতি। শুধু জানালেন,“দিতে হবে। ”
মুস্তফা কামালের কথা বোঝার বাকি থাকে না, তারা বাধ্য হচ্ছেন বিনামূল্যে টিকিট দিতে। বিসিবি কিন্তু লাইনে দাঁড়িয়ে টিকিট সংগ্রহ করবে না। একটা নির্দিষ্ট পরিমাণ টিকিট নিয়ে আসা হবে ব্যাংকের বুথ থেকে। সেগুলো তুলে দেওয়া হবে তালিকাভুক্ত গণ্যমান্য ব্যক্তিদের। আক্ষরিক অর্থে এগুলো সৌজন্য টিকিট। প্রায় ২,৫১১ টিকিট মন্ত্রী, সাংসদ এবং বিভিন্ন মন্ত্রণালয়কে দেওয়া হতে পারে। বোর্ড পরিচালক এবং কাউন্সিলদের সংখ্যা ধরা হলে সংখ্যাটা বেশি হবে বৈকি।
সাংবাদ সম্মেলনে দেওয়া তথ্যের সঙ্গে টিকিট এন্ড সিটিং কমিটির চেয়ারম্যান জিএস হাসান তামিমের দেওয়া তথ্যে গড়মিল পাওয়া গেছে। আগে মিরপুর শেরেবাংলা স্টেডিয়ামের আসন সংখ্যা দেখানো হয়েছিলো ২৫৫০৯টি। সেখানে শনিবার বিসিবি সভাপতি দেখালেন ২৫,১৬৭ আসন। সেখান থেকে উত্তর এবং দক্ষিণে সাইট স্ক্রিনের পেছনে এক হাজার নয়’শ আসন খালি রাখা হবে বলে জানান মুস্তফা কামাল।
আন্তর্জাতিক ক্রিকেট কাউন্সিল (আইসিসি)’কে প্রতি ম্যাচে বিনামূল্যে দেওয়া হবে ১২৭০টি করে টিকিট। অতিরিক্ত আরো দুই হাজার টিকিট কিনে নিবে আইসিসি। সাধারণ দর্শকদের জন্য বাজারে ছাড়া হচ্ছে ১৫১২৭টি টিকিট। এরপরেও বিসিবির হাতে থাকে ৪৮৭০টি টিকিট। সেখান থেকে ঢাকার ৭২টি কাবকে টাকা নিয়ে দেওয়া হবে ১৭৪০টি টিকিট। একই নিয়মে ৬৪ জেলা এবং সাতটি বিভাগীয় ক্রীড়া সংস্থাকে দেওয়া হবে ২১৩০টি টিকিট।
বিসিবির প্রত্যেক পরিচালক ১৬টি করে টিকিট পাবেন। এরমধ্যে দুটি করে টিকিট বিসিবির টাকায় কেনা হবে বলে জানান মুস্তফা কামাল।
সব বিলিবন্টন শেষে বিসিবির হাতে থাকে বিভিন্ন গ্যালরির ১,০০০ এবং হসপিটালিটি বক্সের ৪৪২টি আসন। এগুলোর হিসেব বিসিবি থেকে দেওয়া হয়নি। বিশেষ করে ২৫,১৬৭টি আসনের মধ্যে হসপিটালিটি বক্সের আসনগুলো আমলে নেওয়া হয়নি।
হসপিটালিটি বক্সের আসনগুলো চড়া মূল্যে বিক্রি করবে বিসিবি। এছাড়া আইসিসি অতিরিক্ত দুই হাজার টিকিটের সবগুলো না নিলে, সেগুলো বেশি দামে বিসিবি বিক্রি করবে বলে জনান মুস্তফা কামাল।
এদিকে, চট্টগ্রাম বিভাগীয় স্টেডিয়ামের ১৭,৮০০ আসনের মধ্য আইসিসি এবং বিসিবি নেওয়ার পর যা থাকবে সেগুলো দর্শকদের জন্য বিক্রি করা হবে।
দর্শকদের চাহিদা অনুযায়ী টিকিট সরবরাহ করতে না পারায় দুঃখ প্রকাশ করেছেন বিসিবি সভাপতি মুস্তফা কামাল,“সবাই চায় মাঠে এসে বিশ্বকাপের খেলা দেখতে। কিন্তু সেটা সম্ভব নয়। আমরা আসন বাড়াতে চেয়েছিলাম। কিন্তু ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে যায় বলে গ্যালারি উঁচু করা সম্ভব হয়নি। এখন দর্শকদের কাছে ক্ষমা চাওয়া ছাড়া আমাদের কিছু করার নেই। ”
বাংলাদেশ সময়: ২০০৪ ঘন্টা, জানুয়ারি ০১, ২০১১