ঢাকা: টেস্ট পাঁচ উইকেট এবং শতক সমমানের। ডানহাতি অফ স্পিনার সোহাগ গাজী তার অভিষেক টেস্টে এই কৃতিত্ব দেখিয়েছেন।
পটুয়াখালীর এই ক্রিকেটার বাজিমাত করেছেন প্রথম টেস্টে নয় উইকেট শিকার করেও। অভিষেক টেস্টে এই সাফল্য সম্পর্কে সোহাগ বলছিলেন,‘ভালো লাগছে আরও বেশি ভালো লাগতো যদি ম্যাচটা জিততাম। আমি আমার বোলিংটা করতে পেরেছি দ্বিতীয় ইনিংসে, সে জন্য ভালো লাগছে। প্রথম ইনিংসে যে বোলিং করেছি ওটা মাথায় রেখে দ্বিতীয় ইনিংসে আরও ভালো করার পরিকল্পনা ছিলো। শেষপর্যন্ত চেষ্টা সফল হয়েছে। ’
টেস্ট অভিষেকে চতুর্থ বাংলাদেশি হিসেবে ছয় উইকেট শিকারের কৃতিত্ব গাজীর। ভারতের বিপক্ষে বাংলাদেশের অভিষেক টেস্টে ছয় উইকেট নিয়েছিলেন ডানহাতি অফ স্পিনার নাঈমুর রহমান দুর্জয়। পেসার মঞ্জুরুল ইসলাম এবং বাঁহাতি স্পিনার ইলিয়াস সানিও অভিষেক টেস্টের এক ইনিংসে ছয় উইকেট করে পেয়েছেন। তবে একদিক থেকে গাজীকে কেউ ছাড়িয়ে যেতে পারেননি। তাদের কেউই অভিষেক টেস্টে নয় উইকেট পাননি। সোহাগের পরিকল্পনা ছিলো,‘১০ উইকেটের কোন টার্গেট ছিলো না, পাঁচ উইকেটের একটা টার্গেট ছিলো। আগের দিন দুই উইকেট পাওয়ার পর মনে হয়েছে চেষ্টা করলে পাঁচ উইকেট নেওয়া সম্ভব। চেষ্টা ছিলো সেটাকে পাঁচ উইকেটে নেওয়া। ’
একদিক থেকে দেখলে রাজস্বীক টেস্ট অভিষেক হয়েছে সোহাগের। বোলার হিসেবে তিনি সফল। দলও দারুণ ক্রিকেট খেলেছে। এই অর্জণ আরও বেশি আনন্দের হতে পারতো ম্যাচটা বাংলাদেশ জিতে গেলে। তা না হওয়ায় দলের সবাই কিছুটা হতাশ বলে জানান তিনি,‘আমরা সবাই কষ্ট পেয়েছি। ম্যাচটা খুব ক্লোজ ছিলো। কিন্তু জিততে পারিনি। ইনশাল্লাহ পরের ম্যাচে ভালো করার চেষ্টা করবো। ’
জাতীয় লিগে দারুণ পারফরমেন্সের পুরস্কার হিসেবে জাতীয় দলে ঢুকেছেন। জাতীয় দলের জায়গাটাও পাকাপোক্ত করে নিলেন এক টেস্ট নয় উইকেট নিয়ে। অথচ এক মাস আগেও তার ভাবনায় ছিলো না এমন কিছু হতে পারে,‘এমন কিছু হতে পারে এক মাস আগেও আমার ধারণায় ছিলো না। আমি নিজেও এমন কোন পরিকল্পনা করিনি। ইচ্ছে ছিলো নিয়মিত ভালো খেলতে থাকবো। তারপরে যদি বাংলাদেশ দলে সুযোগ পাই তাহলে অবশ্যই ভালো করার চেষ্টা করবো। ’
পাকিস্তানের স্পিন গ্রেট জাতীয় দলের স্পিন বোলিং উপদেষ্টা কোচ সাকলাইন মুস্তাককের কাছ থেকে টেস্ট ক্যাপ নিয়েছেন সোহাগ। ক্রিকেটের এই শিক্ষক অভিষিক্ত বোলারকে সাফল হওয়ার মন্ত্রও শিখিয়েছেন,‘তিনি আমাকে একটাই পরামর্শ দিয়েছেন, ‘যে ব্যাটসম্যানকে তুমি যত তাড়াতাড়ি রিড করতে পারবে তত দ্রুত তাকে আউট করতে পারবে। ’
হঠাৎ করে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে পা রেখে অনেকেই খৈ হারিয়ে ফেলেন। সোহাগের বেলায় তা হয়নি। জাতীয় দলের কোচিং স্টাফদের পাশাপাশি অধিনায়ক মুশফিকুর রহিমের কাছ থেকে দারুণ সমর্থন পেয়েছেন। প্রথম টেস্টের সফল বোলার তার অর্জনকে উৎসর্গ করেছেন বাবা-মাকে,‘সোহাগ তার এই সাফল্য উৎসর্গ করেছেন গ্রামের বাড়িতে থাকা বাবা-মাকে,‘আব্বু আম্মুর খুব ইচ্ছে ছিলো মাঠে এসে খেলা দেখার। কিন্তু উনারা আসতে পারেননি, টিভিতে খেলা দেখেছেন। অভিষেকে আমার এই নয় উইকেট আব্বু আম্মুর জন্য। ’
অধিনায়কের কাছ থেকেও বাহবা পেলেন ডানহাতি এই অফ স্পিনার। সংবাদ সম্মেলনে মুশফিক উচ্ছসিত প্রশংসা করেছেন ভালো বোলিং করায়,‘অসাধারণ বোলিং করেছে। কৃতিত্ব অবশ্যই দিতে হবে। তাকে নেওয়ার সময় বলা হয়েছিলো তাদের টপ সিক্সের পাঁচজনই বাঁহাতি। এজন্য তার কাছে প্রত্যাশাও বেশি ছিল। আমরা তাকে কেবল এ বার্তাই দিয়েছিলাম যে তুমি উইকেট পাও বা না পাও ইকোনমি রেট যেন ঠিক থাকে। সুযোগ তৈরি করতে হবে। দায়িত্ব এটুকুই। ফল কী হবে তা নিয়ে চিন্তা কোরো না। তুমি যেন ভালো বল করো, এটাই আসল। সৌভাগ্য যে আল্লাহর রহমতে ও অনেক ভালো বল করেছে। এবং যে কয়টা উইকেট ও পেয়েছে, বেশিরভাগই ভালো ভালো উইকেট। ’
বাংলাদেশ সময়: ১৮০৬ ঘণ্টা, নভেম্বর ১৭, ২০১২
এসএ