জোহানেসবার্গ: ঘানাকে হতাশায় ডুবিয়ে সেমিফাইনালে উঠে গেলো দুইবারে বিশ্বচ্যাম্পিয়ন উরুগুয়ে। টাইব্রেকারে ৪-২ গোলে আফ্রিকানদের হারিয়েছে তারা।
৪০ বছর পর বিশ্বকাপের সেমিফাইনালে খেলছে উরুগুয়ে। তাদের জয়ের নায়ক গোলরক্ষক ফার্নান্দো মুসলেরা। পেনাল্টি শুটআউটের সময় তার বিশ্বস্ত গ্লাভস জোড়া ঠিক ঠাক সাড়া দিয়েছিলো। ঘানার দু’টি শট থামিয়ে উরুগুয়েকে পৌঁছে দেন সেমিফাইনালে।
কোয়ার্টার ফাইনালে খেলা নির্ধারিত সময়ে ১-১ গোলে অমীমাংসিত থাকে। অতিরিক্ত সময়েও ফলাফল না আসায় খেলা নিষ্পত্তি হয় পেনাল্টি শ্যুটআউটে।
উরুগুয়ের পক্ষে গোল করেন দিয়েগো ফরলান, মাউরিসিও ভিক্টোরিনো, আন্দ্রেস স্কত্তি ও সেবাস্তিন আব্রেউ। আর ঘানার পক্ষে গোল করেন আসামোয়াহ গায়ান ও স্টেফেন আপিয়া।
নির্ধারিত সময়ে ঘানার পক্ষে গোল করেছিলেন সুলে মুন্তারি। আর উরুগুয়ের পক্ষে দিয়েগো ফরলান।
শুক্রবার জোহানেসবার্গের সকার সিটি স্টেডিয়ামে ঘানার সমর্থকে ভরপুর হয়ে ওঠে। আফ্রিকার আশার প্রদীপ জ্বালিয়ে মাঠে নামে কৃষ্ণ তারার দল। যদিও খেলার শুরুটা তাদের দখলে ছিলো না।
তবে অধিকাংশ সময় বলের নিয়ন্ত্রণ রেখেও সুযোগ তৈরি করতে পারছিলো না উরুগুয়ে। দশম মিনিটে গিয়ে সম্ভাবনা তৈরি হয়। লুইস সুয়ারেজ বাম দিক থেকে গোলে কিক নিলে বল চলে যায় সরাসরি ঘানার গোলরক্ষক রিচার্ড কিংসনের হাতে।
১২ মিনিটে আবারো আক্রমণে যায় উরুগুয়ে। কিন্তু কৃষ্ণ তারকারা নিজেদের বাঁচিয়ে রাখতে সমর্থ হয়। প্রায় ২০ মিনিট ধরে পালা করে আফ্রিকান শিবিরে ফাটল ধরাতে চেষ্টা করে লাতিনরা।
চাপ মুক্ত করতে খেলোয়াড়দের এগিয়ে যেতে উদ্বুদ্ধ করেন ঘানার কোচ মিলোভান। হঠাৎই জেগে ওঠে ঘানা। বলের দখল নিয়ে গোলের সম্ভাবনা জাগায়। ৩১ মিনিটে সুযোগ হাতছাড়া করেন আসামোয়াহ গায়ান।
কিছু সময়ের জন্য উরুগুয়ের খেলোয়াড়দের হাঁপিয়ে তোলেন গায়ানরা। আফ্রিকান শক্তির সামনে ধীরেই পিছিয়ে পড়তে থাকে ব্রাজিলের প্রতিবেশীরা।
৪৪ মিনিটে ৩০ গজ দূর থেকে ডান পায়ে হাফ ভলি শট নেন আসামোয়াহ। যথাস্থানে আঘাতও হেনেছিলো। কিন্তু প্রস্তুত ছিলেন গোলরক্ষক ফার্নান্দো মুসলেরা।
একমিনিট পরেই ঘানার চমক। বিরতির ঠিক আগে (ইনজুরি টাইম) গোল পেয়ে যায় আফ্রিকান বিস্ময়রা। সুলে মুন্তারির ১-০’ তে এগিয়ে নেন দলকে। গায়ানের যোগান দেওয়া বল ৩৫ গজ দূর থেকে বাঁ পায়ের জোরালো শটে নিশাননা ভেদ করেন। অপ্রস্তুত উরুগুয়ের গোলরক্ষক বোকা বনে যান।
দ্বিতীয়ার্ধের শুরুতে ফের আক্রমণাত্মক খেলে উরুগুয়ে। পালা করে চলে আক্রমণ। আফ্রিকানদের গুছিয়ে উঠার সুযোগ না দিয়ে সমতা নিয়ে আসে দক্ষিণ আমেরিকার দেশটি। ৫৪ মিনিটে দিয়েগো ফরলান ফ্রি কিক থেকে লক্ষ্যভেদ করেন।
সমতায় ফেরার পর খেলার গতি বেড়ে যায় লাতিনদের। মুহুর্মুহু আক্রমণ রচনা করে গোল পেতে চেষ্টা করে। কিন্তু ঠিক জায়গায় বল পাঠাতে না পারায় গোল পায়নি উরুগুয়ে।
ঘানার চেষ্টাও কম ছিলো না। শুধু গোলের দেখা মেলেনি। নির্ধারিত সময় ফলাফল ১-১ থাকে। অতিরিক্ত সময়ে পাল্লা দিয়ে একে অন্যকে ছাড়িয়ে যাওয়ার চেষ্টা করে। অতিরিক্ত সময়ের শেষ দিকে প্রতিপক্ষকে চেপে ধরে ঘানা। সুফলও আসে।
নিশ্চিত গোলের বল সোয়ারেজ হাত দিয়ে থামালে পেনাল্টির বাঁশি বাজান রেফারি। সঙ্গে সুয়ারেজকে দেন লাল কার্ড। কিন্তু দুর্ভাগ্য কাকে বলে। সুযোগ কাজে লাগাতে পারেননি গায়ান। বল বাইরে পাঠিয়ে জয়ের পথ বন্ধ করে দেন। এক অর্থে জয় হয় সুয়ারেজেরই। হাত দিয়ে বল না থামালে আগেই শেষ হয়ে যেত খেলা। বিদায় নিতে হতো তার দলকে। এ যাত্রায় তা আর হচ্ছে না।
সেমিফাইনালে নেদারল্যান্ডসের মুখোমুখি হবে উরুগুয়ে।
বাংলাদেশ সময়: ০৩৩৪ ঘন্টা, জুলাই ০৩, ২০১০