ঢাকা, মঙ্গলবার, ৩ বৈশাখ ১৪৩১, ১৬ এপ্রিল ২০২৪, ০৬ শাওয়াল ১৪৪৫

খেলা

বিশ্ব ক্রীড়া সাংবাদিকতা দিবস

ক্রীড়া কলামিস্ট এবং বিশ্লেষক, ইকরামউজ্জামান | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২২৫৬ ঘণ্টা, জুলাই ১, ২০১২
বিশ্ব ক্রীড়া সাংবাদিকতা দিবস

আধুনিক বিশ্বে ক্রীড়া সাংবাদিকতার ভূমিকা এবং গুরুত্ব কারো অজানা নয়। বর্তমান সময়ে খেলাধুলা হচ্ছে একটি বড় ধরনের সংবাদ যৌগ।

ক্রীড়া সাংবাদিক এবং লেখকরা হলেন ক্রীড়াঙ্গনের চোখ, মানুষের শব্দ এবং কণ্ঠস্বর। খেলাধুলা এখন তো আলাদা একটা জগৎ। আর এই বর্ণময় জগতের গুরুত্ব এবং প্রয়োজনীয়তা অনেক বেশি। ক্রীড়া সাংবাদিকতা আর ক্রীড়াঙ্গন অঙ্গাঙ্গিভাবে জড়িত। একটি বাদ দিয়ে অন্যটি ভাবা যায় না।

২ জুলাই বিশ্ব ক্রীড়া সাংবাদিক দিবস। ১৯২৪ সালের ২ জুলাই এআইপিএসের (ইন্টারন্যাশনাল স্পোর্টস প্রেস অ্যাসোসিয়েশন) জš§ ফ্রান্সে। সেই হিসেবে ২ জুলাই বিশ্বের ক্রীড়া সাংবাদিক ও ক্রীড়া লেখকদের আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত একমাত্র সংস্থা এআইপিএসের ৮৮তম জš§ বার্ষিকী। ১৯৯৫ সন থেকে এআইপিএস এর বিশ্ব জুড়ে “অ্যাফিলিয়েটেড” সংস্থাগুলো দেশে বিশ্ব ক্রীড়া সাংবাদিক দিবস পালন করছে। বর্তমানে এআইপিএস সদস্য দেশের সংখ্যা ১৬৭। আর বাংলাদেশে এর স্বীকৃত সংস্থা হচ্ছে বাংলাদেশ ক্রীড়ালেখক সমিতি। বাংলাদেশে এআইপিএস’র একমাত্র স্বীকৃত ক্রীড়া সাংবাদিক ও ক্রীড়া লেখকদের প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ ক্রীড়ালেখক সমিতি এবং তার আঞ্চলিক সংস্থাগুলোও গত ১৯৯৫ সাল থেকে বিভিন্ন কর্মসূচির মাধ্যমে প্রতিবারই দিবসটি উদযাপন করেছে।

চলতি ২০১২ সালটি বাংলাদেশ ক্রীড়ালেখক সমিতির জন্য স্মরণীয় তাৎপর্যময় এবং ঘটনাবহুল। কারণ হলো সমিতি তার প্রতিষ্ঠার প্রতিষ্ঠার সুবর্ণ জয়ন্তী (৫০ বছর) পালন করছে। আনুষ্ঠানিকভাবে বর্ন্যঢ পরিবেশে বাংলাদেশ ক্রীড়া লেখক সমিতি তার সুবর্ণ উৎসব শুরু করেছে, ‘ছবিতে বাংলাদেশের ফুটবল’ শিরোনামে গত ছয়যুগের দুর্লভ ছবি প্রদর্শনীর আয়োজন করে। আনুষ্ঠানিকভাবে এই ছবি প্রদর্শনীর উদ্বোধন করেছেন ফিফার প্রেসিডেন্ট সেপ ব্ল্যাটার। সেপ ব্ল্যাটার নিজে একজন এআইপিএস সদস্য এবং ক্রীড়ালেখক।

১৯৭১ সালে দেশ স্বাধীন হবার পর ক্রীড়াঙ্গনের প্রেক্ষাপট পাল্টে যায়। স্বাভাবিকভাবেই ক্রীড়া সাংবাদিকতা ও লেখনির গুরুত্ব অনুভূত হয়। সবকিছুই শূন্য থেকে শুরু করা নতুন দৃষ্টিভঙ্গি এবং স্বপ্ন নিয়ে। ১৯৭২ সালের ৪ আগস্ট জাতীয় প্রেসক্লাবের দোতালায় তদানীন্তন “মর্নিং নিউজের ক্রীড়া সাংবাদিক মি. ডেভিটসনের সভাপতিত্বে এক সভা অনুষ্ঠিত হয়। এই সভায় সর্বসম্মতিক্রমে ১৯৬২ সালে প্রতিষ্ঠিত পূর্ব পাকিস্তান ক্রীড়ালেখক সমিতিকে বাংলাদেশ ক্রীড়ালেখক সমিতি নামে নতুন করে তৈরির সিদ্ধান্ত নিয়ে সদস্য বিশিষ্ট কার্যনির্বাহী পরিষদ গঠিত হয়। সভাপতি করা হয় আবদুল হামিদকে, সাধারণ সম্পাদক কামরুজ্জামান। সেই পূর্ব পাকিস্তান ক্রীড়া লেখক সমিতি কর্তৃক শুরু করা বছরের সেরা খেলোয়াড় পুরস্কৃত করার রেওয়াজ অনুযায়ী বাংলাদেশ ক্রীড়া লেখক সমিতি ১৯৭৩ সালের সেরা খেলোয়াড়দের পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানের প্রথম আয়োজন করে ১৯৭৪ সালে। ঢাকা স্টেডিয়ামে তিনতলায় পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসাবে উপস্থিত ছিলেন শিক্ষা ও ক্রীড়ামন্ত্রী অধ্যাপক ইউসুফ আলী। ক্রীড়াঙ্গনে সবচে মর্যাদাপূর্ণ এবং বিতর্কের উর্ধ্বে এই পুরস্কার এখনো নিয়মিতভাবে দেয়া হচ্ছে বিভিন্ন খেলার “ডিসিপ্লিনে”। প্রসঙ্গত, জাতীয় ক্রীড়া পুরস্কার শুরুর আগে থেকেই ক্রীড়ালেখক সমিতির পুরস্কারের শুরু এবং সে হিসাবে এটা বাংলাদেশের প্রথম ক্রীড়ার জাতীয় পুরষ্কার।

১৯৯২ সালের ২৪ মে নভেম্বর বাংলাদেশ ক্রীড়া লেখক সমিতি সিউলে অনুষ্ঠিত আসপুর কংগ্রেসে (এশিয়ান স্পোটর্স প্রেস ইউনিয়ন) সদস্যপদ লাভ করে। এশিয়ান স্পোর্টস প্রেস ইউনিয়নের সদস্য পদ লাভ করে আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে ক্রীড়া লেখক সমিতি একধাপ এগিয়ে যাবার পর লক্ষ্য হয়ে দাঁড়ায় এআইপিএসের সদস্য পদ লাভ। ৭ই মে, ১৯৯৩ পূরণ হয় সেই প্রত্যাশা। বাংলাদেশ ক্রীড়া লেখক সমিতি এএসইপিএস-এর সদস্য পদ লাভ করে। আন্তর্জাতিক সংস্থার সদস্য হওয়ার কারণে দক্ষিণ এশীয় স্পোর্টস প্রেস কমিশন গঠনের দায়িত্ব দেওয়া হয় বাংলাদেশ ক্রীড়ালেখক সমিতিকে। আন্তর্জাতিক পরিমন্ডলের দরজা খোলার পর সমিতির সদস্যরা বিশ্বমঞ্চেও নিজেদের জায়গা করে নিতে থাকেন। রকিবুল হাসান ১৯৯৪ সালে আসপুতে নির্বাহী সদস্য নির্বাচিত হন। ২০০২ সালে ইকরাম উজ্জামানও নির্বাচিত হন সদস্য। এরপর ২০০৬ সালে নির্বাচনে তিনি সহসভাপতি পদে নির্বাচিত হন চার বছরের জন্য।  

অর্থাৎ বাংলাদেশ ক্রীড়ালেখক সমিতি সূত্রে বাংলাদেশের ক্রীড়া সাংবাদিকরা এখন দেশের গন্ডি ছাড়িয়ে বিচরণ করছেন বাইরেও। এবং দিচ্ছেন নেতৃত্বও। আর সাংবাদিকতার ক্ষেত্রে তাদের অগ্রগতি যে হয়েছে তাঁর প্রমাণ তো এখনকার পত্রিকার পাতা এবং টিভির খেলার খবর। অভিজ্ঞ ক্রীড়া সাংবাদিকদের পথ ধরে এসে উদ্যমী তরুণ প্রজš§ দিচ্ছে তাতে নতুন নতুন মাত্রা। সেটা আরও এগিয়ে যাক, ক্রীড়া সাংবাদিকতার মাধ্যমে বাংলাদেশের সাংবাদিকরা খেলাকে নিয়ে যাবেন আরও উঁচুতে আজকের বিশ্ব ক্রীড়া সাংবাদিক দিবসে এটাই আমাদের প্রত্যাশা।

লেখক : ক্রীড়া কলামিস্ট এবং বিশ্লেষক ও সহ-সভাপতি এআইপিএস, এশিয়া।
সম্পাদনা: সেকান্দার আলী, বিভাগীয় প্রধান স্পোর্টস


বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
welcome-ad