ঢাকা, রবিবার, ৫ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১, ১৯ মে ২০২৪, ১০ জিলকদ ১৪৪৫

শেয়ারবাজার

চীনের অর্থ পেয়েছে ডিএসই

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১০৪২ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ৩, ২০১৮
চীনের অর্থ পেয়েছে ডিএসই

ঢাকা: শেয়ার বিক্রির ৯৪৬ কোটি ৯৮ লাখ ২৬ হাজার ৬৪৫ টাকা ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) অ্যাকাউন্টে জমা দিয়েছে চীনা জোট।

সোমবার (০৩ সেপ্টেম্বর) বিকেলে ডিএসইর কৌশলগত বিনিয়োগকারী হিসেবে ২৫ শতাংশ শেয়ারের বিনিময়ে এ অর্থ দিয়েছে চীনের দুই পুঁজিবাজার সাংহাই ও শেনজেন স্টক এক্সচেঞ্জ।  

গত ১৪ মে’র চুক্তির আলোকে চীনা কনসোর্টিয়াম বাংলাদেশের স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড ব্যাংকে নন-রেসিডেন্ট ইনভেস্টরস অ্যাকাউন্টের (নিটা) মাধ্যমে ডিএসইর সিটি ব্যাংকের অ্যাকাউন্টে এই অর্থ ছাড় করেছে।

(নিটা অ্যাকাউন্ট হচ্ছে অ-বাংলাদেশি তথা বিদেশি ও নন-রেসিডেন্ট বাংলাদেশি (বাংলাদেশি কিন্তু অন্য দেশে বসবাসরত) নিটা অ্যাকাউন্টের মাধ্যমেই শেয়ার ব্যবসা করতে পারে। আর এই হিসাবের মাধ্যমে বিনিয়োগের মুনাফা বা লভ্যাংশ দেশের বাইরে নিতে পারে। )

এই লক্ষ্যে চীনা স্টক এক্সচেঞ্জের প্রতিনিধি দল রোববার (০২ সেপ্টেম্বর) রাতে ঢাকায় আসেন। এরপর সোমবার শেয়ার সংরক্ষণকারী সেন্ট্রাল ডিপোজিটরি অব বাংলাদেশে (সিডিবিএল) বিও অ্যাকাউন্ট খুলে চীনা জোট। তারপর বিকেলে অর্থ ট্রান্সফার করা হয়। ডিএসইর অর্থের মালিক ২৫০ জন শেয়ারহোল্ডার।

বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন ডিএসইর কোম্পানি সচিব মো. আসাদুর রহমান। তিনি বাংলানিউজকে বলেন, সোমবার ব্যাংকিং কর্মঘণ্টার মধ্যে ডিএসইর অ্যাকাউন্টে টাকা ট্রান্সফার হয়েছে।

তিনি বলেন, সবকিছু ঠিক থাকলে মঙ্গলবার সকালে বোর্ড সভা অনুষ্ঠিত হবে। সভায় শেয়ার কেনার বিনিময়ে ডিএসইর পরিচালক হিসেবে শেনজেন স্টক এক্সচেঞ্জ আইটি ম্যানেজমেন্ট বিভাগের ডেপুটি ডিরেক্টর জেনারেল জি ওয়েনহাইকে অনুমোদন দেওয়া হবে। এরপর বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের সঙ্গে বৈঠক শেষে বিকেলে হোটেল সোনারগাঁয়ে সংবাদ সম্মেলন করে আনুষ্ঠানিকভাবে সব তথ্য জানাবে ডিএসই।

এর ফলে ১৯৫৪ সালে যাত্রা করা ডিএসইর ইতিহাসে নতুন এক মাইলফলকের সৃষ্টি হলো। এতে দেশের পুঁজিবাজারকে এগিয়ে নিয়ে অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখার সম্ভাবনা দেখছেন সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা।  

তাদের মতে, কারিগরি সহায়তা ও পুঁজিবাজারে পণ্যের বৈচিত্র্য আনতে কার্যকরী সহায়ক হবে চীনের প্রথম সারির এ দুই স্টক এক্সচেঞ্জ। বাড়বে বিদেশি বিনিয়োগকারীও। চীনের প্রথম সারির এ দুই স্টক এক্সচেঞ্জ নিজেদের এগিয়ে যাওয়ার অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগিয়ে উন্নত করবে দেশের স্টক এক্সচেঞ্জকে।

এর ফলে দেশের পুঁজিবাজার আন্তর্জাতিকভাবে মর্যাদায় উন্নীত হচ্ছে। অন্যদিকে তারল্য সংকটের বাজারে ডিএসইর ২৫০ জন শেয়ারহোল্ডার বিনিয়োগ করবেন। এতে বাজারের তারল্য সংকট কিছুটা কমবে বলে প্রত্যাশা বাজার সংশ্লিষ্টদের।

সূত্রে জানা যায়, শেনজেন ও সাংহাই ১৯৯০ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়। শেনজেন স্টকে প্রধান পণ্য চারটি- ইক্যুইটি, বন্ড, সিকিউরিটাইজেশন পণ্য ও ফান্ড। পঞ্চম প্রজন্মের ট্রেডিং প্ল্যাটফর্মে শেয়ার কেনাবেচা হয়। সাংহাই স্টক এক্সচেঞ্জের প্রধান পণ্য চারটি- ইক্যুইটি, বন্ড, ফান্ড ও ডেরিভেটিভস। ডিএসইতে পাঁচটি পণ্য থাকলেও নিয়মিত কেনাবেচা হয় দু’টির। অন্য পণ্যগুলো চালু করতে কারিগরি ও আইনগত সহায়তার অভাব রয়েছে ডিএসইতে।

প্রস্তাব পর্যালোচনায় দেখা যায়, চীনা কনসোর্টিয়াম এসএমই ক্যাপিটাল মার্কেট উন্নয়ন, পণ্যে বৈচিত্র্য আনা, ইনভেস্টর রিলেশন সার্ভিস অটোমেশন ফ্রেমওয়ার্ক, মানবসম্পদ উন্নয়ন, লেনদেন ব্যবস্থার উন্নয়ন ও কারিগরি উন্নয়নে সহায়তা করবে। ইউরোপিয়ান ও গ্লোবাল মার্কেটে ডিএসইর প্রবেশেও সহযোগিতা করবে চীনা কনসোর্টিয়াম। বাংলাদেশের ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পের সম্ভাবনায় (এসএমই) শিল্পকে আইপিওর মাধ্যমে পুঁজিবাজারে আনতে কাজ করবে চীন। এতে বাংলাদেশে এসএমই খাতকে সহায়তা করতে বড় ভূমিকা রাখবে পুঁজিবাজার।

চীনের কাছ থেকে পাওয়া এ টাকার ৮০-৯০ শতাংশ পুঁজিবাজারে বিনিয়োগ হবে বলে আশা করেন ডিএসই ব্রোকার্স অ্যাসোসিয়েশনের (ডিবিএ) সাবেক সভাপতি আহমেদ রশিদ লালী।  

তিনি বাংলানিউজকে বলেন, দেশি-বিদেশি বিনিয়োগকারীদের আকৃষ্ট করে বাজারে আস্থা ও তারল্য সংকট দূর করতে এই টাকা বিনিয়োগ করা হবে। তাতে বাজারে ফ্রেশ ফান্ড আসবে।

সার্বিক বিষয়ে বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) সাবেক চেয়ারম্যান ড. এবি মির্জা আজিজুল ইসলাম বাংলানিউজকে বলেন, সাংহাই ও শেনজেন চীনের দ্বিতীয় ও তৃতীয় পুঁজিবাজার। বাজার মূলধনের দিক থেকে বিশ্বের সেরা দশ স্টক এক্সচেঞ্জের তালিকায়ও রয়েছে এ দুই স্টক এক্সচেঞ্জ। ফলে তারা ডিএসইর মালিকানায় আসায় দেশের পুঁজিবাজার আন্তর্জাতিকভাবে মর্যাদা পেয়েছে। এর ফলে পুঁজিবাজারে বিদেশিরা বিনিয়োগ করতে আকৃষ্ট হবেন। এছাড়াও কারিগরিভাবে শক্তিশালী হবে বলে জানান তিনি।

চলতি বছরের ১৪ মে রাজধানীর লা-মেরিডিয়ান হোটেলে ডিএসইর স্ট্রাটেজিক পার্টনার (কৌশলগত বিনিয়োগকারী) হিসেবে চুক্তি স্বাক্ষর করে চীনা স্টক এক্সচেঞ্জ। অনুষ্ঠানে ডিএসইর ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) কে এ এম মাজেদুর রহমান, শেনজেনের প্রেসিডেন্ট ও চিফ এক্সিকিউটিভ অফিসার (সিইও) ওয়াং জিয়ানজুন এবং সাংহাই স্টক এক্সচেঞ্জর চেয়ার অব সুপারভাইজরি বোর্ডের প্যান জুইজিয়ান চুক্তি স্বাক্ষর করেন।

তবে তার আগে নানা টালবাহানার পর কৌশলগত বিনিয়োগকারী হিসেবে চীনা কনসোর্টিয়ামের আবেদনের প্রস্তাব গত ৩ মে অনুমোদন দেয় বিএসইসি। ডিএসইর এ মালিকানা পেতে চীনা কনসোর্টিয়াম ছাড়াও ভারতের ন্যাশনাল স্টক এক্সচেঞ্জ, ফ্রন্ট্রিয়ার বাংলাদেশ ও যুক্তরাষ্ট্রের নাসডাক কনসোর্টিয়াম আবেদন করেছিলো।
 
বাংলাদেশ সময়: ১৬৪০ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ০৩, ২০১৮/আপডেট: ১৮৩০ 
এমআই/জেডএস

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।