ঢাকা, শুক্রবার, ২ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১, ১৭ মে ২০২৪, ০৮ জিলকদ ১৪৪৫

শেয়ারবাজার

পুঁজিবাজারে আসছে না নতুন ব্যাংক ও বিমা কোম্পানি

মাহফুজুল ইসলাম, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১২৩৪ ঘণ্টা, এপ্রিল ২৭, ২০১৬
পুঁজিবাজারে আসছে না নতুন ব্যাংক ও বিমা কোম্পানি

ঢাকা: নির্ধারিত সময়ের পর বর্ধিত আরো ৩ বছরের মধ্যেও (২০২০ সালের আগে) পুঁজিবাজারে আসছে না নতুন ২৫টি ব্যাংক ও বিমা কোম্পানি। এর মধ্যে রয়েছে ৯টি তফসিলি ব্যাংক আর ১৬টি বিমা কোম্পানি।

চলতি বছরের মধ্যে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত হওয়ার কথা ছিলো ব্যাংকগুলোর। কিন্তু নতুন ব্যাংগুলোর মধ্যে ৫টিকে নির্ধারিত সময়ের পর আরো ৩ বছর বাড়তি সময় দিয়েছে ব্যাংলাদেশ ব্যাংক। বাকি ৪টি ব্যাংককেও বাড়তি সময় দেওয়া হচ্ছে বলে বাংলাদেশ ব্যাংক সূত্রে জানা গেছে।
 
অন্যদিকে ১৬টি বিমা কোম্পানির কোনোটিই পুঁজিবাজারে আসার মতো সক্ষমতা অর্জন করতে পারেনি। ফলে ২০১২ সালে অনুমোদন পাওয়া এ কোম্পানিগুলোর কোনোটিই আগামী ৪ বছরের মধ্যে প্রাথমিক গণপ্রস্তাবে (আইপিও) পুঁজিবাজারে আসতে পারবে না। তার কারণ, গত ৩ বছরে কোম্পানিগুলো মুনাফায় আসতে পারেনি। আগামী ৩ বছরের মধ্যে মুনাফায় ফেরা নিয়েও শঙ্কায় রয়েছে কোম্পানিগুলো।

পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থার নিয়ম অনুসারে কোনো কোম্পানিকে আইপিওতে আসতে হলে শেষ ৩ বছর ভালো মুনাফায় থাকতে হবে। অর্থাৎ কোম্পানিকে সর্বশেষ ৩ বছর আর্থিক প্রতিবেদনে মুনাফা দেখাতে হয়।
 
২০১২ সালে দুই দফায় ৯টি ব্যাংককে ব্যবসার অনুমোদন দেয় ব্যাংলাদেশ ব্যাংক। যার প্রধান শর্ত ছিলো ব্যবসা শুরুর ৩ বছরের মধ্যে পুঁজিবাজারে আসতে হবে। একই বছরে ১৬টি বিমা কোম্পানিকে দেশের বিমা খাতে ব্যবসা করার জন্য অনুমোদন দেয় বিমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ (আইডিআরএ)।
 
বিমা আইন অনুসারে, নিবন্ধিত হওয়ার ৩ বছরের মধ্যে বিমা কোম্পানিকে পুঁজিবাজারের আইপিওতে আসতে হয়। এরপর যুক্তিসঙ্গত কারণ দেখিয়ে আরো ৬ মাস বাড়াতে পারে। বিমা আইন-২০১০ এর ১৩০ ধারা অনুযায়ী আইপিওতে আসার নির্ধারিত সময় পার হলে প্রথমে কোম্পানিকে মূল জরিমানা হিসেবে এককালীন ১০ হাজার টাকা দিতে হয়। এরপর যতোদিন আইপিওতে আসতে না পারবে, ততোদিন কোম্পানিকে প্রতিদিনের জন্য ৫ হাজার টাকা করে জরিমানা দিতে হবে।
 
বিমা কোম্পানিগুলো হচ্ছে- জেনিথ ইসলামী লাইফ, যমুনা, গার্ডিয়ান, মাকেন্টাইল, প্রটেক্টিভ, আলফা, বেস্ট, চাটার্ড, ডায়মন্ড, এনআরবি গ্লোবাল, স্বদেশ লাইফ, সেনা কল্যাণ ও সিকদার জেনারেল ইন্স্যুরেন্স ইত্যাদি।
 
জেনিথ ইসলামী লাইফ ইন্স্যুরেন্সের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আমজাদ হোসাইন খান চৌধুরী বাংলানিউজকে বলেন, লাভ-লসের মধ্যে দিয়ে গত ৩ বছর ধরে আমাদের কোম্পানি চলছে। আশা করছি, আগামী ৩ বছর অর্থাৎ ২০১৭-১৯ সাল পর্যন্ত ভালো মুনাফা করার পর ২০২০ সালের মধ্যে পুঁজিবাজারে আসবো। তার আগে না। একই কথা বলেছেন গাডিয়ান, মার্কেন্টাইল এবং স্বদেশ লাইফ ইন্স্যুরেন্স কোম্পানির এমডিরাও।
 
আইডিআরএ’র সদস্য ও মুখপাত্র জুবের আহমেদ খান বাংলানিউজকে জানান, চলতি বছরে শেষ দিকে নতুন কোম্পানির ব্যবসার ৩ বছর শেষ হবে। কোম্পানিগুলোর ব্যবসার কন্ডিশন খুব ভালো না। বিমা কোম্পানি যদি মনে করে যে, নির্ধারিত সময়ে পুঁজিবাজারে  আসতে পারবে না, তাহলে সময় বাড়ানোর জন্য আবেদন করার সুযোগ রয়েছে। তবে হয়তো আরো ৬ মাস সময় বাড়ানো হবে। কিন্তু তাতেও তেমন লাভ হবে না। ফলে তাদেরকে জরিমানা গুণতে হবে।

‌‘তবে এই আইনে পরিবর্তন আনার চেষ্টা করছি’- বলেন তিনি।
 
নাম না প্রকাশের শর্তে আইডিআরএ’র আরেক সদস্য বলেন, ‘নতুন ইন্স্যুরেন্স কোম্পানির মধ্যে ২টি জেনারেল আর বাকি ১৪টি লাইফ কোম্পানি। এক সঙ্গে এতো জীবন বিমা কোম্পানির অনুমোদন হয়নি। এ সেক্টরে এতো প্রতিযোগিতাও ছিলো না। ফলে গত ২ বছর কোম্পানিগুলোর রিনিউয়াল ইনকাম ভালো হয়নি। আগামী ২-৩ বছরের মধ্যে ভালো মুনাফায় আসতে পারবে বলে আমার মনে হয় না’।
 
অন্যদিকে পুঁজিবাজারে চলমান মন্দার কারণে তালিকাভুক্ত হতে আগ্রহ নেই নতুন ব্যাংকগুলোর। ব্যাংকগুলোর অনুমোদনের সময় যে সম্মতিপত্র (এলওআই) দেওয়া হয়েছিল, তাতে শর্ত ছিল, কার্যক্রম শুরুর তিন বছরের মধ্যে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত হতে হবে। সে হিসাবে চলতি বছরের মধ্যেই নতুন ব্যাংকগুলোর বাজারে তালিকাভুক্ত হতে আইপিওতে শেয়ার ছাড়ার কথা। কিন্তু সেই শর্ত পূরণ করছে না ব্যাংকগুলো। বরং এ অবস্থায় নতুন নয়টি ব্যাংককে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত হতে আরও তিন বছর পর্যন্ত বাড়তি সময় দিচ্ছে বাংলাদেশ ব্যাংক।
 
২০১২ সালের শুরুতে দুই দফায় দেশীয় উদ্যোক্তাদের জন্য ছয়টি ও প্রবাসী বাংলাদেশিদের তিনটি নতুন ব্যাংকের লাইসেন্স দেওয়া হয়। এর মধ্যে দেশীয় উদ্যোক্তাদের ব্যাংকগুলো হলো- মেঘনা, মধুমতি, মিডল্যান্ড, ফারমার্স, ইউনিয়ন এবং সাউথ বাংলা এগ্রিকালচার অ্যান্ড কমার্স ব্যাংক।
 
অন্যদিকে প্রবাসী বাংলাদেশিদের জন্য যে তিনটি ব্যাংকের অনুমোদন দেওয়া হয়েছে, সেগুলো হলো- এনআরবি, এনআরবি গ্লোবাল ও এনআরবি কমার্শিয়াল ব্যাংক।

এসব ব্যাংকের পক্ষ থেকে বাংলাদেশ ব্যাংকে ২০১৫ সালের যে আর্থিক হিসাব বিবরণী জমা দেওয়া হয়েছে- তা থেকে জানা গেছে, একমাত্র এনআরবি গ্লোবাল ছাড়া বাকি সবগুলোই মুনাফায় রয়েছে।
 
মেঘনা ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ নুরুল আমিন বলেন, এখন পুঁজিবাজারের যে অবস্থা তাতে এক সঙ্গে নয়টি ব্যাংক পুঁজিবাজার থেকে টাকা তুলতে গেলে তা সম্ভব হবে না। এছাড়া সব ব্যাংকের আর্থিক অবস্থা এখনো মজবুত হয়নি। তাই আমরা ২০১৯ সাল পর্যন্ত সময় চেয়েছি। বাংলাদেশ ব্যাংক তা অনুমোদন করেছে।

একই কথা বলেন সাউথ বাংলা ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক রফিকুল ইসলাম। তিনি বলেন, পুঁজিবাজারের অবস্থা ভালো না। আবার আমরাও নতুন। এ কারণে এ মুহূর্তে তালিকাভুক্ত হওয়া সম্ভব না।
 
বাংলাদেশ সময়: ১২৩৬ ঘণ্টা, এপ্রিল ২৭, ২০১৬
এমআই/এএসআর

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।