ঢাকা, শনিবার, ১৬ চৈত্র ১৪৩০, ৩০ মার্চ ২০২৪, ১৯ রমজান ১৪৪৫

একাত্তর

‘রণাঙ্গনে সৈনিকদের কোনো দল ছিল না’

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৯৫৮ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১৭, ২০১৬
‘রণাঙ্গনে সৈনিকদের কোনো দল ছিল না’ ছবি: বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

১৯৭১ সালে যখন দেশের সার্বভৌমত্ব রক্ষায় যুদ্ধ করেছি, তখন রণাঙ্গনে সৈনিকদের কোনো দল ছিল না। ‘জয় বাংলা’ই ছিল একমাত্র স্লোগান। সে স্লোগানকে ধারণ করে বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বেই দেশ স্বাধীন হয়েছিল।

ফেনী: ১৯৭১ সালে যখন দেশের স্বাধীনতা সার্বভৌমত্ব রক্ষায় যুদ্ধ করেছি, তখন রণাঙ্গনে সৈনিকদের কোনো দল ছিল না। ‘জয় বাংলা’ই ছিল একমাত্র স্লোগান।

সে স্লোগানকে ধারণ করে বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বেই দেশ স্বাধীন হয়েছিল। সেদিন ছিল না দলীয় পরিচয়। স্বাধীনতার পক্ষের সব শক্তি ছিল ঐক্যবদ্ধ। সবার একটাই স্বপ্ন ছিল- নিজের মতো করে নিজেদের দেশটা গড়ব।

আজ আবার সময় এসেছে মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষের সব শক্তি এক হয়ে সন্ত্রাস, জঙ্গিবাদ ও মাদকমুক্ত সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়ার।

বাংলানিউজের সঙ্গে একান্ত সাক্ষাৎকারে এ কথাগুলো বলছিলেন মুক্তিযুদ্ধের ০২ নং সাব সেক্টর কমান্ডার ও সাবেক মন্ত্রী লে. কর্নেল জাফর ইমাম বীর বিক্রম।
ছবি: বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
তিনি বলেন, ‘মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে সমুন্নত রাখতে হলে বর্তমান এবং ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে শহীদদের স্বপ্ন-সাধ বাস্তবায়নের লক্ষ্যে মুক্তিযুদ্ধের সঠিক ইতিহাস জানতে হবে। মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে কোনো গণ্ডির মধ্যে সীমাবদ্ধ না রেখে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের শক্তিগুলোর ঐক্যের পথ রাখতে হবে উন্মুক্ত। সজাগ থাকতে হবে- আমাদের কোনো ভুলের জন্য জাতি যেন দ্বিধা-বিভক্ত হয়ে না পড়ে।

এ প্রসঙ্গে তিনি বিলোনীয়া রণাঙ্গনের সৈনিক সুবেদার নুরুল ইসলামের কথা বলছিলেন- হানাদারদের গুলিতে সুবেদার নুরুল ইসলামের রক্তে যখন গ্রামের পুকুর রঞ্জিত হয়েছিল, মেঠো পথ হয়েছিল রক্তাক্ত। চলে যাবার আগে তিনি বলেছিলেন বিজয় দেখে যেতে পারলাম না! আমাদের বর্তমানটা ত্যাগ করে ভসিষ্যৎ টা রেখে গেলাম, প্রজন্মই দেশেটাকে দেখে রাখবে।
ছবি: বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
জাফর ইমাম বলেন, মুক্তিযুদ্ধ আমাদের অন্যতম জাতীয় ঐতিহ্য, অহংকার এবং গর্ব। কিন্তু দুঃখের সঙ্গে বলতে হয়, যে চেতনা নিয়ে জীবন বাজি রেখে মহান মুক্তিযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েছিলাম সেই চেতনা আজ প্রায় বিলুপ্তির পথে। এ দেশের মানুষ শহীদদের সম্মান দেখাতে ব্যর্থ হয়েছে। এ জাতি বড়ই অভাগা। শুধু বিজয় আর স্বাধীনতা দিবস এলেই মুক্তিযুদ্ধের চেতনা নিয়ে সবাই সোচ্চার হয়। বাকি সময় থাকে নিরব।

তিনি বলেন, ৫২ এর ভাষা আন্দোলন থেকে শুরু হয়েছিল আমাদের সংগ্রাম। তারই পথ ধরে আমরা পদার্পণ করেছিলাম ১৯৭১’র যুদ্ধে। এ দীর্ঘ সংগ্রাম যেন- একই মুদ্রার এপিঠ ওপিঠ। একই সূত্রে গাঁথা, একটি ফুলের মালা। এ সংগ্রাম ও যুদ্ধ সংগঠিত হয়েছিল বঙ্গবন্ধুর নামের ওপরেই। রাজনৈতিক বিশ্লেষণে দেখা যায়, সেদিন যদি তার নেতৃত্ব ও নামের ওপর যুদ্ধ পরিচালনা না হতো, তাহলে ভারতের সহযোগিতা থাকতো না। সম্ভব হতো না বিশ্ব জনমত প্রতিষ্ঠার।   সর্বোপরি মূল্যায়ন- এটাও বলা বাহুল্য নয় যে- অন্যকোনো পরিচয় বা নামে এ যুদ্ধ পরিচালনা হলে তা ব্যর্থতায় পর্যবসিত হতো।
ছবি: বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
মুক্তিযোদ্ধাদের বিভক্তির ব্যাপারে তিনি বলেন, স্বাধীনতার ৪৫ বছর পর মুক্তিযোদ্ধারা বিভিন্ন রাজনৈতিক দলে থাকাটাই স্বাভাবিক। যেখানেই থাকুক না কেন সবাই দেশপ্রেমিক। দলীয় কারণে তাদের বিতর্কিত করা সমীচীন নয়।

তবে, দুঃখের বিষয় ৪৫ বছরের মাথায় দাঁড়িয়ে আমরা যদি দেখি, কেউ কেউ এ যুদ্ধকে অবমূল্যায়ন করে এবং যুদ্ধের বছরকে ‘গণ্ডগোলের’ বছর বলে। মুক্তিযোদ্ধাদের অবদানকে স্বীকার করে না, শহীদদের প্রতি অশ্রদ্ধা করে, পতাকাকে অসম্মান করে। সেই সব শক্তিকে প্রতিহত করা দেশের প্রতিটি নাগরিকের দায়িত্ব।
ছবি: বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
জাফর ইমাম আরও বলেন, যারা জীবন বাজি রেখে রণাঙ্গনে সশস্ত্র যুদ্ধে অংশ নিয়েছেন, তাদের ইতিহাস যদি লিপিবদ্ধ না করি তাহলে বর্তমান ও ভবিষ্যৎ প্রজন্ম কখনো স্বাধীনতাযুদ্ধের সঠিক ইতিহাস জানতে পারবে না। মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় উদ্বুদ্ধ হতে পারবে না।
স্বাধীনতার ৪৫ বছরে অর্জন’র ব্যাপারে তিনি বলেন, যুদ্ধ পরবর্তী এ দীর্ঘ সময়ে জাতি ঐক্যবদ্ধ থাকতে পারিনি- যদি সবাই এক হয়ে একাত্তরের মানসিকতা ও উদ্দীপনা নিয়ে দেশ গড়তে পারতাম তাহলে অর্জন আরও বেশি হতে পারত।

বাংলাদেশ সময়: ১৫৫৯ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১৭, ২০১৬
পিসি/

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।