ঢাকা, মঙ্গলবার, ২২ আশ্বিন ১৪৩১, ০৮ অক্টোবর ২০২৪, ০৪ রবিউস সানি ১৪৪৬

একাত্তর

দুঃখের কাহিনী কইতে গেলে রাত পোহায় না

খোরশেদ আলম সাগর, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৬০৪ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১৫, ২০১৬
দুঃখের কাহিনী কইতে গেলে রাত পোহায় না ছবি: বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের সময় এক একটি দিন ছিল হাজার বছরের চেয়েও দীর্ঘ। সেই দুঃখের কাহিনী কইতে গেলে রাত পোহায় না। পাক হানাদার বাহিনীর বড় বড় অস্ত্রের কাছে মুক্তি বাহিনীর সাহসই ছিল প্রধান অস্ত্র।

লালমনিরহাট: ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের সময় এক একটি দিন ছিল হাজার বছরের চেয়েও দীর্ঘ। সেই দুঃখের কাহিনী কইতে গেলে রাত পোহায় না।

পাক হানাদার বাহিনীর বড় বড় অস্ত্রের কাছে মুক্তি বাহিনীর সাহসই ছিল প্রধান অস্ত্র।
 
সম্প্রতি বাংলানিউজের কাছে এমন অভিব্যক্তি প্রকাশ করেন জেলার কয়েকজন মুক্তিযোদ্ধা।

তাদের একজন পাটগ্রামের ধরলারপাড়ার মুক্তিযোদ্ধা সফিয়ার রহমান। তিনি জানান, যুদ্ধের সময় দেশ মাতৃকার মুক্তি কামনায় কয়েকজন বন্ধ‍ুসহ ভারতের মুজিব ক্যাম্পে প্রশিক্ষণ নিয়ে হানাদার বাহিনীকে এদেশ থেকে তাড়াতে যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েন।

বাংলাদেশের ভুখণ্ডে থাকা একমাত্র ৬ নম্বর সেক্টরের অধিনায়ক খাদেমুল বাশারের নেতৃত্বে লালমনিরহাট জেলার বিভিন্ন অঞ্চলে যুদ্ধ করেন তিনি।

মুক্তিযুেদ্ধের গল্প বলছেন কয়েকজন মুক্তিযোদ্ধাসে সময়ের স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে সফিয়ার রহমান বলেন, পাকিস্তানী  বাহিনীর অস্ত্রের মুখে আমরা (মুক্তিবাহিনী) ছিলাম বড়ই অসহায়। কিন্তু পাকিস্তানী সেনারা বড় বড় অস্ত্র ব্যবহার করলেও তারা ছিল ভিরু। মুক্তিবাহিনীর সাহসের কাছে তারা হেরে যেত। তাই তারা ৬ ডিসেম্বর ভোরে লালমনিরহাট ছেড়ে পালানোর সময় তিস্তা রেল সেতু উড়িয়ে দিয়ে প‍ালিয়ে যায়।

সদর উপজেলার বড়বাড়ি গ্রামের মুক্তিযোদ্ধা জয়েন উদ্দিন বলেন, স্বাধীনতা এমনিতেই আসেনি। এ দেশকে মুক্ত করার জন্য শুধু পানি খেয়ে দুই দিন কাটিয়েছি। তারপরও প্রাণপণ লড়ে গেছি। রাজাকারদের কারণে পাকিস্তানী বাহিনীর হাত থেকে নিজেদের রক্ষা করার জন্য একদিন একটি জঙ্গলে আত্মগোপন করেছিলাম আমরা ২০ জন যোদ্ধা। সেইদিনের দুঃখের কথা কইতে গেলে রাত পোহায় না বলে যোগ করেন জয়েন উদ্দিন।

তিনি বলেন, আদিতমারী উপজেলার মহিষাশহর এলাকায় রাতভর যুদ্ধ করার পর আমরা যখন সেখান থেকে রওনা হই তখন সকাল হয়ে যাওয়ায় হানাদার বাহিনী আমাদের অবস্থান টের পেয়ে যায়। সেসময় আমরা একটি জঙ্গলে আত্মগোপন করি। সেখানে হানাদার বাহিনী একের পর এক গুলিবর্ষণ করতে থাকে। তবে তারা জঙ্গলের ভেতরে প্রবেশ করেনি। যদি তারা জঙ্গলে ঢ‍ুকতো তাহলে আমরা ২০ জনই সেদিন শহীদ হতাম। কয়েকজন মৃক্তিযোদ্ধা

আদিতমারী উপজেলার মহিষখোচার মুক্তিযোদ্ধা লুৎফর রহমান বলেন, যুদ্ধ শেষে বাড়ি ফিরে দেখি রাজাকারের সহায়তায় পাকিস্তানী সেনারা আমার বাড়ি-ঘর জ্বালিয়ে দিয়েছে। এসময় রাজাকারদের ফাঁসিতে ঝুলিয়ে মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করায় শেখ হাসিনাকে ধন্যবাদ জানান তিনি। সেইসঙ্গে বাকী যেসব রাজাকার-আলবদর রয়েছে পর্যায়ক্রমে তাদেরও ফাঁসিতে ঝোলানোর আহবান জানান।

সদর উপজেলার কুলাঘাটের মুক্তিযোদ্ধা আকবর আলী জানান, ৫ ডিসেম্বর রাতে লালমনিরহাট সদর উপজেলার বড়বাড়ি এলাকায় পাকিস্তানী বাহিনীর ক্যাম্পে আক্রমণ করেন বেশ কিছু মুক্তিসেনা। রাতভর চলে সম্মুখ যুদ্ধ। সেসময় শুরু হয় ব‍ৃষ্টি। বৃষ্টিতে ভিজেই প্রতিরোধ গড়ে তোলেন তারা। ওই রাতে তার চোখের সামনে কয়েকজন মুক্তিসেনা শহীন হন। অবশেষে ভোর হতে না হতেই পাকিস্তানী বাহিনী লালমনিরহাট ছেড়ে পালিয়ে যেতে বাধ্য হয়। তারপর ওই এলাকার রাজাকাররা অস্ত্র জমা দিয়ে আত্মসমর্পণ করে। তাদের কাছ থেকে জমা নেওয়া অস্ত্রগুলো গরুর গাড়িতে করে ৬ নম্বর সেক্টরে পাঠানো হয়।

সদর উপজেলার মুক্তিযোদ্ধা নুরল হক, আব্দুর রহমান, আজিজুল ইসলাম ও শমসের আলী জানান, সেসময় এক একটি দিন ছিল হাজার বছরের চেয়েও দীর্ঘ। সারাদিন পাকিস্তানী বাহিনী দেশের নিরীহ মানুষের ওপর নির্যাতন চালিয়ে হত্যা করেছে। রাত হলেই তারা ক্যাম্পে ফিরে যেত। আর সেসময় অভিযান চালাতেন মুক্তিযোদ্ধারা।

বাংলাদেশ সময়: ১১৫৮ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১৫, ২০১৬
আরএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।