গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জে অ্যানথ্রাক্সের উপসর্গ নিয়ে মোছা. রোজিনা বেগম নামে এক নারীর মৃত্যুর খবর ছড়িয়ে পড়লেও তা সঠিক নয় বলে জানিয়েছে গাইবান্ধার স্বাস্থ্য বিভাগ।
সোমবার (৬ অক্টোবর) বিকেলে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন গাইবান্ধার সিভিল সার্জন মো. রফিকুজ্জামান।
তিনি বলেন, গত ৪ অক্টোবর রোজিনা নামের ৪৫ বছর বয়সী ওই নারী সুন্দরগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসা নিয়েছেন। ওই রোগীর প্রেসার ছিল সে কারণে তার হার্টে সমস্যা দেখা দেয়। এছাড়া ওই নারী জটিল রোগে আক্রান্ত ছিলেন। একইসঙ্গে তার হাতে ফোসকা ছিল। যেটিকে আমরা অ্যানথ্রাক্সের উপসর্গ বলেছি। কিন্তু ওই নারী অ্যানথ্রাক্সের কারণে মারা গেছেন বিষয়টি সঠিক নয়। এটি বিভ্রান্তিমূলক। কেননা অ্যানথ্রাক্সে চামড়ায় উপসর্গ দেখা দেয়, সেটিতে মানুষের মৃত্যুর কোনো কারণ নেই। মূলত: ওই নারী অন্যান্য জটিল রোগের কারণে মারা গেছেন। এ ধরনের গুজব না ছড়ানোর আহ্বান জানান তিনি।
এর আগে সুন্দরগঞ্জ উপজেলার বেলকা ইউনিয়নের বাসিন্দা রোজিনা (৪৫) নামে এক রোগী অ্যানথ্রাক্স রোগে মৃত্যুবরণ করেছেন, এমন একটি গুজব সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, গত ৩০ সেপ্টেম্বর সুন্দরগঞ্জ উপজেলার বেলকা ইউনিয়নের পশ্চিম বেলকা গ্রামের মো. আবুল হোসেনের স্ত্রী রোজিনা তার অসুস্থ ছাগল জবাই করেন। মাংস কাটার সময় ওই নারীর হাতে হাড়ের খোঁচা লাগে এবং পরে দুটি ফোসকা দেখা দেয়। এতে ওই নারী প্রথমে স্থানীয় এবং পরে উপজেলা কমপ্লেক্সে চিকিৎসা নেন। সেখান থেকে তাকে রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে রেফার্ড করে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স কর্তৃপক্ষ।
এ ব্যাপারে উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. দিবাকর বসাক বলেন, এখানে চিকিৎসা নিতে আসা ওই নারীর প্রেসার, শ্বাসকষ্ট এবং অন্যান্য জটিল সমস্যা ছিল। একই সঙ্গে তার হাতে চামড়ায় ফোসকা ছিল। যেটাকে আমরা অ্যানথ্রাক্সের উপসর্গ বলছি। তবে অ্যানথ্রাক্স আক্রান্তের কারণে ওই নারীর মৃত্যু হওয়ার কথা নয়। কেননা এই রোগে মানুষের মৃত্যু নেই বললেই চলে। এরপরও বিষয়টি রমেক হাসপাতাল বলতে পারবেন। ৪ অক্টোবর ওই রোগী খুব খারাপ অবস্থায় আমাদের এখানে এসেছিলেন। প্রয়োজনীয় চিকিৎসা দিয়েই তাকে রংপুর মেডিকেল রেফার্ড করা হয়।
উল্লেখ্য, গত ২৭ সেপ্টেম্বর উপজেলার বেলকার কিশামত সদর গ্রামে মাহাবুর রহমানের একটি গরু হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়ে। পরে সেটি জবাই করে মাংস ভাগাভাগি করা হয়। এ কাজে অংশ নেওয়া ১১ জনের শরীরে কয়েকদিন পর ফোসকা, ঘা এবং পাঁচজনের মধ্যে উপসর্গ দেখা দেয়। আক্রান্তদের হাত, মুখ, চোখ ও নাকে ক্ষতচিহ্ন স্পষ্ট হতে থাকে। পরে আক্রান্তরা চিকিৎসকের মাধ্যমে অ্যানথ্রাক্সে আক্রান্ত হওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত হন। তাদের মধ্যে মোজা মিয়া, মোজাফফর মিয়া, শফিকুল ইসলাম ও মাহাবুর রহমানসহ পাঁচজন বেসরকারি ক্লিনিক ও গাইবান্ধা জেলা হাসপাতালে চিকিৎসাধীন এবং অন্যরা স্থানীয়ভাবে চিকিৎসা নেন।
এ ঘটনার পরে গতকাল ওই নারীর জটিল রোগে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুবরণ করলেও তার হাতে ফোঁসকা থাকায় ফেসবুক ও একাধিক গণমাধ্যম অ্যানথ্রাক্সে আক্রান্ত হয়ে তার মৃত্যু হয়েছে বলে প্রচার করে।
আরএ