ঢাকা, সোমবার, ৬ আশ্বিন ১৪৩২, ২২ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ২৯ রবিউল আউয়াল ১৪৪৭

সারাদেশ

এসএমপির ৮ নির্দেশনা

অবৈধ যানবাহন-ফুটপাত দখলমুক্তে অভিযান শুরু সোমবার

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট  | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১০:০১, সেপ্টেম্বর ২১, ২০২৫
অবৈধ যানবাহন-ফুটপাত দখলমুক্তে অভিযান শুরু সোমবার

সিলেট নগরের যানজট নিরসনে কারণ চিহ্নিত করে এবার বড় ধরনের অভিযানে নামছে সিলেট মেট্রোপলিটন পুলিশ (এসএমপি)।

সোমবার (২২ সেপ্টেম্বর) সকাল থেকে অভিযান শুরু হবে।

ফলে রোববার (২১ সেপ্টেম্বর) সতর্কীকরণ বিজ্ঞপ্তি জারি করা হয়েছে। নির্দেশনা অমান্যকারীকে পড়তে পারেন নিয়মিত মামলার জালে।  

এসএমপি সূত্রে জানা গেছে, অবৈধ যানবাহন ও ফুটপাত দখলমুক্তে, অনিবন্ধিত গাড়ি চলাচল বন্ধ এবং ব্যাটারিচালিত রিকশার বিরুদ্ধে চলবে এই অভিযান। সেই সঙ্গে এক নাম্বারে চলা একাধিক সিএনজিচালিত অটোরিকশাও ডাম্পিং করা হবে।  

সিলেট মেট্রোপলিটন পুলিশের উপ কমিশনার (মিডিয়া) মোহাম্মদ সাইফুল ইসলাম এ তথ্য নিশ্চিত করে বলেন, ফুটপাত থেকে হকার উচ্ছেদ, অবৈধ সিএনজি, ব্যাটারিচালিত যানবাহন ও চোরাই গাড়ি ধরতে ট্রাফিক, ক্রাইম ইউনিটসহ এসএমপির সব ইউং একসাথে মাঠে নামবে। সেই সঙ্গে দোকানিদের যারা ফুটপাত দখল করে পসরা সাজিয়েছেন কিংবা ভাড়া দিচ্ছেন, তাদের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেওয়া হবে।  

পুলিশের এই কর্মকর্তা বলেন, রোববার আল্টিমেটাম দিয়ে সোমবার থেকে যৌথ টিম মাঠে নামবে। মূলত, নগরীর শৃঙ্খলা ফেরাতে এবং জনভোগান্তি দূরীকরণে এই উদ্যোগ।

সূত্র জানায়, ফুটপাত থেকে হকারদের পুনর্বাসনে সিসিকের উদ্যোগে হকার মার্কেট এলাকায় শেড তৈরি করা হলেও পুনর্বাসন প্রক্রিয়া বাস্তব রূপ পায়নি। অধিক বিক্রির লালসায় হকাররা ফের সড়কে বসতে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করেন। আর বিগত বছরগুলোতে পুলিশ ও রাজনৈতিক নেতাকর্মীদের চাঁদাবাজির কারণে হকার উচ্ছেদ সম্ভব হয়নি। তেমনি ৫ আগস্টের পর পরিবহন সেক্টরের নিয়ন্ত্রকরা খোলস পাল্টে এখন আওয়ামী লীগ থেকে ‘হিজরত’ করেছেন, বিএনপি, জামায়াত, খেলাফত মজলিসসহ বিভিন্ন দলে। তারা পরিবহন সেক্টরকে নিয়ন্ত্রণ করছেন। ওইসব নেতাদের ছত্রছায়ায় নগরের মোড়ে মোড়ে, হাসপাতাল-ক্লিনিক, স্কুলকলেজের সামনে সড়ক দখল করে গড়ে ওঠেছে অবৈধ স্ট্যান্ড। তাদের দাপট আগেও ছিল, এখনো আছে।   

সরেজমিন দেখা গেছে, নগরের বন্দরবাজারস্থ লালবাজারের সামনে ফুটপাত থেকে সড়কে মাটি ভরাট করে দোকানিরা সিঁড়ি করেছেন। জেল রোড থেকে বর্ণমালা স্কুল পর্যন্ত হকার, সিএনজি অটোরিকশার দৌরাত্ম্যে সড়ক দখলে থাকে। প্রধান ডাকঘরের সামনে থেকে নগরভবন, হাসান মার্কেটের প্রধান ফটক থেকে কোর্ট পয়েন্টের সড়কের আইল্যান্ড, ওভারব্রিজ, কালেক্টরেট মসজিদের সামন থেকে আদালতের সম্মুখভাগ, এসপি অফিসের সামন থেকে ডিসির বাংলোর সামন হয়ে জালালাবাদ পার্ক, এমনকি গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা বাংলাদেশ ব্যাংকের সামনও হকারদের দখলে। জিন্দাবাজার থেকে চৌহাট্ট ও আম্বরখানা পর্যন্ত এবং স্টেডিয়াম মার্কেটের সামনের সড়ক, সবখানেই হকারদের দৌরাত্ম্য। এসব হকারদের বেশিরভাগই বহিরাগত। তারা রাজনৈতিক নেতাকর্মীর শেল্টারে দাপটের সঙ্গে সড়কে ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছে। আর ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন ট্যাক্স দিয়ে ব্যবসা করা দোকানিরা।

বিগত দিনে সিএনজি অটোরিকশায় তিনজন পুলিশের নির্দেশনার পরিপ্রেক্ষিতে ভাড়া বাড়িয়ে দেন চালকরা। বর্তমানে অটোরিকশায় পাঁচজন বহন করলেও বাড়তি ভাড়া আদায় করা হচ্ছে। নিয়মনীতি না থাকায় সিএনজি অটোরিকশা থেকে ব্যাটারিচালিত ও প্যাডেলচালিত রিকশাও ইচ্ছেমতো ভাড়া আদায় করে। এ নিয়ে প্রতিনিয়ত যাত্রী ও চালকদের মধ্যে বাগ-বিতণ্ডা, মারামারির ঘটনাও ঘটছে। সিলেট সিটি করপোরেশন কর্তৃপক্ষও এ ব্যাপারে কোনো পদক্ষেপ নেয়নি।

নগরবাসীর দীর্ঘদিনের দাবি ফুটপাত হকারমুক্ত করা। রাস্তা থেকে অবৈধ স্ট্যান্ড সরানো এবং নগরীর যত্রতত্র পার্কিং বন্ধ করা। কিন্তু শ্রমিক সংগঠনগুলোর আস্কারায় বেপরোয়া চালকরা। এবার নগরের শৃঙ্খলা ফেরাতে পুলিশ প্রশাসনের উদ্যোগ সফল হবে, এমনটি আশাবাদী নগরবাসীও।

শনিবার সিলেটে নগরীর যান চলাচলে শৃঙ্খলা ফেরাতে এসএমপির আট দফা নির্দেশনা জারি ও সোমবার থেকে অভিযানের গণবিজ্ঞপ্তি জারি করেছে এসএমপি। পুলিশ কমিশনারের বরাত দিয়ে এ নির্দেশনা জারি করা হয়।

এতে জানানো হয়েছে, আগামী সোমবার (২২ সেপ্টেম্বর) সকাল থেকে এ নির্দেশনার আলোকে নগরের বিভিন্ন এলাকায় বিশেষ অভিযান পরিচালনা করা হবে এবং অভিযান অব্যাহত থাকবে।

এসএমপি কমিশনার জানান, নগরবাসীর ভোগান্তি কমানো এবং সড়ক দুর্ঘটনা প্রতিরোধে এসব নির্দেশনা কঠোরভাবে বাস্তবায়ন করা হবে। কোনোভাবেই নগরে অনুমোদনবিহীন, কাগজপত্র ছাড়া বা নিয়ম অমান্যকারী যানবাহন চলাচল করতে পারবে না।

আট দফা নির্দেশনায় বলা হয়: যানজটমুক্ত নগরী গড়ে তুলতে সিলেট মহানগরীতে কোনো ব্যাটারিচালিত রিকশা রেজিস্ট্রেশনবিহীন বা ভুয়া নম্বর প্লেটযুক্ত যানবাহন চলাচল করতে পারবে না। অনুমোদিত স্ট্যান্ডে নির্ধারিত সংখ্যার বেশি সিএনজি চালিত অটোরিকশা রাখা যাবে না। অনুমোদনবিহীন ও অননুমোদিত স্থানে কোনো ধরনের পার্কিং করা যাবে না। মোটরসাইকেলচালক ও আরোহী উভয়কেই বাধ্যতামূলকভাবে হেলমেট পরিধান করতে হবে। সকাল ৮টা থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত নগরীতে ট্রাক, কাভার্ড ভ্যান ও লরি প্রবেশ করতে পারবে না। বাস, মিনিবাস, কোচ, কার, মাইক্রোবাস ও হাইয়েসের চালকরা ড্রাইভিং লাইসেন্স, গাড়ির কাগজপত্র ও সিটবেল্ট ছাড়া গাড়ি চালাতে পারবেন না। কোনো পরিবহনে অতিরিক্ত যাত্রী বা অতিরিক্ত ভাড়া নেওয়া যাবে না। এছাড়া হেডলাইট, ব্রেক লাইট ও সিগন্যাল লাইট সঠিকভাবে সচল না থাকলে গাড়ি রাস্তায় নামানো যাবে না। শহরের ভেতরে যত্রতত্র যাত্রী ওঠানামা করানো বা রাস্তার মাঝে গাড়ি পার্কিং করা যাবে না।

এসএমপি কমিশনারের স্বাক্ষরিত এ নির্দেশনায় আরও জানানো হয়েছে, নির্দেশনা অমান্যকারীদের বিরুদ্ধে কঠোর আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

এরই মধ্যে নবাগত পুলিশ কমিশনার আব্দুল কুদ্দুছ যোগদানের পর আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে ও নাগরিক সেবায় ‘জিনিয়া’ নামে প্রযুক্তি নির্ভর মোবাইল অ্যাপ চালু করেন। এরপর মোটরসাইকেল আরোহীদের হেলমেট উৎসাহিত করতে হেলমেট ব্যবহারকারীদের ফুল দিয়ে শুভেচ্ছা জানান। এবার নগরীতে যানজট নিরসন ও অবৈধ যানবাহনের বিরুদ্ধে নামছে পুলিশ।

এ ছাড়া শনিবার (১৩ সেপ্টেম্বর) জেলা প্রশাসন ও সিলেট সিটি করপোরেশনের যৌথ উদ্যোগে ক্বীন ব্রিজ থেকে হকারদের উচ্ছেদের মাধ্যমে অভিযান শুরু হয়। অভিযানে নেতৃত্ব দেন সিটি করপোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ রেজাই রাফিন সরকার ও সিলেটের জেলা প্রশাসক মো. সারোয়ার আলম।  

এ সময় উচ্ছেদ অভিযান তদারকিতে উপস্থিত ছিলেন সিলেট সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী।  

ওইদিন তিনি বলেন, আগে ফুটপাত দখলমুক্ত করতে চেষ্টা চালিয়েও পারিনি। এখন যেমন প্রশাসনের সহযোগিতা ও স্বতঃস্ফূর্ত রয়েছে, তা আগে ছিল না।

এনইউ/এএটি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।