ঢাকা, সোমবার, ২৪ ভাদ্র ১৪৩২, ০৮ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ১৫ রবিউল আউয়াল ১৪৪৭

সারাদেশ

বায়ুদূষণের কারণে ১ লাখ ১৭ হাজার ৬০০ কোটি টাকা ক্ষতি হচ্ছে

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট  | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২০:৩৬, সেপ্টেম্বর ৭, ২০২৫
বায়ুদূষণের কারণে ১ লাখ ১৭ হাজার ৬০০ কোটি টাকা ক্ষতি হচ্ছে

মানবস্বাস্থ্য রক্ষার্থে বায়ুর গুণগত মানোন্নয়নের জন্য জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদ সিদ্ধান্ত অনুযায়ী বরিশালে নীল আকাশের জন্য নির্মল বায়ু দিবস পালন করা হয়েছে। দিবসটি উপলক্ষে একশনএইড বাংলাদেশ ও জাস্ট এনার্জি ট্রানজিশন নেটওয়ার্ক বাংলাদেশের (জেটনেট বিডি) সহয়োগিতায় সদস্য সংগঠন প্রান্তজন, আভাস, আরোহী, সিল্ট ও বরিশাল বিভাগীয় পরিবেশ ও জনসুরক্ষা ফোরামের আয়োজনে রোববার (৭ সেপ্টেম্বর) সকাল ১০টায় বরিশাল নগরের অশ্মিনী কুমার হলের সামনে একটি পথসভার আয়োজন করা হয়।

 

পথসভায় বরিশাল বিভাগীয় পরিবেশ ও জনসুরক্ষা ফোরামের আহ্বায়ক শুভংকর চক্রবর্তী বলেন, বায়ুদূষণ বর্তমান বিশ্বে প্রথম পাঁচটি মৃত্যুকারণের একটি; বিশ্বে প্রতি বছর প্রায় ৭০ লাখ মানুষ বায়ুদূষণের কারণে অকাল মৃত্যুবরণ করে, যা অন্য যেকোনো পরিবেশগত দূষণে সংঘটিত মৃত্যু সংখ্যার চেয়ে অনেক বেশি। শুধু তাই নয়, বায়ুদূষণজনিত অসুস্থতায় মানুষের কর্মক্ষমতা বহুলাংশে হ্রাস পায়, এর আর্থিক মূল্য অপরিসীম।  

আরোহীর নির্বাহী পরিচালক এ টি এম খোরশেদ আলম বলেন, শঙ্কার বিষয় এই যে, বায়ুদূষণের ক্ষতিকর প্রভাব শুধু মানব স্বাস্থ্যের ওপরই সীমাবদ্ধ নয়; জীবজগত ও উদ্ভিদের ওপরেও এর প্রভাব মারাত্মক। উপরন্তু, জলবায়ু পরিবর্তনে বায়ুদূষণ গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা রাখছে, বিশেষ করে কালো-কার্বন ও ওজন জলবায়ু পরিবর্তনে ভূমিকা রাখায় এদের ‘শর্ট লিভট ক্লাইমেট প্লুট্যান্টস’ বলা হয়ে থাকে। বায়ুদূষণের এমন সব বহুমাত্রিক ক্ষতিকর প্রভাব থাকা সত্ত্বেও এখন পর্যন্ত এটি নিয়ন্ত্রণে কোনো আন্তর্জাতিক ট্রিটি বা সমঝোতা নেই। এমন বাস্তবতায়, বায়ুদূষণ নিয়ন্ত্রণে বিশ্বব্যাপী জন-রাজনৈতিক সচেতনতা বৃদ্ধি এবং আন্তর্জাতিকভাবে কার্যকরী পদক্ষেপ গ্রহণ করা এখন সময়ের দাবি। সে নিরিখে, নির্মল বায়ুর জন্য উৎসর্গীকৃত আন্তর্জাতিক দিবসটি যথেষ্ট গুরুত্বপূর্ণ ও তাৎপর্যপূর্ণ।  

প্রান্তজনের নির্বাহী পরিচালক তৌহিদুল ইসলাম শাহাজাদা বলেন, সমীক্ষায় প্রাপ্ত তথ্যের ভিত্তিতে জানা যায়, পৃথিবীর জনগোষ্ঠীর ৯০ শতাংশই এখন বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা কর্তৃক সংজ্ঞায়িত অনিরাপদ বায়ুতে বসবাস করে। কোনো কোনো অঞ্চলের, বিশেষ করে আমাদের এশিয়া মহাদেশের বায়ুদূষণের চিত্র আরও ভয়ংকর; বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা কর্তৃক পৃথিবীর প্রায় ১৬শ’টি শহরের বায়ুমান মাত্রা পর্যালোচনা করে যে তালিকা তৈরি করা হয়েছে তার প্রথম ২০টি অধিক দূষিত শহরের সবগুলোই আমাদের দক্ষিণ এশিয়ার। যদিও বাংলাদেশের শুধু নারায়ণগঞ্জ উক্ত ২০টি শহরের অন্তর্ভুক্ত। এমতাবস্থায়, রাষ্ট্রীয়, আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক ভাবে আইন, চুক্তি/সমঝোতার মাধ্যমে বায়ুদূষণ নিয়ন্ত্রণের উদ্যেগ গ্রহণ করার বিকল্প নেই। এজন্য বাংলাদেশ সরকার যে খসড়া ‘ক্লিন এয়ার অ্যাক্ট’ প্রণয়ন করেছে তা দ্রুততার সাথে চূড়ান্ত করে আইন আকারে বাস্তবায়ন করা প্রয়োজন।

বরিশাল পরিবেশ ও উন্নয়ন ফোরামের আহ্বায়ক সুভাষ দত্ত বলেন, বায়ু দূষণ কোনো দেশের সীমানা মেনে চলে না। এটি তুলনামূলকভাবে নারী, শিশু ও বয়স্ক ব্যক্তিদের ওপর বেশি ক্ষতিকর প্রভাব ফেলে। প্রতিবেশ ব্যবস্থার ওপরও বায়ু দূষণের ক্ষতিকর প্রভাব রয়েছে। অনেক বায়ু দূষণ জলবায়ু সংকটে সরাসরি প্রভাব রাখে। অপরদিকে বায়ুর গুণগত মানোন্নয়ন জলবায়ু সংকট প্রশমনে ইতিবাচক প্রভাব রাখে।  

বরিশাল পরিবেশ ও উন্নয়ন ফোরামের সদস্য আক্তারুল কবির বলেন, বায়ুদূষণের কারণে কেবল স্বাস্থ্যের নয়, ক্ষতি হচ্ছে দেশের অর্থনীতির। পরিবেশবিষয়ক আন্তর্জাতিক সংস্থা গ্রিন পিসের এক প্রতিবেদনে উঠে এসেছে, বায়ুদূষণের কারণে বাংলাদেশে বছরে এক লাখ ১৭ হাজার ৬০০ কোটি টাকা আর্থিক ক্ষতি হচ্ছে, যা দেশের জিডিপির প্রায় পাঁচ শতাংশ। সর্বোপরি বায়ুদূষণের কারণে দেশের সুনাম ক্ষুণ্ন হচ্ছে। বাংলাদেশের ব্যাপারে বিশ্ব সম্প্রদায়ের নেতিবাচক মনোভাব তৈরি হচ্ছে।

পথসভার সভাপতি অবসরপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ আমিনুর রহমান খোকন বলেন, জীবাশ্ম জ্বালানির মাধ্যমে পৃথিবীতে যে বায়ুদূষণ হয় তাতে অসংখ্য মানুষ মারা যায়। জীবাশ্ম জ্বালানির মাধ্যমে সৃষ্ট বায়ুদূষণ বন্ধ করা প্রয়োজন। যেসব উন্নত দেশ উন্নয়নশীল দেশগুলোর জীবাশ্ম জ্বালানি প্রকল্পগুলোতে অর্থনৈতিক সহযোগিতা করছেন, তাদের উচিৎ উন্নয়নশীল দেশগুলোকে বায়ুদূষণ কমাতেও উৎসাহিত করা।

পথসভা থেকে কয়েটি দাবি তুলে ধরা হয়, ন্যায্য জ্বালানির অঙ্গীকার, নির্মল বায়ু সবার অধিকার, কলাপাড়ায় আশুগঞ্জ কোম্পানির জন্য অধিগ্রহণকৃত জমিতে জীবাশ্ম জ্বালানীর পরিবর্তে সোলার বিদ্যুৎ কেন্দ্র করতে হবে, পায়রা ৫০ মেগাওয়াট বায়ু বিদ্যুৎ কেন্দ্র দ্রুত বাস্তবায়ন করতে হবে, পায়রা ১৩২০ তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র (২য় ফেইজ) বাতিল করতে হবে, ক্লিন এয়ার অ্যাক্ট’ দ্রুত বাস্তবায়ন করতে হবে।

পথসভায় অংশ নেওয়া সুশিল জমাজের প্রতিনিধি, স্থানীয় স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থী, এনজিও কর্মী, নারী সংগঠনের সদস্য, কৃষক, সাংবাদিক, পরিবেশকর্মী, ব্যবসায়ী ও সাধারণ মানুষ। হাতে প্ল্যাকার্ড ও ব্যানারে লিখে বিভিন্ন স্লোগান দেয়।

এমএস/এএটি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।