ঢাকা, সোমবার, ২ ভাদ্র ১৪৩২, ১৮ আগস্ট ২০২৫, ২৩ সফর ১৪৪৭

সারাদেশ

প্রিয় শিক্ষককে বিদায়বেলায় ভালোবাসায় কাঁদালেন সহকর্মী-শিক্ষার্থীরা

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১০:৪৬, আগস্ট ১৭, ২০২৫
প্রিয় শিক্ষককে বিদায়বেলায় ভালোবাসায় কাঁদালেন সহকর্মী-শিক্ষার্থীরা

যশোর: শনিবার (১৬ আগস্ট) দিনটা ছিল শিক্ষকতা পেশা থেকে অবসরে যাওয়া আব্দুর রাজ্জাকের কাছে অন্যরকম। সকাল ৯টায় প্রাক্তন শিক্ষার্থীরা মোটরসাইকেলের বহর নিয়ে ছুটে যান তার বাড়িতে।

সেখান থেকে ফুল দিয়ে সাজানো ছাদখোলা গাড়িতে করে তাঁকে নেওয়া হয় দীর্ঘদিনের কর্মস্থলে।

বিদ্যালয়ে অপেক্ষমাণ কয়েকশ’ শিক্ষার্থী প্রিয় শিক্ষককে ফুল দিয়ে বরণ করে। দুপুরে খোলা মাঠের বিশাল মঞ্চ থেকে নেমে তিনি উঠে বসেন ঘোড়ার পিঠে। শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা তাকে শোভাযাত্রা সহকারে পৌঁছে দেন বাড়িতে। প্রিয় শিক্ষার্থী আর সহকর্মীদের এমন আয়োজনে আবেগে আপ্লুত হয়ে পড়েন শিক্ষক আব্দুর রাজ্জাক। সহকর্মী আর শিক্ষার্থীদের এমন ভালোবাসায় কাঁদলেন তিনি।
 
ঘটনাটি যশোরের বাঘারপাড়া উপজেলার চন্ডিপুর মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের। এখানকার প্রতিষ্ঠাকালীন প্রধান শিক্ষক আব্দুর রাজ্জাক ৩১ বছরের শিক্ষকতা জীবন শেষে অবসরে গেছেন। তাই প্রিয় শিক্ষককে বিদায় জানাতে সহকর্মী ও শিক্ষার্থীরা এই আয়োজন করে।

শনিবার তাঁর জন্য অনেকেই নানা রকম উপহার নিয়ে হাজির হয়েছিলেন। তাদের মধ্যে অনেকে আসেন ফুল হাতে। বিদায়ের মুহূর্ত স্মরণীয় করে রাখতে ছবি তুলতে ভোলেননি অনেকে। প্রিয় শিক্ষকের প্রতি শ্রদ্ধা ও ভালোবাসা জানাতে মালয়েশিয়া থেকে কয়েকদিনের ছুটি নিয়ে অনুষ্ঠানে যোগ দিয়েছেন ২০০৭ ব্যাচের শিক্ষার্থী মাহবুর রহমান।

তিনি বলেন, ‘হেড স্যার (আব্দুর রাজ্জাক) শুধু শিক্ষক ছিলেন না, মা-বাবার মতো স্নেহ করতেন। তার দেওয়া শিক্ষা নিয়ে আজ আমরা নানাভাবে প্রতিষ্ঠিত। স্যার আমাদের আদর্শ। ’

বেলা ১১টায় বিদ্যালয় চত্বরে বিশাল মঞ্চে সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন প্রতিষ্ঠান পরিচালনা পর্ষদের সভাপতি মনোয়ার উদ্দীন আহম্মেদ। শিক্ষার্থী ও সহকর্মীদের পাশাপাশি এলাকাবাসীর অংশগ্রহণে অনুষ্ঠানটি ভিন্ন মাত্রা পায়।

অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন বিএনপির কেন্দ্রীয় নির্বাহী সদস্য ও কৃষক দলের সিনিয়র যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ইঞ্জিনিয়ার টিএস আইয়ূব। বিদায়ী ভাষণে আবেগাপ্লুত হয়ে পড়েন আব্দুর রাজ্জাক। তিনি বলেন, ‘আজকের এই আয়োজন প্রমাণ করে আমার ছাত্ররা আমাকে কতটা ভালোবাসে। বিদায়টা এমন সুন্দর হবে, কখনো ভাবিনি। যতদিন বেঁচে থাকব, সবার প্রতি কৃতজ্ঞ থাকব। ’

আব্দুর রাজ্জাকের বক্তৃতার পরপরই স্মৃতিচারণ করতে যেয়ে সবার কন্ঠে উঠে আসে তাঁর ন্যায়নিষ্ঠতার কথা। স্বাগত বক্তৃতায় বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক আয়ুব হোসেন বলেন, ‘আব্দুর রাজ্জাক স্যার ছিলেন আপাদমস্তক সৎ ও নির্ভীক। সবার আগে স্কুলে আসতেন, সবার পরে যেতেন। ক্লাসের পড়ালেখার বাইরেও শিক্ষার্থীদের নীতি-নৈতিকতা শিখিয়েছেন। স্যারের নীতি-আদর্শকে সামনে রেখে আমরা আমাদের কার্যক্রম চালাব। ’

অনুষ্ঠানে অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন জহুরপুর খবির-উর-রহমান কলেজের অধ্যক্ষ কামরুজ্জামান, মির্জাপুর আদর্শ মহিলা ডিগ্রি কলেজের অধ্যক্ষ তরিকুল ইসলাম, বাঘারপাড়া সরকারি পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ইসমাইল হোসেন, অনুষ্ঠান আয়োজক কমিটির আহ্বায়ক আব্দুল জব্বার বিশ^াস, বন্দবিলা ইউনিয়ন বিএনপির সিনিয়র সহসভাপতি আনোয়ার হোসেন ভূট্টো, প্রাক্তন শিক্ষার্থী খন্দকার মঞ্জুরুল ইসলাম শুভ, মোস্তাকিম বিল্লাহ ও বর্তমান শিক্ষার্থী তানিম হাসান ও আনিতা জামান।

অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন সিনিয়র সহকারী শিক্ষক পরিমল কুমার ঘোষ ও সহকারী শিক্ষক বেলাল হোসেন।

১৯৯৫ সালে বাঘারপাড়ার চন্ডিপুর মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠাকাল থেকে প্রধান শিক্ষক হিসেবে কর্মজীবন শুরু আব্দুর রাজ্জাকের। এরপর সবার সহযোগিতায় প্রতিষ্ঠানটিকে উপজেলার শ্রেষ্ঠ প্রতিষ্ঠানে পরিণত করেন। ২০১৬ ও ২০১৮ সালে শ্রেষ্ঠ প্রধান শিক্ষক নির্বাচিত হন রাজ্জাক। শনিবার অবসরে যান তিনি।

এসএইচ
 

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।