সিরাজগঞ্জ: উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢল ও ভারী বৃষ্টিপাতে যমুনা নদীতে দ্রুতগতিতে পানি বাড়ছে। আর পানি বেড়ে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে সিরাজগঞ্জের যমুনা তীরবর্তী অঞ্চল ও চরাঞ্চলে তীব্র ভাঙন শুরু হয়েছে।
শুক্রবার (২৭ জুন) সকালে যমুনা নদীর সিরাজগঞ্জ হার্ড পয়েন্টে পানির সমতল রেকর্ড করা হয় ১১ দশমিক ৩২ মিটার। ২৪ ঘণ্টায় ৪১ সেন্টিমিটার বেড়ে এটি বিপৎসীমার এক দশমিক ৫৮ মিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এ পয়েন্টে বৃহস্পতিবার পানি বেড়েছিল ৪৪ সেন্টিমিটার।
জেলার কাজীপুর মেঘাই পয়েন্টে পানির সমতল রেকর্ড করা হয়েছে ১৩ মিটার। ২৪ ঘণ্টায় ৩২ সেন্টিমিটার বেড়ে এটি বিপৎসীমার এক দশমিক ৮০ মিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এ পয়েন্টে বৃহস্পতিবার পানি বেড়েছিল অন্তত ৪৮ সেন্টিমিটার।
সিরাজগঞ্জ সদর উপজেলার পার পাঁচিল এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, যমুনার উত্তাল ঢেউয়ে কৃষক মোহাম্মদ আলীর ক্ষেতের আখ ডুবে যাচ্ছে। অপরিপক্ব আখের ডগাই কেটে নিয়ে যাচ্ছেন তিনি।
তিনি বলেন, তার ক্ষেতের আখগুলো আর দুই তিন সপ্তাহ থাকলেই পরিপক্ক হয়ে যেত। কিন্তু এত কষ্টের আখক্ষেত কয়েকদিনেই গিলে নিচ্ছে যমুনা। তার ও তার ভাইদের ৪০ বিঘার মতো জমি ছিল। দফায় দফায় ভাঙনে ২৫ বিঘা বিলীন হয়েছে।
সদর উপজেলার ছোনগাছা ও খোকশাবাড়ি ইউনিয়নের পাঁচটি গ্রামেও চলছে ভাঙন। যমুনায় পানি দ্রুত বাড়তে থাকায় ভাঙনের তীব্রতা বেড়ে গেছে। বালু ভর্তি জিওব্যাগ ফেলেও ভাঙন ঠেকানো যাচ্ছে না।
স্থানীয়রা জানান, মাসখানেক ধরেই এ অঞ্চলে ভাঙন দেখা দিয়েছে। তবে গত এক সপ্তাহ ধরে পানি বাড়তে থাকায় ভাটপিয়ারী, পার পাচিল, ব্রাহ্মণ বয়রা ও পাঁচঠাকুরী গ্রামের তীরবর্তী অঞ্চলে ভয়াবহ ভাঙন শুরু হয়েছে।
সদর ছাড়াও চৌহালী উপজেলার স্থল, সদিয়া চাঁদপুর ও উমারপুর এবং শাহজাদপুর উপজেলার সোনাতনী, গালা ও কৈজুরী ইউনিয়নের অন্তত ২৫ থেকে ৩০টি গ্রামে শুরু হয়েছে তীব্র ভাঙন। এসব উপজেলার শতাধিক বাড়িঘর, পাঁচ শতাধিক বিঘা ফসলি জমি, শিক্ষা ও ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান নদীগর্ভে বিলীন হয়েছে। ভাঙনের মুখে রয়েছে বাড়িঘর, কৃষিজমি ও অসংখ্য প্রতিষ্ঠান।
চৌহালীর স্থল ইউনিয়ন পরিষদের ৩ নম্বর ওয়ার্ডের মেম্বার মনিরুল ইসলাম বলেন, নয়াপাড়া গ্রামে কয়েকদিন ধরে ভাঙন শুরু হয়েছে। ভাঙনের তীব্রতা খুব বেশি। ইতিমধ্যে গ্রামের অর্ধশত বিঘা ফসলি জমি নদীগর্ভে বিলীন হয়েছে। প্রাইমারি স্কুল, হাফিজিয়া মাদরাসা ও মসজিদ থেকে মাত্র কয়েক ফুট দূরে রয়েছে নদী। চালুহারা ও কুড়াগাছা এলাকাতেও তীব্র ভাঙন শুরু হয়েছে। কুড়াগাছার একটি স্কুল নদীগর্ভে চলে গেছে। তেঘরি প্রাইমারি স্কুলটি যেকোনো সময় যমুনায় বিলীন হতে পারে। এসব এলাকার বেশ কিছু বাড়িঘরও নদীগর্ভে গেছে।
সদিয়া চাঁদপুর ইউনিয়নের ৮ নম্বর ওয়ার্ডের মেম্বার হারান আলী বলেন, বারবেলা কবরস্থানের সামনে নদী ভাঙন শুরু হয়েছে। এ ছাড়া ইউনিয়নের বোয়ালকান্দি, গাড়াবাড়ী, রসুলপুর, মৌহালী, ইজারাপাড়া ও বারবেলা গ্রামের প্রায় ৫০০ বিঘা ফসলি জমি নদীগর্ভে চলে গেছে।
চৌহালী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, আমাদের তিনটি ইউনিয়নে ভাঙন শুরু হয়েছে। আমরা ভাঙন কবলিতদের জন্য চার টন চাল বরাদ্দ দিয়েছি। যাদের বাড়ি ভেঙে গেছে, তারা প্রয়োজনীয় কাগজপত্র দিয়ে আবেদন করলে ত্রাণ মন্ত্রণালয় থেকে সহায়তা দেওয়া হবে।
শাহজাদপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ কামরুজ্জামান বলেন, আমাদের কৈজুরী ও সোনাতনী ইউনিয়নে কিছু ভাঙন রয়েছে। আমরা ভাঙন কবলিতদের জন্য উপজেলা পরিষদ থেকে সহযোগিতা অব্যাহত রেখেছি।
সিরাজগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. মোখলেসুর রহমান বলেন, বর্তমানে যমুনার পানি বাড়ছে। তবে সেটি বিপৎসীমা অতিক্রম করবে না। আশা করছি, দুই-তিন দিনের মধ্যে পানি কমতে শুরু করবে। পানি বেড়ে যাওয়ায় কিছু এলাকা ভাঙনপ্রবণ হয়ে উঠেছে।
তিনি বলেন, বিশেষ করে ভাটপিয়ারী ও কৈজুরী এলাকায় ভাঙনপ্রবণ হয়ে উঠছে। এসব জায়গা আমাদের মূল ভূমির সঙ্গে সংযুক্ত, তাই সেখানে জরুরি ভিত্তিতে কাজ করছি। কোথাও বাঁধ ক্ষতিগ্রস্ত হলে দ্রুত কাজ করছি। তবে নদীর চরের কিছু কিছু এলাকায় ভাঙন রয়েছে, যেমন শাহজাদপুর ও চৌহালীতে। চরে সাধারণত কাজ করার সুযোগ কম।
আরএইচ