বরিশাল: জুলাই ঘোষণাপত্র, গণহত্যার বিচার, আওয়ামী দোসরদের গ্রেপ্তার এবং সমসাময়িক বিষয় নিয়ে সংবাদ সম্মেলন করেছে বরিশাল জেলা শাখার বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন।
রোববার (২২ জুন) সকাল ১১টায় বরিশাল প্রেস ক্লাবে সংগঠনের জেলা কমিটির আয়োজনে এ সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়।
সংগঠনের নেতারা বলেন, ১০ মাস পার হয়েছে এখন আর বিলম্ব নয়, জুলাই ঘোষণাপত্র দ্রুত সময়ে প্রকাশ করতে হবে। আর পরাজিত ফ্যাসিবাদ নিয়ে সরকারের ভূমিকা স্পষ্ট করতে হবে। আর গণহত্যার সাথে জড়িতদের দৃশ্যমান বিচার করতে হবে।
সংবাদ সম্মেলনে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন বরিশাল জেলার আহ্বায়ক সাব্বির হোসেন সোহান বলেন, জুলাইয়ের ঘোষণাপত্র নিয়ে তালবাহানা শুরু হয়েছে। আমরা তালবাহানা দেখতে চায় না, আমরা চায় আগামী সাত কর্মদিবসের মধ্যে জুলাই ঘোষণাপত্র।
আহ্বায়ক সাব্বির হোসেন সোহান বলেন, আমাদের আহত যোদ্ধারা এখন হাসপাতালে আছে কিন্তু তারা সুচিকিৎসা পাচ্ছে না, হাসপাতালে সুচিকিৎসার অভাবে কাতরাচ্ছে তাদের শিগগিরই সু-চিকিৎসা দিতে হবে। প্রয়োজনে তাদের বাইরে পাঠাতে হবে, অর্থাৎ যেকোনো মূল্যে যেকোনো উপায়ে তাদের সুস্থ করতে হবে। আবার এটাও দেখছি কিছু কিছু স্বার্থান্বেষী ব্যক্তিরা তারা বিভিন্ন জায়গায় দখলে রেখে নিজেদের বাড়ি মনে করতে শুরু করেছে। এটারও বিহিত চাই, সমাধান চাই।
তিনি বলেন, গণহত্যার সাথে যারা জড়িত রয়েছে তাদের দৃশ্যমান বিচার করতে হবে। আমরা দেখছি বিচারকে মূলা ঝুলিয়ে রাখা হয়েছে। আমাদের দেখানো হচ্ছে যে বিচার করবো, বিচার করবো কিন্তু ১০ মাস পার হলেও কোন খুনির কোন আওয়ামীলীগের দোসরের বিচার হয়নি। আমরা দৃশ্যমান বিচার চাই, যাতে বিচার দেখে এই দেশে আর কেউ স্বৈরাচার না হতে পারে।
৩৫০ জন এমপি-মন্ত্রীর মধ্যে কয়েকজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে? কতজনকে বিচারের আওতায় আনা হয়েছে এমন প্রশ্ন তুলে সাব্বির হোসেন বলেন, আমরা দেখছি তাদের এসি রুমে রাখা হচ্ছে, তারা যখন কোর্টে যায় তখন হাসতে হাসতে রুম থেকে বের হচ্ছে। অথচ বিগত সময়ে যখন আলেমদের কোর্টে নেওয়া হয়েছে তখন তাদের ডান্ডাবেরি পরানো হতো, সামনে কিছু দেখতে দেওয়া হতো না।
সাব্বির হোসেন সোহান বলেন, আওয়ামীলীগের দোসরদের শিগগিরই গ্রেপ্তার করতে হবে। বিচার না হওয়ার কারণে গ্রেপ্তার হওয়ার পর যেন তারা দুই-তিন দিনের মাথায় আবারো বের হতে না পারে। তারা ফিরে এসে আমাদের আবারো হুমকি দিচ্ছে, আহত যোদ্ধারা প্রতিনিয়ত হুমকির মুখে রয়েছে।
তিনি বলেন, আমরা বার বার হুমকি পাচ্ছি কিন্তু সেগুলো জনসম্মুখে নিয়ে আসছি না, কারণ এতে করে আমাদের সাথের যোদ্ধারা আরও ভয় পেয়ে যাবে। তাই সরকারের প্রতি আহ্বান আওয়ামীলীগের দোসরদের শিগগিরই গ্রেপ্তার করতে হবে।
তিনি বলেন, প্রধান উপদেষ্টা শহীদ পরিবারের মতামত না দিয়ে, আহত যোদ্ধাদের মতামত না নিয়ে, এ দেশের মুক্তিকামী জনতার মতামত না নিয়ে তার মনগড়া কথা বলছেন। আমরা তার এ মনগড়া কথার তীব্র নিন্দা জানাচ্ছি। আমরা দেখেছি গতকাল তিনি (প্রধান উপদেষ্টা) বলেছেন, আওয়ামীলীগ নির্বাচনে অংশ নিতে পারবে কি না, সেই সিদ্ধান্ত ইসির। আমরা মনে করি তার এ বক্তব্যকে শিগগিরই উইড্রো করতে হবে। কারণ তার এ বক্তব্য আমাদের আহত যোদ্ধাদের বিরুদ্ধে চলে গেছে, মুক্তিকামী বাংলার ১৮ কোটি জনগণের বিরুদ্ধে চলে গেছে, শহীদ ও শহীদ পরিবারের বিরুদ্ধে চলে গেছে।
৫ আগস্ট এ দেশ থেকে আওয়ামীলীগকে মুক্তিকামী জনতা বিতাড়িত করা হয়েছে, ৫ আগস্টের পর এ দেশে আওয়ামীলীগের কোন নাম গন্ধও নেই। তারা এ দেশে রাজনীতি করতে পারবে না, নির্বাচন তো দূরের কথা। আন্দোলন সংগ্রামের মধ্য দিয়ে যেখানে আওয়ামীলীগের কার্যক্রমকে নিষিদ্ধ করা হয়েছে, সেখানে নির্বাচনকে সামনে রেখে তার (প্রধান উপদেষ্টার) এ বক্তব্য আমাদের খুবই কষ্ট দিয়েছে, ভারাক্রান্ত করেছে।
তিনি বলেন, আরও কয়েকজন উপদেষ্টা মনগড়া কথা বলছেন, আহত যোদ্ধাদের সাথে দ্বিমত পোষণ করে বক্তব্য দিচ্ছেন। পরিকল্পনা উপদেষ্টাও মনগড়া দলীয় বক্তব্য দিচ্ছেন। এই রক্তের ওপর দাঁড়িয়ে কোনো উপদেষ্টা যদি তার মনগড়া বক্তব্য দিতে চায় তাহলে তাদের হুঁশিয়ারি করে দিতে চাই, তাদের স্মরণ করিয়ে দিতে চাই জুলাই-আগস্ট আমাদের সামনে রয়েছে। যে জুলাই-আগস্টে এ দেশ থেকে স্বৈরাচার পালিয়েছে, যদি আবার কেউ সেই স্বৈরাচারী মনোভাব নিয়ে সামনে এগোতে চায় আমরা তাদের প্রতিহত করার জন্য প্রস্তুত রয়েছি।
এমএস/এএটি