উত্তরাঞ্চলে চামড়ার জন্য বিখ্যাত গাইবান্ধার পলাশবাড়ী উপজেলার ঐতিহ্যবাহী কালিবাড়ী হাট। প্রতি বছর কোরবানির ঈদ পরবর্তী হাটে কোটি টাকার চামড়া কেনাবেচা হয়ে থাকে।
কিন্তু গেল কয়েক বছর ধরে জৌলুস হারাচ্ছে চামড়ার হাটটি। বাৎসরিক উৎসব-মিলনমেলা এলেও আশাহত হচ্ছেন বিক্রেতারা। এবারও
চামড়া প্রতি দেড় থেকে দুইশ টাকা লোকসান গুনতে হয়েছে ব্যবসায়ীদের।
ফলে হাট শেষে মলিনমুখে বাড়ি ফিরতে হয়েছে তাদের। একই চিত্র মিলছে টানা কয়েক বছর ধরে।
বুধবার (১৮ জুলাই) সকাল থেকে রাত পর্যন্ত কালিবাড়ী হাট ঘুরে দেখা যায়, স্থানীয়সহ পাশের রংপুর, কুড়িগ্রাম, বগুড়াসহ কয়েকটি জেলা-উপজেলা থেকে চামড়া নিয়ে হাটে এসেছেন বিক্রেতারা। যদিও আমদানি অতীতের তুলনায় কম।
হাটে ট্যানারি মালিকের প্রতিনিধিদের উপস্থিতি ছিল নগণ্য। সেই সঙ্গে চামড়া কিনেছেন খুবই কম মূল্যে।
কথা হয় চামড়া বিক্রেতা রংপুরের পীরগঞ্জ উপজেলার বাড়াইপাড় গ্রামের বাসিন্দা আইয়াব আলীর সঙ্গে। তিনি বলেন, টানা কয়েক বছর ধরে চামড়ার বাজারদর ভালো যাচ্ছে না। অনেক আশা নিয়ে এবার ৫০ পিস চামড়া নিয়ে হাটে এসেছিলাম। কিন্তু যে দামে চামড়া কিনেছি তার চেয়েও কম দাম বলে ক্রেতারা। এই চামড়া বাড়িতে ফিরে নিয়ে গেলে আরও খরচ বাড়বে। তাই দিনশেষে বাধ্য হয়ে ১০ হাজার টাকা লসে চামড়া বিক্রি করতে বাধ্য হয়েছি।
গাইবান্ধার সাদুল্লাপুর উপজেলার কামারপাড়া এলাকার ব্যবসায়ী মিঠু মিয়া ও দুদাল মিয়া বলেন, ৩০০ পিস চামড়া নিয়ে হাটে এসেছিলাম। কাঁচা চামড়া ক্রয় থেকে ধোয়া, লবণ ও পরিবহনসহ চামড়া প্রতি খরচ হয়েছে এক হাজার টাকার ওপরে। সেখানে ক্রেতারা দাম বলছেন প্রতি পিস ৮০০ টাকা। একই চিত্র পুরো হাটের। ফলে দিশেহারা হয়ে পড়েছেন ব্যবসায়ীরা।
জেলার সুন্দরগঞ্জ উপজেলার ফুল চান বলেন, ৬০০ পিস চামড়া নিয়ে গত সোমবার হাটে এসেছি একটু ভালো জায়গা পাওয়ার আশায়। যাতে দ্রুত ক্রেতাদের চোখে পড়ি। কিন্তু টানা তিনদিন পরিবার ছেড়ে হাটে পড়ে থেকেও কোনো সুফল পেলাম না।
আক্ষেপ প্রকাশ করে তিনি বলেন, চামড়া প্রতি ২০০ টাকা লস। পথে বসা ছাড়া সামনে কোনো পথ খোলা নেই।
অ্যাপেক্স টেনারির পক্ষে হাটে চামড়া ক্রেতা নুর আলম মিয়া বলেন, ৪০ টাকা ফুট হিসেবে প্রতি পিস চামড়া ৫৫০ থেকে ৬০০ টাকায় ক্রয় করছেন তারা।
তিনি আরও বলেন, টেনারিতে প্রতি ফুট ৬৫ টাকা পর্যন্ত দরে চামড়া সরবরাহ করবেন তারা। কিন্তু সেখানে বাছাইয়ে কিছু চামড়া বাদ পড়ে যায়। এছাড়া চামড়া সংরক্ষণ, পরিবহন খরচ সমন্বয় করতে ৪০ টাকা ফুট হিসাবে চামড়া ক্রয় করছেন বলেও জানান।
একই রকম মন্তব্য করেন আকিজ টেনারির প্রতিনিধি আব্দুল জলিল মিয়া।
উপজেলা চামড়া ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক মিনু মণ্ডল জানান, উত্তরাঞ্চলে কালিবাড়ী হাট চামড়ার জন্য বিখ্যাত। দীর্ঘ বছর ধরে ঐহিত্যবাহী এ হাটে সপ্তাহের প্রতি বুধ ও শনিবার কাকডাকা ভোরে চামড়ার হাট বসে, চলে দুপুর পর্যন্ত। কিন্তু প্রতি বছর কোরবানির ঈদের পরের বুধবার হাটটিতে সরাসরি রাজধানী ঢাকার ট্যানারির মালিকসহ এ অঞ্চলের এজেন্ট, প্রতিনিধি, মহাজন, ফরিয়া ও মৌসুমি ক্রেতা-বিক্রেতাসহ সব স্তরের চামড়া ক্রেতা-বিক্রেতাদের মিলনমেলায় রূপ নেয়। বিরতিহীন কেনাবেচা চলে বুধবার গভীর রাত পর্যন্ত।
কিন্তু টানা কয়েক বছর ধরে চামড়ার দর পতনের কারণে অতীতের সেই জৌলুস দিন দিন হারিয়ে যাচ্ছে। মানুষ এ ব্যবসা থেকে মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছেন।
এ ব্যাপারে পলাশবাড়ী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) জুলফিকার আলী ভুট্টো বলেন, হাটে ক্রেতা বিক্রেতাদের নিরাপত্তায় প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। সর্বদা সজাগ দৃষ্টি রাখায় ভোর থেকে গভীর রাত পর্যন্ত চলা এ হাটে কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি।
আরএ