জামালপুর: দুই বছর হলো জামালপুরের নির্ভীক সাংবাদিক বাংলানিউজের ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট গোলাম রাব্বানী নাদিম হত্যার ঘটনা। স্বজন হারানোর শোক ও বিচার ব্যবস্থার ধীরগতি মিলিয়ে চরম হতাশায় রয়েছে এই সাংবাদিকের পরিবারটি।
২০২৩ সালের ১৪ জুন রাতে কাজ শেষে বাড়ি ফেরার পথে বকশীগঞ্জের পাটহাটি মোড়ে মাহমুদুল আলম বাবু ও তার সহযোগীরা সাংবাদিক নাদিমকে পিটিয়ে গুরুতর আহত করে। পরদিন ১৫ জুন ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ (মমেক) হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান নাদিম। ১৬ জুন বকশীগঞ্জের গুমেরচর গ্রামের বাড়ির পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হয় তাকে। বিচারের আশায় ১৭ জুন নাদিমের স্ত্রী মনিরা বেগম ওই সময়ের সাধুরপাড়া ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান ও আওয়ামী লীগ নেতা মাহমুদুল আলম বাবুসহ ২২ জনের নাম উল্লেখ ও অজ্ঞাতনামা ২০-২৫ জনকে আসামি করে বকশীগঞ্জ থানায় একটি হত্যা মামলা করেন।
শুরুতে থানা পুলিশ, পরে জেলা গোয়েন্দা শাখার পর মামলার তদন্তভার পায় পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)। তদন্ত শেষে ২০২৪ সালের সেপ্টেম্বরে মামলার দ্বিতীয় আসামি বাবু চেয়ারম্যানের ছেলে রিফাতসহ ২৭ জনকে বাদ দিয়ে বাবু চেয়ারম্যানসহ নয়জনের বিরুদ্ধে জমা চার্জশিট দেয় সিআইডি। কিন্তু সিআইডির তদন্ত প্রতিবেদনে সন্তুষ্ট না হয়ে আদালতে নারাজি দেন নাদিমের স্ত্রী মনিরা। ২০২৪ সালের ফেব্রুয়ারিতে মামলাটির তদন্তভার যায় র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়নের (র্যাব) কাছে। তবে দুই বছরেও গ্রেপ্তার হয়নি চার্জশিটভুক্ত আসামি শাহজালাল ও শফিকুল। আর বাকিরা সবাই জামিনে রয়েছে।
নিহত সাংবাদিক নাদিমের মেয়ে রাব্বিলাতুল জান্নাত বলেন, ‘আমাদের পরিবারের চলা অনেক কষ্ট হচ্ছে। আমার মা একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি। তার স্বল্প আয়ে সংসার চলে না। বাবা মারা যাওয়ার পরে অনেকে অনেক আশ্বাস দিয়েছিলেন। এখন কেউ আর খোঁজও নেন না। বর্তমানে অনেক কষ্টে আছি আমরা। এর মধ্যেও আদালত পাড়ায় ঘুরতে হয়। বিচারের তো কোনো কিছুই এখনও দেখলাম না, আসামিরা সবাই আগের মতোই চলছে। ’
নাদিমের স্ত্রী ও মামলার বাদী মনিরা বেগম বলেন, মামলা তো করেছিলাম বিচার পাবো, সেই আশায়। এখন কীভাবে বিচার পাবো সেটাই বুঝতে পারছি না। সবাই জামিন পাচ্ছেন! আমাদের মামলা তুলে নিতে নানাভাবে চাপও দিচ্ছে দোষীরা। নতুন সরকার এলেও সাংবাদিক হত্যার বিচার আরও ঢিলেঢালা হচ্ছে। ইতোমধ্যে আমার স্বামীর খুনি চেয়ারম্যান নাকি আবারও পরিষদে বসবে-এমন আলোচনা শোনা যাচ্ছে। আমরা আর কিছু চাই না, খুনিদের বিচার চাই।
এদিকে তদন্ত চলমান ও ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের অনুমতি না থাকায় সাংবাদিক নাদিম হত্যা মামলার বিষয়ে মন্তব্য করতে রাজি হয়নি র্যাব।
অন্যদিকে ১৫ জুন সাংবাদিক নাদিমের মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে বকশীগঞ্জ ও জামালপুরের সাংবাদিকরা আলোচনা সভা ও দোয়া মাহফিলের আয়োজন করেছে। এ অনুষ্ঠানে নাদিমের মেয়ে ও স্ত্রীর অংশ নেওয়ার কথা রয়েছে।
এসআরএস/আরএ