নাটোর: পরিবার পরিজন নিয়ে ঈদ শেষে কর্মস্থলে ফিরছেন কর্মজীবীরা। কিন্তু প্রয়োজনের তুলনায় যানবাহন ও টিকেট সংকটসহ অতিরিক্ত ভাড়ায় আদায়ের কারণে ঢাকা বা গাজীপুর ফেরত যাত্রীরা পড়েছেন বিপাকে।
আবার টিকেট মিললেও তার দাম বেশি। আবার বেশি দামে টিকেট সংগ্রহ করতে গিয়ে কেউ পাচ্ছেন, আবার অনেকে পাচ্ছেন না। ফলে সকাল থেকে সন্ধ্যা গড়িয়ে গেলেও গ্রাম থেকে আসা কর্মজীবী এসব মানুষ বাস টার্মিনালে প্রখর রৌদ্রে খোলা আকাশের নিচে বসে গত তিন-চারদিন ধরে দুর্ভোগ পোহাচ্ছেন। চারিদিকে ছড়িয়ে পড়ে হাহাকার। বিষয়টি নাটোরের পুলিশ সুপারের নজরে আসে।
পরে শুক্রবার (১৩ জুন) দুপুরে শহরের বড় হরিশপুর কেন্দ্রীয় টার্মিনালে যাত্রীবাহী বাসে ভাড়া নিয়ন্ত্রণ এবং যাত্রী হয়রানি বন্ধে কি ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে, তা পরিদর্শনে যান পুলিশ সুপার মো. আমজাদ হোসাইন। এ সময় তিনি দেখতে পান টার্মিনালে শত শত যাত্রী বাসের জন্য অপেক্ষায় বসে আছেন। কিন্তু তারা কেউ বাস ও বাসের টিকেট পাননি। এ নিয়ে তারা চরম ভোগান্তিতে আছেন বিষয়টি লক্ষ্য করলেন পুলিশ সুপার।
এ অবস্থায় তাদের কষ্টের কথা বিবেচনা করে তাৎক্ষণিকভাবে জেলা পুলিশের উদ্যোগে বিনা ভাড়ায় দু’টি বাসের ব্যবস্থা করেন তিনি। পরে দু’টি যাত্রীবাহী বাসে নাটোর থেকে ঢাকায় ফিরেন অন্তত ১২৫ থেকে ১৩০ জন যাত্রী। এতে তারা সন্তষ্টি এবং পুলিশ সুপারের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন। এ নিয়ে শহর জুড়ে ব্যাপক আলোচনা শুরু হয়। পুলিশ সুপারের এমন উদ্যোগকে স্বাগত জানান সুশীল সমাজ, সাংবাদিক, বিভিন্ন পেশাজীবী, ব্যবসায়ী, রাজনীতিকসহ সর্বস্তরের মানুষ। ফলে এমন মহানুভবতার প্রশংসায় ভাসছেন জেলার পুলিশ সুপার আমজাদ হোসাইন।
শনিবার (১৪ জুন) বিকেল সাড়ে ৪টার সময় শহরের বড়হরিশপুর বাস স্ট্যান্ড থেকে আবারও দুইটি বাসে ১২০ জন যাত্রীকে বিনা ভাড়ায় ঢাকায় পাঠানো হয়েছে। এ সময় বাসযাত্রীদের হাতে হাতে একটি করে পানির বোতল দেওয়া হয়।
এ সময় উপস্থিত ছিলেন পুলিশ সুপার মো. আমজাদ হোসোইন, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ( প্রশাসন ও অর্থ) মো. ইফতে খায়ের আলম,অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সদর (সার্কেল) মাহমুদা শারমিন নেলী, ট্রাফিক ইন্সপেক্টর মো. রেজাউল করিম।
ওই বাসে যাওয়া যাত্রী আলফাজ, সুমি খাতুন, নাসির, জুলেখা বেগমসহ আরও অনেকে জানান, গত দুইদিন ধরে বাসের জন্য হরিশপুর বাস টার্মিনালে অপেক্ষা করছিলেন। কোনোভাবেই টিকেটের ব্যবস্থা করতে পারেননি। দুই-একটি টিকেট পেলেও দাম অনেক বেশি। তাই তারা বাস টার্মিনালে স্ত্রী-সন্তান নিয়ে অবস্থান করছিলেন।
তারা আরও জানান, গতকাল শুক্রবার পুলিশের উদ্যোগে দুইটি বাসে বিনা ভাড়ায় শতাধিক গার্মেন্টস কর্মীসহ বিভিন্ন যাত্রীকে ঢাকা-গাজীপুর পাঠানো দেখে স্বস্তি ফিরে এবং শনিবারও আরও দুটি বাস দেবে এমন খবর শুনে বাস টার্মিনালে রাত কাটান। বিকেলে তারা ঢাকা যাওয়ার জন্য পুলিশের দেওয়া বাসে সিট পান। সেই সঙ্গে তাদের এক বোতল করে পানির ব্যবস্থা করেন তারা। এজন্য পুলিশকে ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানান তারা।
নাটোরের পুলিশ সুপার মোহাম্মদ আমজাদ হোসাইন বাংলানিউজকে বলেন, শুক্রবার (১৩ জুন) দুপুরে শহরের বড় হরিশপুর কেন্দ্রীয় টার্মিনালে যাত্রীবাহী বাসে ভাড়া নিয়ন্ত্রণ এবং যাত্রী হয়রানি বন্ধে কি ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে, তা দেখতে যান তিনি। এ সময় তিনি দেখতে পান বাসস্ট্যান্ডে কর্মজীবী মানুষরা ঢাকায় ফিরতে বাসের জন্য অপেক্ষা করছেন। কিন্তু বাস না থাকায় তারা বেশ ভোগান্তি পোহাচ্ছেন। তাই মানবিক কারণে জেলা পুলিশের পক্ষ থেকে তাদের জন্য দু’টি বাসের ব্যবস্থা করা হয়। এরমধ্যে জেলা পুলিশের একটি বাস ও নাটোর পুলিশ লাইনস স্কুলের একটি বাস রয়েছে।
তিনি বলেন, প্রথম দিন ১২৫-৩০ জন যাত্রীকে দুই বাসে করে গাজীপুরসহ ঢাকার বিভিন্ন গন্তব্য স্থানে পৌঁছে দেওয়া হয়। আজ বিকেলে ১২০ জন যাত্রীকে আমাদের দুইটি বাসে করে গাজীপুরসহ ঢাকার বিভিন্ন গন্তব্য স্থানে পৌঁছে দেওয়া হবে। যতক্ষণ পর্যন্ত যাত্রীদের ভোগান্তি দূর না হবে জেলা পুলিশের এ উদ্যোগ অব্যাহত থাকবে।
জেএইচ