ঢাকা, শুক্রবার, ৩০ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২, ১৩ জুন ২০২৫, ১৬ জিলহজ ১৪৪৬

সারাদেশ

বরগুনায় ডেঙ্গু পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণহীন, বাড়ছে মৃত্যুর মিছিল

জাহিদুল ইসলাম মেহেদী, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০২:৩৯, জুন ১৩, ২০২৫
বরগুনায় ডেঙ্গু পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণহীন, বাড়ছে মৃত্যুর মিছিল হাসপাতালে রোগীরা

বরগুনার খামারবাড়ি এলাকার এক ব্যবসায়ীর নয় বছরের ছেলে ওমর আল আরাবি ঢাকার একটি বেসরকারি হাসপাতালের আইসিইউতে মৃত্যুর সঙ্গে লড়ছে। ঈদের দিন বরগুনা জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করানোর পর শারীরিক অবস্থার অবনতি হলে প্রথমে তাকে নেওয়া হয় বরিশালে, সেখান থেকে পাঠানো হয় ঢাকায়।

এ ঘটনায় বরগুনায় ডেঙ্গু পরিস্থিতির ভয়াবহতা নতুন করে সামনে এসেছে। বরগুনা কালেক্টরেট স্কুল অ্যান্ড কলেজের তৃতীয় শ্রেণির শিক্ষার্থী ওমরের অবস্থা আশঙ্কাজনক।  

তার বাবা আবুল কালাম আজাদ জানান, প্রথমে জ্বর ভেবে গুরুত্ব দেইনি। এখন বুঝছি, কত ভয়ংকর পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে যাচ্ছি।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সাম্প্রতিক তথ্য অনুযায়ী, দেশের মোট ৫,০১৫ জন ডেঙ্গু রোগীর মধ্যে বরগুনা জেলায় আক্রান্তের সংখ্যা ১,২০৪ জন যা জাতীয় পরিসংখ্যানে এক চতুর্থাংশ। বিশেষ করে বরগুনা পৌরসভা এখন ডেঙ্গুর হটস্পটে পরিণত হয়েছে। শুধু গত ২৪ ঘণ্টায় বরগুনায় ভর্তি হয়েছেন ২০২ জন রোগী। তাদের মধ্যে দুইজন বুধবার মারা গেছেন বরগুনা জেনারেল হাসপাতালে।

এ ঘটনার মাত্র কয়েকদিন আগেই মারা যান ডেঙ্গু আক্রান্ত আজমেরী মোনালিসা জেরিন (২৭), প্রয়াত সংসদ সদস্য জাফরুল হাসান ফরহাদের মেয়ে। তিনি ছিলেন একজন শিক্ষার্থী ও উদ্যোক্তা।

বরগুনা শহরজুড়ে ছড়িয়ে থাকা অগোছালো ড্রেনেজ ব্যবস্থা, আবর্জনায় ভরা খাল ও জলাবদ্ধ এলাকাগুলো যেন মশার স্বর্গরাজ্যে পরিণত হয়েছে। তাছাড়া পুরোনো ও অপর্যাপ্ত ফগিং মেশিন দিয়ে মশা নিধনের চেষ্টা কার্যত ব্যর্থ।  

বরগুনা জেনারেল হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. রেজয়ানুল আলম বলেন, ড্রেনগুলো পরিষ্কার না থাকায় হাসপাতাল চত্বরেই মশার উপদ্রব বেশি। বাসাবাড়িতে মশারি ব্যবহারে অনীহা, ছোট ছোট ডোবা, ফেলে রাখা আবর্জনা সব মিলিয়ে আমরা এক জটিল পরিস্থিতির মুখোমুখি।

টিআইবি বরগুনা শাখার সভাপতি কামাল হোসেন মনে করেন, বৃষ্টির পর শহরের অর্ধেক রাস্তাই পানিতে তলিয়ে যায়। জলাবদ্ধ পানি আর অপরিকল্পিত ড্রেন শহরকে মৃত্যু ফাঁদে পরিণত করেছে।

এ অবস্থার সমালোচনা করেছেন সাধারণ নাগরিকরাও। ওষুধ ব্যবসায়ী মো. সাইফুল ইসলাম বলেন, বাজার এলাকার ড্রেনগুলো পচা পানিতে ভর্তি। দিনে দুপুরেও মশার কামড়ে টিকতে কষ্ট হয়।

চর কলোনির বাসিন্দা অলিউল্লাহ এমরান বলেন, আমরা নিজেরাই নিজের শত্রু। কেউ নিয়ম মানি না। ময়লা-আবর্জনা যেখানে-সেখানে ফেলি, মশা মারার নামে শুধু গন্ধ ছড়ানো হয়।

তবে এ বিষয়ে ভিন্ন মত বরগুনার অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক ও পৌর প্রশাসক অনিমেষ বিশ্বাসের। তার দাবি, পৌরসভা পাঁচটি ও জেলা প্রশাসনের সরবরাহকৃত দুটি ফগার মেশিন দিয়ে প্রতিদিন সকাল থেকে রাত পর্যন্ত স্প্রে করা হচ্ছে। সচেতনতা বাড়াতে মাইকিং, লিফলেট বিতরণসহ বিভিন্ন কার্যক্রম চলমান রয়েছে।

তবে নাগরিক অধিকার ফোরামের সভাপতি হাসানুর রহমান ঝন্টু বলছেন, পরিকল্পনার অভাব, অদক্ষ ব্যবস্থাপনা ও জনসচেতনতার অভাব একত্রে এই পরিস্থিতির জন্য দায়ী। শহর ও গ্রামে যত্রতত্র ঝোপঝাড় ও খোলা পাত্রে পানি জমে থাকা ডেঙ্গু বিস্তারে বড় ভূমিকা রাখছে।

বরগুনা জেলায় ডেঙ্গু পরিস্থিতি এখন আর শুধু একটি স্বাস্থ্য সংকট নয়, এটি এক ভয়াবহ নাগরিক ব্যর্থতার প্রতিচ্ছবি। প্রশাসন বলছে, তারা কাজ করছে কিন্তু বাস্তব বলছে, মানুষ মরছে।

আরএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।