ঢাকা, শুক্রবার, ২৯ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২, ১৩ জুন ২০২৫, ১৬ জিলহজ ১৪৪৬

সারাদেশ

বোয়ালমারীতে ভ্যানচালক হত্যা মামলায় প্রধান আসামি কৃষক দল নেতা

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৭:৫১, জুন ১১, ২০২৫
বোয়ালমারীতে ভ্যানচালক হত্যা মামলায় প্রধান আসামি কৃষক দল নেতা

ফরিদপুরের বোয়ালমারীতে কোরবানির মাংস নেওয়াকে কেন্দ্র করে প্রতিপক্ষের হামলায় হুমায়ূন কবীর (৪৮) নামে এক ভ্যানচালককে হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় থানায় হত্যা মামলা হয়েছে।  

বুধবার (১১ জুন) দুপুরে মামলার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন বোয়ালমারী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মাহমুদুল হাসান।

এর আগে এ ঘটনায় মঙ্গলবার (১০ জুন) রাতে নিহতের স্ত্রী শিউলী বেগম (৪৫) বাদী হয়ে ময়না ইউনিয়ন কৃষক দলের সাধারণ সম্পাদক লিয়াকত হোসেন মাস্টারকে প্রধান আসামি করে ২৫ জনের নাম উল্লেখ করে মামলাটি দায়ের করেন। মামলায় আরও অজ্ঞাতনামা ১০-১৫ জনকে আসামি করা হয়েছে।  

গত ৮ জুন সকালে কথা কাটাকাটির এক পর্যায়ে লিয়াকত হোসেন মাস্টারের নেতৃত্বে ভ্যানচালক হুমায়ুনসহ তার পরিবারের ওপর দেশীয় অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে হামলা করা হয়। পরদিন ৯ জুন সকালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ঢাকার একটি বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় হুমায়ুনের মৃত্যু হয়।  

নিহত হুমায়ুন কবির বানিয়াড়ী গ্রামের মৃত মালেক মোল্লার ছেলে। তিনি তিন মেয়ে ও এক ছেলের জনক। মঙ্গলবার (১০ জুন) বিকেলে মরদেহ ময়নাতদন্ত শেষে নিহতের বাড়ি আনা হয়। পরে বাদ মাগরিব খরসূতি গোরস্তান চত্বরে জানাজা শেষে নিহতের মরদেহ দাফন করা হয়েছে।

মামলা ও এলাকাবাসী সূত্রে জানা যায়, জেলার বোয়ালমারী উপজেলার ময়না ইউনিয়নের বানিয়ারী গ্রামের গ্রাম্য দলাদলি নিয়ে দুটি বিবাদমান পক্ষ রয়েছে। একটিপক্ষের নেতৃত্ব দেন স্থানীয় সাবেক ইউপি সদস্য জামাল হোসেন ও উপজেলা পল্লি উন্নয়ন সমবায় সমিতির (বিআরডিপি) সভাপতি ইউনিয়ন আওয়ামী লীগ নেতা নবীর হোসেন চুন্নু এবং অপরপক্ষের নেতৃত্ব দেন উপজেলার ময়না ইউনিয়ন জাতীয়তাবাদী কৃষক দলের সাধারণ সম্পাদক লিয়াকত হোসেন মাস্টার। গত শনিবার (৭ জুন) ঈদুল আজহার দিন হুমায়ূন কবীর লিয়াকতের দলে থাকা ভাই-ভাতিজাদের নবীর হোসেন চুন্নুর দলে নিয়ে সেখান থেকে সামাজিকভাবে বিলি করা কোরবানির মাংস নেন। এ নিয়ে ঈদের দিন থেকে ওই গ্রামে উত্তেজনাকর পরিস্থিতি তৈরি হয়। কোরবানির মাংসের ভাগ নেওয়ার জেরে গত রোববার (৮ জুন) সকাল সাড়ে ৮টার দিকে বানিয়াড়ী গ্রামের ছাকেনের চায়ের দোকানের সামনে কৃষক দল নেতা লিয়াকত হোসেন মাস্টারসহ তার সমর্থকদের সঙ্গে আওয়ামী লীগ নেতা নবীর হোসেন চুন্নুর সমর্থক হুমায়ুন কবিরসহ তার পরিবারের সদস্যদের কথা কাটাকাটি হয়। এর জের ধরে লিয়াকতরা হুমায়ুন কবিরসহ তার পরিবারের সদস্যদের ওপর হামলা চালায়।  

এ হামলায় মাথায় ধারালো অস্ত্রের আঘাতে গুরুতর আহত হুমায়ূন কবীরকে বোয়ালমারী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের জরুরি বিভাগে নিয়ে গেলে সেখানে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে স্থানান্তর করেন। সেখানে তার অবস্থার অবনতি ঘটলে দ্রুত তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়। রাতেই ঢামেক থেকে একটি বেসরকারি হাসপাতালের আইসিইউতে রাখলে সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় সোমবার (৯ জুন) সকাল ৮টার দিকে হুমায়ূন কবীরের মৃত্যু হয়।  

এ ঘটনায় আরও আহত হন হুমায়ুন কবিরের বড় ভাই মোস্তফা মোল্লা (৫৮), তার মেয়ে বেনি বেগম (২৩) ও এক ভাগিনা। তারা বোয়ালমারী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসা নিয়ে বর্তমান বাড়িতে অবস্থান করছেন। হামলায় নিহত হওয়া হুমায়ুন কবীর, নবীর হোসেন চুন্নুর সমর্থক ছিলেন।

এ ঘটনার দুইদিন পর মঙ্গলবার (১০ জুন) রাতে নিহতের স্ত্রী শিউলী বেগম (৪৫) বাদী হয়ে ময়না ইউনিয়ন কৃষক দলের সাধারণ সম্পাদক লিয়াকত হোসেন মাস্টারকে প্রধান আসামি করে ২৫ জনের নাম উল্লেখ করে মামলাটি দায়ের করেন। মামলায় আরও অজ্ঞাতনামা ১০-১৫ জনকে আসামি করা হয়েছে। তবে এখন কোনও আসামিকে গ্রেপ্তার করতে পারেনি পুলিশ। মামলা নম্বর-১১।  

বুধবার (১১ জুন) দুপুরে মামলার বিষয়টি নিশ্চিত করে বোয়ালমারী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মাহামুদুল হাসান বলেন, নিহতের স্ত্রী বাদী হয়ে লিয়াকত মাস্টারকে প্রধান আসামি করে মামলাটি করা হয়। ঘটনাস্থল এলাকায় পুলিশ মোতায়েন রয়েছে। মামলার আসামিদের গ্রেপ্তারে পুলিশের অভিযান অব্যাহত রয়েছে।

বাংলাদেশ সময়: ১৭৫০ ঘণ্টা, জুন ১১, ২০২৫
এসআরএস

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।